অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি। প্রিয়জনের বিপদগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা। সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
ছত্তিশগড়ের নায়ায়ণগড় এলাকায় এক আইটিবিপি জওয়ান গুলি করে পাঁচজন সহকর্মীকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয়। ওই পাঁচ সহকর্মীর মধ্যে রয়েছেন আড়ষার খুকড়ামুড়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বরূপ মাহাত। তবে বুধবার দুপুরেও সরকারিভাবে বিশ্বরূপবাবুর বাড়িতে কার্যত কোনও খবর ছিল না। আড়ষা থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার এদিন মৃত জওয়ানের বাবার ফোন নম্বর বাড়িতে এসে নিয়ে গেলেও ঘটনার বিষয়ে কিছু জানাননি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না জানায় এদিন দুপুরে ওই জওয়ানের বাড়ির পরিবেশ অন্যান্য দিনের মতোই ছিল। বাড়ি থেকে কোনও গানের আওয়াজও ভেসে আসছিল দূর থেকেই। আচমকা বাড়িতে একঝাঁক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি পৌঁছতেই কার্যত হতবাক হয়ে পড়েন মৃত জওয়ানের পরিবারের সদস্যরা। বিশ্বরূপের মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।
মৃতের দাদা আশিস মাহাত বলেন, ২০১৪সালে ভাই চাকরিতে যোগ দেয়। প্রথমে রাজস্থানে পোস্টিং হয়। তারপর প্রায় একবছর ধরে ছত্তিশগড়ের নারায়ণগড়ে পোস্টিংয়ে ছিল। দুর্ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। একজন সিভিক ভলান্টিয়ার বাড়িতে এসে ফোন নম্বর নেওয়ার পর থেকেই খারাপ কিছুর আশঙ্কায় মনটা কু গাইছিল। কিন্তু, এত বড় বিপর্যয় ঘটে যাবে ভাবতেও পারিনি। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি আরও বলেন, মাওবাদী সন্ত্রাস, নাকি অন্য কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে শুনলাম, জওয়ানের গুলিতে ভাইয়ের নাকি মৃত্যু হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করছি।
মৃতের বাবা ভীমচন্দ্র মাহাত বলেন, মঙ্গলবার রাতে ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। আমার সঙ্গে ছাড়াও ওর মায়ের সঙ্গেও কথা হয়। ওইদিন রাতে ফোন করে আমার ও পরিবারের অন্যান্যদের খোঁজ নিচ্ছিল বিশ্বরূপ। আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ভালো আছি কি না? আমিও ছেলেটার খোঁজ নিলাম। তারপর ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলল। এদিন আর সকাল থেকে কোনও কথা হয়নি। এদিন সিভিক ভলান্টিয়ার এসে মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়। তারপর আমাকে ফোনটি নিজের কাছে রাখতে বলে। আর কিছুই জানায়নি।
মৃত জওয়ানের মা ভাগ্য মাহাত অন্যান্য দিনের মতো এদিনও নিজেদের জমিতে ধান কাটার কাজে গিয়েছিলেন। বাড়িতে গ্রামবাসীদের ভিড় দেখে গ্রামের কয়েকজন তাঁকে জমি থেকে নিয়ে আসেন। বাড়ি ঢুকেই মর্মান্তিক ঘটনার আভাস পেয়েই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাগ্যদেবী বারবার বলছিলেন, ছেলে বলেছিল, বাড়ির কার কী হয়েছে আমাকে জানাও। কার বিপদ হয়েছে আমাকে কেন জানানো হচ্ছে না। আমাকে কেউ কিছু জানাচ্ছে না কেন? আজ ওরই এত বড় বিপদ হয়ে গেল।
মৃত জওয়ানের বন্ধু বীরসিং মাহাত বলেন, বিশ্বরূপ ছোট থেকেই প্রচণ্ড মিশুকে। বাড়ি এলেও আমরা চার-পাঁচজন বন্ধু সারাক্ষণ একসঙ্গেই কাটাতাম। এদিন সংবাদমাধ্যম থেকেই বিষয়টি জানতে পারি। তিনদিন আগেই আমার সঙ্গে বিশ্বরূপের ফোনে কথা হয়েছিল। সেই সময় বাকি বন্ধুদেরও খোঁজ নিচ্ছিল। তা যে ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা হবে বুঝতে পারিনি।