বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
গত বছর মেডিক্যাল প্রবেশিকা নিট দিয়েছিলেন দুই বন্ধু সায়ন্তন এবং সৌমিত্র (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু সফল হতে পারেননি। সৌমিত্রর সিট পড়েছিল হাওড়ার ধুলাগড়ে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল প্যামফ্লেট হাতে ধরে থাকা এক এজেন্টের সঙ্গে। সেই তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিল, পরীক্ষা যেমনই হোক, কুছ পরোয়া নেহি। চীনের ডাক্তারির ডিগ্রি থাকবে তাঁর ঝুলিতে। নিটে সফল হতে না পেরে বন্ধু সায়ন্তনকে নিয়ে সেই এজেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সৌমিত্র। তার সঙ্গে দু’জনে গত বছর একবার চীনে গিয়েছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বললেও সেই এজেন্ট তা পারেনি। এক মাস বাদে ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ায় দেশে ফিরে আসেন তাঁরা। তারপর জানুয়ারিতে আবার সেখানে যান। এরপরেই শুরু হয় একটা ভয়ঙ্কর অধ্যায়।
সায়ন্তন এবং সৌমিত্রকে সঙ্গে নিয়ে ডালিয়ান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চক্কর কাটে সেই এজেন্ট। বেশ কিছু জায়গায় তাঁদের অ্যাডমিশনের চিঠিও দেখায়। বলে, ক্লাস শুরু শুধু সময়ের অপেক্ষা। দিন পনেরো চলে এই স্বপ্নের উড়ান... তারপরই দেশে ফিরে আসে এজেন্ট। আর দুই বন্ধু ডালিয়ানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের অ্যাডমিশনই হয়নি। ভেবেছিলেন ফেরার কথা। কিন্তু ততদিনে দেশের দরজা করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়তে থাকে হোটেলের বিল। এক সময় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাঁদের বের করে দেন হোটেলওয়ালারা। সেই সময় অবশ্য এজেন্ট টাকা পাঠিয়ে তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করেছিল। দীর্ঘদিন সেই আস্তানা থেকে বেরতে পারেননি তাঁরা।
সায়ন্তনের ওষুধের দোকান। দাদু চেয়েছিলেন, নাতি ডাক্তার হবে। কষ্টে-সৃষ্টে জোগাড় হয়েছিল ১২ লাখ টাকা। হোটেলের বিল মেটাতে মেটাতেই আর কিছু বাকি নেই তার। কখনও সখনও এজেন্ট টাকা পাঠায়। তাও সামান্য। সৌমিত্রর বাবা জমিজমা বিক্রি করেছেন। টাকা বাঁচাতে গুয়াংঝৌতে সস্তার হোটেলে এসে উঠেছেন দু’জনে। কোনওমতে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছেন। কাতর আবেদন করেছেন দেশে ফেরার। কিন্তু বলা হয়েছে, বিমান চালু হলে তাঁদের নিজের খরচেই দেশে ফিরতে হবে।
কালিকাপুরের সেই এজেন্ট অবশ্য ফোনে জানিয়েছেন, ‘করোনার জন্যই একটু সমস্যা হয়েছে। ওদের সাতদিনের মধ্যে ভর্তি করিয়ে দেব। আসলে ওদের ডিরেক্ট দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছি। এটা হয়। এতে কোনও দু’নম্বরি নেই। ওঁদের এক বছরের টাকা বাঁচিয়ে দিলাম। তাছাড়া ওরা যাই বলুক, আমি কিন্তু নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছি। আমারও তো খরচ হচ্ছে! আসলে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি বলে কেসটা একটু জটিল।’
এজেন্ট এ কথা বলে খালাস। কিন্তু যাঁরা ভিনদেশে ডাক্তারি পড়ার জন্য গিয়েছেন? না আছে টাকা, না নিরাপত্তা। সীমান্ত সংঘাতের জেরে বাড়ছে ভারত বিদ্বেষ। আতান্তরে পড়া এই দুই বাঙালির ভবিষ্যৎ কী? ‘বন্দে ভারত’ও কি চীন থেকে এতটাই দূরে...!