নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আগামী ২ নভেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে চাষিদের কাছ থেকে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। তার আগে ধান বিক্রির জন্য প্রায় ১৪ লক্ষ ২৪ হাজার কৃষকের নাম নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য খাদ্যদপ্তর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, গত খরিফ মরশুমে সরকারের কাছে নাম নথিভুক্ত করা কৃষকদের আর নতুন করে নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন পড়বে না। অক্টোবর থেকে নতুন খরিফ মরশুম শুরু হয়ে যায়।  ওই মাস থেকে নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গতবারের থেকে তিন হাজারের বেশি কৃষকের নাম ইতিমধ্যেই নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে। পুজো পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরও বেশি সংখ্যক কৃষক নাম লেখাতে শুরু করবেন বলে খাদ্যদপ্তরের আধিকারিকরা আশা করছেন। গত কয়েকটি খরিফ মরশুম থেকে দেখা যাচ্ছে, কৃষকদের মধ্যে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার আগ্রহ বাড়ছে। গত ২০১৭-১৮ মরশুমে নথিভুক্ত কৃষকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার। পরের মরশুমে তা বেড়ে ১২ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
সরকারের  ধান ক্রয় কেন্দ্রগুলি ছাড়াও অনলাইনে খাদ্যদপ্তরের ওয়েবসাইট ও অন্নদাত্রী অ্যাপের মাধ্যমে নথিভুক্তকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত কৃষকদের নাম তোলার জন্য জমির মালিকানা সংক্রান্ত নথি পেশ করা প্রয়োজন হচ্ছে না। শুধু কৃষকবন্ধু প্রকল্পের পরিচয়পত্র ও ব্যাঙ্কের পাশবই আনলেই চলবে। ধান বিক্রির টাকা এবার সরাসরি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ইতিম঩ধ্যেই যেসব কৃষকের নাম নথিভুক্ত রয়েছে, তাঁরা চাইলে অন্য কোনও মোবাইল নম্বর ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নথিভুক্ত যাতে করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার খরিফ মরশুমে রাজ্যে ধানের রেকর্ড উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। স্বাভাবিকভাবে এবার সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার আগ্রহও বাড়বে। সরকারের দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। নতুন ধান ওঠার পর সরকারি উদ্যোগে জোর কদমে কেনার কাজ না চললে খোলা বাজারে দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভোটের আগে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হোক সেটা সরকার কোনও অবস্থাতেই চাইবে না। নভেম্বর-ডিসেম্বরে নতুন ধান ওঠার পরের কয়েক মাস বেশি বিক্রি হয়।  তাই এই সময়ে  ধান কেনার জন্য সরকার আরও বেশি সক্রিয় হচ্ছে।   রাজ্যে মোট যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার এক-তৃতীয়াংশেরও কম সরকারি উদ্যোগে কেনা হয়। কিন্তু  খোলাবাজারেও যাতে চাষিরা ভালো দাম পান তার জন্য সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার বড় প্রভাব থাকে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বেশি পরিমাণে ধান সরকার কিনলে তা খোলা বাজারের দামকেও ‘তেজি’ রাখে। এতে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করেও চাষিরা লাভবান হন। এবার কুইন্টল প্রতি সাধারণ ধানের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য (এমএসপি) ধার্য হয়েছে ১৮৬৮ টাকা। সরকারি কেন্দ্রীয় ক্রয় কেন্দ্রে (সিপিসি) অতিরিক্ত ২০ টাকা করে বোনাস দেওয়া হবে।