নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শহরের ভেজাল খাদ্য রোধে এবং খাবারের মানোন্নয়নে গত কয়েক মাস ধরেই একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু তারপরেও শহরের ১০টি এলাকার কিছু কিছু অংশের ফুটপাতের খাবারের উপরে বিশেষ নজর দেওয়ার বিষয় উঠে এল সমীক্ষায়। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার খাজ্য ভেজাল প্রতিরোধকরণ বিভাগ এবং ফাউন্ডেশন ফর কমিউনিটি সাপোর্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামক একটি সংস্থা যৌথভাবে শহরের ফুটপাতের খাবার নিয়ে সমীক্ষা চালায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেই সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধকরণ বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, কলকাতার ১০টি এলাকা, যথা জাদুঘর, নিউ মার্কেট, লিন্ডসে স্ট্রিট, হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজার, কালীঘাট মেট্রো থেকে হাজরা, গড়িয়াহাট থেকে গোলপার্ক, যাদবপুর, মহাকরণ চত্বর, তালতলা এবং চিৎপুর মসজিদ এলাকায় ফুটপাতের খাবার নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। মোট ১ হাজার ৭৬৭ জন খাদ্য বিক্রেতার উপরে সমীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, জাদুঘরের লাউডন স্ট্রিট, নিউ মার্কেটের পূর্ব এসপ্ল্যানেড চত্বরে, লিন্ডসে স্ট্রিটের মির্জা গালিব স্ট্রিট, হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজারের মধ্যে এ পি সি রোড, কালীঘাট মেট্রো থেকে হাজরা মোড়ের মধ্যে শিশুমঙ্গল হাসপাতালের কাছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে, গড়িয়াহাট থেকে গোলপার্কের মধ্যে কাঁকুলিয়া রোডে, যাদবপুরের বাঘাযতীন স্টেশন রোডে, মহাকরণ চত্বরের আওয়াত থাকা ইডেন গার্ডেন্স, বাবুঘাট, রাধাবাজার স্ট্রিট এবং ফেয়ারলি প্লেসে, তালতলায় রিপন স্ট্রিটে, চিৎপুর মসজিদ এলাকার ইডেন হাসপাতাল রোড, সাগর দত্ত লেন, মহাত্মা গান্ধী রোডের ফুটপাতের খাবারের উপর বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। অতীনবাবু বলেন, রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই আমি আমার বিভাগের কর্তা-আধিকারিকদের ওই এলাকাগুলির উপরে নজর দিতে বলেছি। কোনওরকম ফাঁকফোকর থাকবে না। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যৌথ সমীক্ষার কাজে সাহায্য করেছে হু, ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড, কে পি সি মেডিক্যাল কলেজ, রাজ্য সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬টি বরোতেই খাজ্য ভেজাল প্রতিরোধকরণ বিভাগের টিম তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিত্যদিন নজরদারি চালায়। তবে সমীক্ষা করার কাজে যেহেতু পুর প্রশাসনও ছিল, তাই ওই এলাকাগুলিকে বিশেষ নজরে রাখা হবে এবার থেকে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, খাদ্য বিক্রেতাদের তিনটি ক্যাটিগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ১ নম্বর ক্যাটিগরিতে রাখা হয়েছে ১৩১ জনকে। যাঁরা ছোট ছোট শিল্পের মাধ্যমে খাবার তৈরি করেন। ২ নম্বর ক্যাটিগরিতে রাখা হয়েছে ২ হাজার ১৯৩ জনকে। এঁরা বাড়িতে খাবার তৈরি করে ফুটপাতে বিক্রি করেন। ৩ নম্বর ক্যাটিগরিতে আছেন ১ হাজার ৩৪১ জন। যাঁরা ফুটপাতেই খাবার তৈরি করে বিক্রি করেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, অসাধারণ ভালো বলা হয়েছে ৩৭ জন বিক্রেতাকে। খুব ভালো বলা হয়েছে ৩২৬ জনকে। ভালো বলা হয়েছে ১ হাজার ৮২ জনকে এবং ঠিকঠাক বলা হয়েছে ৩১৯ জনকে। অসাধারণ ভালো খাবার তৈরির তালিকায় রয়েছে হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজার এবং কালীঘাট থেকে হাজরা মোড় অঞ্চল। খুব ভালো খাবার তৈরির তালিকায় রয়েছে কালীঘাট মেট্রো স্টেশন থেকে হাজরা মোড় এবং যাদবপুর এলাকা। পরিষ্কার খাবার তৈরির তালিকায় রয়েছে চিৎপুর মসজিদ, নিউ মার্কেট এবং গড়িয়াহাট এলাকা। অতীনবাবু বলেন, খাবার ভাগ করা হয়েছিল তিনভাগে— মিল, স্ন্যাক্স এবং পানীয় জাতীয়। এই তিন ধরনের খাবারের উপরেই সমীক্ষা চালানো হয়।