স্বদেশের বা বিদেশের নামী প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালাভের সুযোগ পেতে পারেন। সব কাজে কমবেশি সাফল্যের যোগ। আয় ... বিশদ
শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে করোনার ভয়ঙ্কর দাপট দেখছে রাজ্যবাসী। সংক্রমণের হাত থেকে কচিকাঁচাদের রক্ষা করতে গত বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। ছাত্রছাত্রীরা কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়ছে কি না, তা নিয়ে শিক্ষামহলে বিতর্কের অন্ত নেই। কিন্তু পরপর দু’বছর উত্তর ২৪ পরগনার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির পরিসংখ্যান শিক্ষাবিদদেরও অবাক করেছে। কারণ, ২০২০ সালে উত্তর ২৪ পরগনায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ২৮০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল। ২০২১ সালে ভর্তি হয়েছে ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪১৭ জন। অর্থাৎ এক বছরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার ১৩৭ জন। এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র প্রাক-প্রাথমিকে এমনটা নয়। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে উল্লেখযোগ্যভাবে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, গত বছরের তুলনায় এবছর প্রাক-প্রাথমিকে ২ হাজার ২৪৪ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১ হাজার ৫৩৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩ হাজার ৮৬৯ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ হাজার ৮৬৭ জন ও চতুর্থ শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬২০ জন ছাত্রছাত্রী বেড়েছে।
শিক্ষাদপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, গত বছর থেকে স্কুল বন্ধ থাকলেও মিডডে মিলের খাবার নিয়মিত প্রতিটি স্কুলে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মাসে চাল, আলু, সয়াবিন, মুসুর ডাল, সাবান, চিনি ও ছোলা ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষকরা যেদিন স্কুলে যাচ্ছেন, সেদিন পড়ুয়াদের খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি তাদের পঠন-পাঠন ও স্বাস্থ্যেরও খোঁজ নিচ্ছেন। সেকারণে, স্কুলছুটের প্রবণতা অনেকটাই কমেছে ও সরকারি স্কুলের প্রতি সাধারণ মানুষের ভরসা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, দীর্ঘ লকডাউনে বেসরকারি স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের একাংশের মোহভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা ঝুঁকছেন সরকারি শিক্ষার দিকে। আধিকারিকদের দাবি, এক বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি স্কুলের মতো বেসরকারি স্কুলেও সেভাবে পঠন-পাঠন হচ্ছে না। অথচ, এই সঙ্কটের সময় ছাত্রছাত্রীদের থেকে প্রতি মাসেই ফি নিচ্ছে তারা। শিক্ষকদেরও সঠিক বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া অনলাইন ক্লাস চলাকালীন শিক্ষকরা কীভাবে পড়াচ্ছেন, অভিভাবকরা তা দেখতে পাচ্ছেন। সেই অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই সুখকর নয়। এই সব কারণেই সরকারি স্কুলে ভর্তির প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার বলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নের জন্য সঠিক লক্ষ্যে এগচ্ছে। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্কুল ভবন, আধুনিক সিলেবাস ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা দেখে সরকারি স্কুল সম্পর্কে মানুষের আগের ধারণা বদলেছে। পরিকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি কন্যাশ্রী, বিবেকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের মতো সরকারের নানা পদক্ষেপ সরকারি ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে মানুষের।