হরিহর ঘোষাল, বারাকপুর, বিএনএ: একদা লালদুর্গ বারাকপুরে সিপিএমের ব্যাঙ্কে থাবা বসিয়ে লোকসভা ভোটে ছক্কা হাঁকিয়েছে বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটে একাধিক কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিপিএম এবার একেবারে ধরাশায়ী হয়েছে। এই লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে দু’টি বাদ দিলে সব কটিতেই গেরুয়া শিবিরের জয়জয়কার। যদিও একাধিক বিধানসভায় পদ্মফুলের সঙ্গে ঘাসফুল সমান টক্কর দিয়েছে। কিন্তু, বামপন্থীদের একটি বড় অংশের ভোট গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতে যাওয়ায় তৃণমূল একাধিক বিধানসভায় ধরাশায়ী হয়েছে। আর ‘বাহুবলী’ অর্জুন সিংয়ের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে দু’বারের জয়ী তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে বিজেপি প্রথম এই লোকসভা নিজেদের দখলে নিল।
বিধানসভা অনুযায়ী ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। নৈহাটি বিধানসভা একসময় সিপিএমের খাসতালুক ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরও এই বিধানসভায় সিপিএমের ভালো ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপির খুব বেশি সংগঠন নেই। বিশাল যে ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে এমন নয়। এই বিধানসভায় বিজেপি ৬৫ হাজার ৬৮০ ভোট পেয়েছে। সেখানে সিপিএম পেয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৩৬১টি। আর তৃণমূল পেয়েছে ৬৪ হাজার ৩৭৫ ভোট। এই বিধানসভায় ১২২৬ ভোটে বিজেপি এবার লিড পেয়েছে। অথচ দুবছর আগে এই বিধানসভার বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। যে সব বিধানসভায় সিপিএম ২৫ হাজারের কাছাকাছি নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পেরেছে, সেখানেই তৃণমূল লিড পেয়েছে।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। নোয়াপাড়া বিধানসভায় বিজেপি পেয়েছে ৭৮ হাজার ৪৩১ ভোট, তৃণমূল ৭৮ হাজার ৯৫৭ ভোট পেয়েছে। আর সিপিএম পেয়েছে ২৪ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়েছে। খুব সামান্য হলেও এই বিধানসভায় তৃণমূল ৫২৬ ভোটে লিড পেয়েছে। সাধারণত আমডাঙায় সিপিএমের সঙ্গে বরাবর তৃণমূলের লড়াই হয়। বিজেপি এখানে কোনও ফ্যাক্টর নয়। অথচ সেই আমডাঙায় এবার বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের মূল লড়াই হয়েছে। বিজেপি ৬২ হাজার ৮৭ ভোট পেয়েছে। আর তৃণমূল ৯৮ হাজার ৬৫৩ ভোট পেয়েছে। সিপিএম ভোট পেয়েছে ২৫ হাজার ৩৫২। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রায় ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোটে লিড পেয়েছে। আর যেসব বিধানসভায় সিপিএমের ভোট ২০ হাজারের নীচে নেমে এসেছে সেখানেই বিজেপি বাজিমাত করেছে। বারাকপুরে সিপিএম ১৬ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়েছে। সেখানে বিজেপি ৬৪ হাজার ৪৬ এবং তৃণমূল ৬০ হাজার ৫২৭ ভোট পেয়েছে। এই কেন্দ্রে বিজেপি ৩ হাজার ৫১৯ ভোটে লিড পেয়েছে। বারাকপুর ছাড়াও বীজপুর, ভাটপাড়া, জগদ্দল সর্বত্র সিপিএমের ভোট ২০ হাজারের নীচে রয়েছে। সেখানে বিজেপি ভালো লিড পেয়েছে।
সিপিএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, সাধারণ মানুষ তো কারও নিজস্ব ভোটার নয়। সিপিএমকে ভোট দিয়ে তৃণমূলকে মোকাবিলা করা যাবে না মনে করেই বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। শুধু বারাকপুর নয়, গোটা রাজ্যেই একই চিত্র। কেন এমন হল তা পর্যালোচনা করা হবে। আর বারাকপুরে ধরাশায়ী হওয়া প্রসঙ্গে নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, হিন্দুত্ববাদের উপর ভোট হয়েছে। আর বামপন্থীদের একটি বড় অংশের ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। কেন এমন হল তা বিশ্লেষণ করা হবে।