রঞ্জন পাল, কাঁথি: কাঁথি মহকুমা এলাকায় সূর্যমুখী চাষে চাষিদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ছে। মহকুমায় ১৫০ একরের কিছু বেশি জায়গা জুড়ে সূর্যমুখী চাষ হয়। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার কাঁথি-৩, খেজুরি-১ ও ২ ব্লক, রামনগর-১ ও ২ ব্লকে বেশি সূর্যমুখী চাষ হয়। এছাড়া কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লক ও কাঁথি-১ ব্লকেও কিছু কিছু জায়গায় সূর্যমুখী চাষ হয়। কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, কর্ণাটক থেকে হাইব্রিড বীজ আসে। চাষিরা যেমন খোলা বাজার থেকে বীজ কেনেন, তেমনই কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকেও তাঁদের বীজ দেওয়া হয়। বীজ বপণের পর কৃষি দপ্তরের পরামর্শ মেনে জল, সার, ওষুধ দিতে হয়। মার্চ মাসের শেষের দিকে ফুল আসে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ সূর্যমুখী গাছ কাটার সময়। এই সময় রাস্তার পাশে হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুলের মনোরম শোভা সকলের মন কেড়ে নেয়। তবে কাঁথি তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সূর্যমুখী চাষ হয় না। চাষিরা নিজস্ব জায়গায় নিজেদের মতো করেই চাষ করেন। এলাকায় সূর্যমুখী থেকে উৎপাদিত বীজ পেষাই করে তেল করার জন্য কোনও মিল নেই। সেই সরষের তেলের মিলেই সূর্যমুখী বীজ পেশাই করা হয়। চাষিদের দাবি, সূর্যমুখী বীজ পেশাইয়ের জন্য আলাদাভাবে মিল তৈরি করা হলে খুব ভালো হয়। মহকুমা সহ কৃষি-অধিকর্তা (প্রশাসন) অভিজিৎ মণ্ডল বলেন, বিগত কয়েক বছরে চাষের এলাকা না বাড়লেও মহকুমা এলাকায় চাষিদের মধ্যে তৈলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী চাষ নিয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে। এমনিতেই সূর্যমুখী উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা। এবিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাঁদের সূর্যমুখী চাষ সম্পর্কে উৎসাহ দেওয়া হয়। সূর্যমুখী ঠিকঠাক চাষ করলে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পাবেন। গাছ উঠে যাওয়ার পর ফের সেখানে অন্যান্য শাক-সবজি চাষ হয়। তবে সূর্যমুখী চাষ যদি বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে হতো, তাহলে আলাদা করে মিল তৈরির প্রশ্ন উঠত। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সহ বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই চাষ হয়। আর মিল তৈরির বিষয়ে কৃষি দপ্তরের কোনও ভূমিকা নেই।
কৃষি দপ্তর চাষিদের নানা পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করার কাজই মূলত করে থাকে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চাষিরা অতি উন্নতশীল এমএফএসএইচ ১৭, কেবিএসএইচ ১, পিএসি ৩৬, পিএসি ৩৬১ এবং এলএসএফএইচ ১৭১ প্রভৃতি প্রজাতির সূর্যমুখীর বীজে এ বছর চাষ করতে পারেন। ৯০-১০০ দিনে ফলন পাবেন।
প্রচুর রোদ সহ্যকারী এই সব বীজে হাল্কা সেচ লাগবে। তাও চারা রোপণের ২০-২৫ দিনের মাথায়। সেচসেবিত এলাকায় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৫-২০ কুইন্টাল। কেজিতে তেল পাবেন ৪০ শতাংশ। দাম মিলবে ৬০-৭০ টাকা লিটার। সূর্যমুখী চাষে সবচেয়ে বড় সমস্যা টিয়াপাখির আক্রমণ। টিয়ার দল সূর্যমুখীর খেতে ছড়িয়ে পড়ছে।