বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
কোনও রোগের ক্ষেত্রে শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় ওষুধটিকে পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হয় সাইক্লোডেক্সট্রিন নামে একটি রাসায়নিক। যে ধরনের কোষে গিয়ে ওষুধটি কাজ করার কথা, সেখানেই তাকে পৌঁছে দেয় সাইক্লোডেক্সট্রিন। বিভিন্ন ধরনের ওষুধেই এর ‘কোটিং’ থাকে। সেই সাইক্লোডেক্সট্রিনের এই গুণটিকে কাজে লাগিয়েই যে শরীরকে ওষুধমুক্তও করা যায়, তার তাত্ত্বিক প্রমাণ দিয়েছেন যাদবপুরের অধ্যাপক নীতিন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর সহযোগীরা। তিনি বলেন, পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জলে সহজেই দ্রবীভূত হওয়া সাইক্লোডেক্সট্রিন ওষুধের অধঃক্ষেপ মূত্র বা ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।
গবেষণার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ প্রাণী চাইনিজ হ্যামস্টার-এর গর্ভাশয় (সিএইচও) কোষে বিটা-সাইক্লোডেক্সট্রিনের এই গুণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নীতিনবাবু জানান, বিভিন্ন ধরনের লিপিড নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিল। এই লিপিড হল, মানুষ বা প্রাণীর কোষপর্দা এবং প্রাচীরের অন্যতম প্রধান উপাদান। আর ওষুধের ‘রেপ্লিকা’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ। দেখা গিয়েছিল, বিটা-সাইক্লোডেক্সট্রিন দিলে রঞ্জকগুলি লিপিড ছেড়ে বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। পরে গবেষণা হয় সিএইচও দিয়ে। তাতেও একই বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। কঠিন সাইক্লোডেক্সট্রিন দিলে রঞ্জকগুলি জীবন্ত কোষ ছেড়ে মিশে যাচ্ছে এই রাসায়নিকের সঙ্গে।
নীতিনবাবু জানান, সস্তায় মেলে বলে বিটা-সাইক্লোডেক্সট্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। আলফা বা গামার ক্ষমতা আলাদা। তবে, সেগুলি মহার্ঘ্য। তাই সেগুলি এই গবেষণায় ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। আবার বিটা-সাইক্লোডেক্সট্রিনের সঙ্গে অন্যান্য রাসায়নিক মিশিয়ে তার ক্ষমতা কমানো- বাড়ানোও যায়। কোনও ওষুধ তার রাসায়নিক শৃঙ্খলের আয়তন অনুযায়ী আলফা, বিটা বা গামার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির অ্যানালিস্ট, এলসভিয়ারের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফার্মাসিউটিকসের মতো বিশ্বখ্যাত পত্রিকাগুলিতে এই গবেষণার বিভিন্ন অংশ প্রকাশিত হয়েছে। তবে, এখনও এর পেটেন্ট নেননি নীতিনবাবুরা। নিজে থেকে এর বাণিজ্যিকীকরণেও উৎসাহী নন। তাঁর বক্তব্য, এসব করতে গিয়ে নতুন কোনও মৌলিক গবেষণার সময় নষ্ট হবে। কেউ যদি এই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে কোনও ওষুধ বাজারে আনতে চায়, তাহলেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তাঁর মতে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে রঞ্জকের পরিবর্তে আসল ওষুধ দিয়ে গবেষণাটি করতে হবে। তবেই ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে। এসব অবশ্য অনেকটাই সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ। তাই মূল দিকটি উন্মোচন করে এটা নিয়ে আর এগনো হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তিন সপ্তাহের একটি কোর্স করলেই শরীর ওষুধমুক্ত হয়ে যাবে। তবে, এর জন্য ডোজের পরিমাণ ঠিক করতে হবে। সাইক্লোডেক্সট্রিন শরীরে জমা হতে পারে না। তাই এ থেকে কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও প্রায় নেই বললেই চলে।
কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজির বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অঞ্জন অধিকারী বলেন, যে কোনও ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। দীর্ঘদিন ধরে চললে তো ক্ষতির সম্ভাবনা আরও বেশি। অনেক সময় তা আর কাজও করে না। এ ধরনের গবেষণাই সম্ভাবনার জন্ম দেয়। তা থেকে নতুন ওষুধ তৈরি হতে পারে। তবে, এর প্রায়োগিক দিকটি খতিয়ে দেখা দরকার।