নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজনীতিতে কুকথা বলার জন্য এরাজ্যের কোনও দলই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। মাঠে-ময়দানে হামেশাই একে অপরকে বিঁধতে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে সংবাদের শিরোনামে চলে আসছেন রাজনৈতিক দলগুলির নেতানেত্রীরা। কিন্তু এবার খোদ বিধানসভার অন্দরে শাসকদল তৃণমূলের মহিলা বিধায়ক নার্গিস বেগম ‘তোমার ধর্ষণ হবে’ বলে চরম বিতর্ক তৈরি করলেন। তাঁর সেই কটূক্তির নিশানায় ছিলেন সিপিএমের মহিলা বিধায়ক জাহানারা খান। এহেন অপমানে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহানারা। বিহিত চেয়ে বিরোধী বাম-কংগ্রেসের তরফে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করা হয়। তবে নার্গিসের কটূক্তিতে শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরেই ছিছিক্কার পড়ে যায়। সরাসরি কোনও শাস্তির কবলে না পড়লেও দলের চাপে সদনের ভিতরেই পরে উপস্থিত সদস্যদের সামনে করজোড়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান নার্গিস।
এদিন বাজেট বিতর্কে অংশ নিতে নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়ান নার্গিস। সে সময় জাহানারা তাঁর আসনে বসেই একটি টিপ্পনী কাটেন। তা শুনে মন্ত্রী অসীমা পাত্র নার্গিসকে লক্ষ্য করে জাহানারাকে যোগ্য জবাব দিতে বলেন। নার্গিস তখন মাইকেই বলেন, আগে বাজেট নিয়ে বলি। তারপর গালগালি দেব। তা শুনে জাহানারা বলেন, আপনাদের যা সংস্কৃতি তাতে তাছাড়া আর কীই বা করবেন। একথা শোনার পর জাহানারাকে লক্ষ্য করে নার্গিস বলে ওঠেন, বলছি তো, আগে বাজেটটা বলি। তারপর তোমার ধর্ষণ হবে। একথা বলার পরই সদন জুড়ে বিধায়কদের মধ্যে প্রবল গুঞ্জন শুরু হয়। শাসক বা বিরোধী, উভয় শিবিরের তরফে বিধানসভার ভিতরে তখন তেমন বিধায়ক সংখ্যা না থাকায় প্রবল শোরগোল শুরু হয়নি। তবে ঘরে বসে একথা শুনেই সদনে ঢোকেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেস সচেতক মনোজ চক্রবর্তীরা। কিন্তু ততক্ষণে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষরা নিজেদের আসন থেকেই নার্গিসকে এই ধরনের কুকথা বলার জন্য নিন্দা করতে থাকেন। নার্গিসের বক্তব্য শেষ হতেই ফিরহাদ সদনে উপস্থিত ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ধরনের অশ্লীল মন্তব্যের নিন্দা করে তা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান। সুকুমারবাবু তখন শোরগোলের মধ্যেই কিছু একটা ঘোষণা করেন যা ঠিকভাবে শোনা যায়নি।
এসবের মধ্যেই অধিবেশনের প্রথমার্ধের বিরতি হয়ে যায়। বিরতিতে লবিতে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যেই ফিরহাদ, রাজীব, নির্মলরা নার্গিসকে গলা চড়িয়ে তিরস্কার করতে থাকেন। ফিরহাদ নিজেও এদিন জাহানারার কাছে নার্গিসের হয়ে মাফ চান। তার আগেই সুজনবাবু এবং দলের অন্য দুই মহিলা বিধায়কের সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে অধ্যক্ষের ঘরে ঢোকেন জাহানারা। ঘটনার সময় সদনে না থাকলেও বিএ কমিটির বৈঠক উপলক্ষে সেখানে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সহ সরকারপক্ষের তাবড় নেতারা হাজির ছিলেন। সুজন-মনোজরা জাহানারার এই অপমানের ব্যাপারে অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপ চান। এদিন সকালেই অধ্যক্ষ সদনের ভিতরে আলটপকা বা কু-মন্তব্য করার ব্যাপারে সতর্ক করে বিধায়কদের মার্জিত আচরণ করার আবেদন জানিয়েছিলেন। সে কথা স্মরণ করিয়েই জাহানারা বিহিত চান এই অপমানের। বিরোধীরা ঘর থেকে বেরনোর পর সেখানে নার্গিসকে ডেকে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর থমথমে মুখে বেরিয়ে আসেন নার্গিস। জাহানারা গোটা ঘটনা জানিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেন ইতিমধ্যে।