অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি। প্রিয়জনের বিপদগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা। সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
এব্যাপারে রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক বিশ্বাস বলেন, ম্যানডেড ফর্মের সই ভেরিফিকেশনের জন্য ঋণ পেতে দেরি হচ্ছে এটা ঠিকই। আমরা ই-ম্যানডেড সিস্টেম আনার চেষ্টা করছি। এসবিআইয়ের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। এতে ম্যানডেড দ্রুত হবে। তবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আবেদন পড়ে থাকার কথা নয়। নিশ্চয় আবেদনকারীর কাগজপত্রে ভুল রয়েছে। আমরা দেখছি।
রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম সংখ্যালঘু মহিলাদের নিয়ে তৈরি স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সচেতনতা শিবির, হোর্ডিং, পোস্টার ও ব্যানার টাঙিয়ে প্রচার করে। যাতে মহিলারা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু, সেই প্রচার সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশের কোনও কাজে আসছে না। কারণ, আবেদন করা সত্ত্বেও ঋণ পাচ্ছেন না তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভাপতি বলেন, এর আগে দপ্তর থেকে ঋণ নিয়ে আমরা কাঁথাস্টিচের কাজ করে দোকানে দোকানে সরবরাহ করছি। বর্তমানে গোষ্ঠীর সদস্যা সংখ্যা ১৪। সেই ঋণ মিটিয়ে গত বছরের নভেম্বরে পুনরায় ঋণ চেয়ে দপ্তরে আবেদন করেছিলাম। সমস্ত কিছু ভেরিফিকেশনের পর সদস্যা পিছু ২২ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, এবছরের নভেম্বর মাস পেরিয়ে গেলেও ঋণ মেলেনি। দপ্তরে গেলে বলা হচ্ছে আবেদনের সঙ্গে ম্যানডেড ফর্মের সই মিলছে না। আরএক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা বলেন, আট মাস আগে ঋণ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন করা হয়েছে। এক লক্ষের বেশি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, ঋণের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে ঋণ পরিশোধের কিস্তি নগদে উপভোক্তাদের কাছ থেকে নেওয়া হতো। এতে কিছুটা সমস্যা দেখা দেওয়ায় ম্যানডেড সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের ম্যানডেড ফর্মে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষর সই, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং মাসের কোন তারিখ কিস্তি জমা করতে চান, সেটা উল্লেখ থাকবে। সেই ফর্ম ব্যাঙ্কে রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে ঋণ গ্রহিতার কিস্তি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মাইনাস হয়ে যাবে। কিন্তু, রাজ্যের একটা বড় অংশের সংখ্যালঘু মহিলারা অল্প শিক্ষিত হওয়ায় আবেদনপত্রের সঙ্গে ম্যানডেড ফর্মের সইয়ের ফারাক হচ্ছে। তাই নিয়ম মতো ব্যাঙ্কও ঋণ দিচ্ছে না।
এই সমস্যার কারণে রাজ্যের প্রতিটি জেলা দপ্তরে ঋণের আবেদনের পাহাড় জমছে। ফলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে ১২০০ স্বনির্ভর গোষ্ঠী, মালদহে ৮০০, পূর্ব বর্ধমানে ৩০০, পশ্চিম বর্ধমানে ৪৫০, বীরভূমে ৭০০, নদীয়ায় ৬০০, উত্তর ২৪ পরগনায় ৫০০ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৬৫০টি গোষ্ঠী সমস্যায় পড়েছে। সারা রাজ্য মিলিয়ে লক্ষাধিক সংখ্যালঘু মহিলা ঋণ না পেয়ে হতাশ। আবেদন করেও ঋণ না মেলায় বাধ্য হয়ে ব্যবসা করে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন ভুলে অন্য কাজে ঝুঁকছেন অনেকে। তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই দাবি করেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ঠিক সময়ে ঋণ পেয়ে এগিয়ে চলেছেন। অথচ আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। অনেকে বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে চড়া সুদে লোন নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তেমনই প্রকল্পের জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।
এক আধিকারিক বলেন, ২০১৯-’২০ আর্থিক বছর শেষ হতে আর তিন মাস বাকি আছে। অথচ এখনও পর্যন্ত ১৫ শতাংশ কোটাও সম্পূর্ণ হয়নি। সংখ্যালঘু মহিলাদের উন্নয়নে বরাদ্দ কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। মার্চের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে কেন্দ্রের প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফেরত যাবে।