প্রীতেশ বসু, কলকাতা: ভোট বড় বালাই। আর তাও যদি বাংলার ভোট হয়। ১০০ দিনের কাজ ও আবাসের প্রাপ্য আটকে রাখার কৌশল যে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির ভোটব্যাঙ্কে ধস নামিয়েছে, তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে গেরুয়া শিবির। আর তাই শরিকদের আঁকড়ে ক্ষমতায় ফেরার পরই নয়া রাজনীতি শুরু হয়ে গেল বাংলাকে ঘিরে। বাংলার জন্য কেন্দ্রেরই অনুমোদিত ১১ লক্ষ আবাস প্রকল্পের টাকার দেখা নেই। তার মধ্যেই নতুন প্রায় চার লক্ষ আবাসের টোপ! কেন্দ্র বলছে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বাসস্থানের অনুমোদন। আর তৃণমূলের একাংশ একে ‘ফরমান’ বলতেও দ্বিধা করছে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, নতুন বরাতের অর্থ দূরঅস্ত, বছরের পর বছর আটকে রাখা ১১ লক্ষ আবাসের টাকা মিলবে কবে? সব মিলিয়ে এখন প্রায় ১৫ লক্ষের টার্গেট। কিন্তু তার আর্থিক অনুমোদন কবে মিলবে, তেমন কোনও দিশাই দেওয়া হয়নি রাজ্যকে। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত দপ্তরকে এই সংক্রান্ত একটি চিঠিও পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, আগের ১১ লক্ষের সঙ্গে আরও ৩ লক্ষ ৭০ হাজার আবাসের অনুমোদন দেওয়া হল। ফলে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য বাংলার মোট অনুমোদিত আবাসের সংখ্যা হল ১৪ লক্ষ ৭০ হাজার। ক্ষুব্ধ প্রশাসনিক মহলের দাবি, ১১ লক্ষের নিয়তিই হতে চলেছে এই ৩ লক্ষ ৭০ হাজারের। তাঁদের মতে, কেন্দ্র ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা না ছাড়লে রাজ্যের কোষাগার থেকে টাকা দিয়েই গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি হবে। সেই ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বদলে রাজ্য সম্পূর্ণ টাকা খরচ করে আবাস প্রকল্পের বাড়ি তৈরি করে দিলে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে আরও বিপাকে পড়বে গেরুয়া শিবির। তাই এই নয়া অনুমোদনের গাজর ঝোলানো হল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধারের লক্ষ্যেই নামমাত্র অনুমোদন দেখিয়ে প্রাপ্য টাকা ছেড়ে দেওয়ার গাজর ঝোলাচ্ছে কেন্দ্র। এটা বাংলার মানুষের জন্য আরও অপমানজনক’।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্যজুড়ে যাচাই প্রক্রিয়া চালিয়ে ৩৩ লক্ষের পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে থেকে সেই সময় ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবার নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে একেবারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরের ২২ লক্ষের নাম বাছাই হবে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন করে অনুমোদিত ৩ লক্ষ ৭০ হাজার উপভোক্তাও।
তবে নতুন করে অনুমোদন দিলেও, বাংলার জন্য এই পোর্টাল এখনও বন্ধ। এই প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের এক কর্তার প্রশ্ন, ‘এই অনুমোদনের মানে কী?’ জানা গিয়েছে, আগামী মাসেই নয়াদিল্লিতে প্রতিটি রাজ্যকে নিয়ে বসছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠক। সেখানে বাংলার আবাসের প্রাপ্য টাকা নিয়ে কেন্দ্রকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হবে বলেই সূত্রের খবর।