বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতন ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে ফাঁকা পিচ রাস্তা। ইলামবাজারের জঙ্গল যেখানে শুরু, সেখানেই রয়েছে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বনলক্ষ্মী। ১৯৬৩ সালে প্রয়াত নিরঞ্জন সান্যালের হাত ধরে গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা বনলক্ষ্মীর পথ চলা শুরু। সেটাই এখন অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। কারণ, এখানে একই সঙ্গে রয়েছে খাওয়া ও ঘুরে দেখার নানা উপাদান।
বনলক্ষ্মীতে ভোর হয় মোরগের ডাকে। সকাল হতেই কাজে নেমে পড়েন গ্রামের মানুষজন। রান্না থেকে বিপণনের দায়িত্ব তাঁদেরই। বেলা বাড়লেই জমতে থাকে পর্যটকদের ভিড়। শুধু পর্যটক কেন, বোলপুরের সাধারণ মানুষ থেকে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরাও মাঝেমধ্যেই স্বাদ বদলের টানে চলে আসেন এখানে। খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি রয়েছে গ্রামীণ জিনিসপত্র কেনাকাটার সুযোগ। বছরভর লেগে থাকে পর্যটকের ভিড়। রয়েছে ফোনে বুকিংয়ের ব্যবস্থা। তবে, দুর্গাপুজোর সময় চাপ একটু বেশি। কাশফুল ফুটতেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন বনলক্ষ্মীতে।
৪০বিঘা জায়গাজুড়ে রয়েছে বনলক্ষ্মী। এখানে ঢুকলেই স্বাগত জানাবে ৪০০ বছরের প্রাচীন বটগাছ। রাজহাঁসের ডাক, পাখির কলরব। একটু নির্জনে গেলে দিনেও শোনা যাবে ঝিঁঝিঁর ডাক। তাই দিন দিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বনলক্ষ্মী।
পর্যটকরা যেমন এখানে এসে হাওয়া ও স্বাদ বদলের সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনই বনলক্ষ্মী এনে দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। শ্রীচন্দ্রপুর, কামারপাড়া, বনভিলা, মাঝিপাড়ার প্রায় ৫০জন মাস মাইনে ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এখানে কাজ করেন। তাঁরা বাগানের ফল দিয়ে তৈরি করেন জ্যাম, জেলি, আচার, স্কোয়াশ। এছাড়া মধু, বড়ি, হলুদ, জিরেগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, সর্ষের তেল তৈরি হয়। এসবের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত নয়, এমন ধানের চাষ হয় জৈবসার দিয়ে। যার মধ্যে রাঁধুনিপাগল, উত্তরবঙ্গের তুলাইপাঞ্জি, কালোচাল, ঢেঁকিছাঁটা চাল, গোবিন্দভোগও রয়েছে, জানান অন্যতম কর্ণধার মৃদঙ্গ পাল।
মৃদঙ্গবাবুর স্ত্রী দিয়া বিশ্বাস পাল অবশ্য এই সংস্থাকে একক মালিকানাধীন বলতে নারাজ। তিনি বলেন, এখানে মালিক বা কর্তৃত্বের ব্যাপার নেই। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করেন। তাঁর দাবি, বনলক্ষ্মীর তৈরি ঘি রাজ্য সরকার তাদের ব্র্যান্ড ব্যবহার করে বিক্রি করে। এটা আমাদের অত্যন্ত গর্বের। তিনি বলেন, বনলক্ষ্মীর ব্র্যান্ড বিখ্যাত মূলত গ্রামীণ ও ট্র্যাডিশনাল খাবার তৈরির জন্য। লেবুপাতা দিয়ে খাসির মাংস, বিভিন্নরকম মাছের উপাদেয় পদ, মুরগির মাংস, ধোকার ডালনা, শিউলি পাতার বড়া এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। বিদ্যা বালান, অপর্ণা সেনের মতো বহু সেলিব্রিটিরাও বনলক্ষ্মীর খাবারের প্রশংসা করেছেন।
মৃদঙ্গবাবু বলেন, শুধু রান্না নয়, বাটিক, ডোকরা, কাঁথাস্টিচ, বাঁশ ও কাঠের বিভিন্ন হস্তশিল্প, আদিবাসীদের তৈরি পোশাক, স্থানীয়দের তৈরি গামছা কিনতে এখানে পর্যটকরা ভিড় জমান। তাই লালমাটির দেশে এলে বনলক্ষ্মীতেও কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতে চান পর্যটকরা।