বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
রথযাত্রা আসন্ন প্রায়। মহামারীর কারণে মহা সমারোহ বন্ধ। তবু রথের পুজোপাঠের নিয়মে কোনও ত্রুটি রাখা হবে না। কলকাতার ইসকন মন্দির থেকে এমন কথাই জানা গিয়েছে। এমনিতেই প্রভু শ্রীজগন্নাথদেবের ভোগের বিপুল আয়োজন। অন্যান্য বছরের মতোই এবছরও সেই আয়োজন সম্পূর্ণভাবেই করা হবে। শ্রীজগন্নাথদেবের প্রসাদ ও ভোগ বিষয়ে শ্রীচৈতন্য বলেছিলেন,
‘যোগে যোগী পায় যাহা, ভোগে আজ হবে তাহা
হরি বলি খাও সবে ভাই।
কৃষ্ণ প্রসাদ অন্ন, ত্রিজগৎ করে ধন্য
ত্রিপুরারি নাচে যাহা পাই।’
ইসকনের মন্দিরে প্রভুর পুজোয় তাই ভোগের অসীম গুরুত্ব। সেই গুরুত্ব বিচার করেই রথে ভোগের আয়োজন করা হয়। মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের মুখপাত্র সুব্রত দাস বলেন, প্রভু ভীষণ খাদ্যরসিক। পৃথিবীর নানা স্থানে তাই তাঁর ভোগের ভিন্ন আয়োজন। পিৎজা থেকে ডাল, ভাত, সব্জি সবই তাঁর মুখে রোচে। আর মিষ্টি? সে তো অনন্ত! বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়াই তাঁর নিত্য মেনুতে ছাপ্পান্ন ভোগের আয়োজন করা হয়। এই খাদ্যতালিকা থেকে অবশ্য বেছে কিছু বিশেষ পদ সহকারে প্রভু শ্রীজগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদের আয়োজন করেছে ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
মহাপ্রসাদের সেই থালিতে কন্টিনেন্টাল ও ভারতীয় খাবার সাজানো হয়। ভারতীয় খাবারের মধ্যে পকোড়া, বিভিন্ন ধরনের সব্জি, নানারকম ডাল, পোলাও, রসমালাই ইত্যাদি রাখা হয়। আর বিশেষ দিনে তো তাঁর ভোগের মেনু শতাধিক পদে সমৃদ্ধ হয়। সেইসব পদ থেকেই কয়েকটির রেসিপি থাকছে আজকের পাঠকদের জন্য।
পুষ্পান্ন (৮ জনের জন্য)
উপকরণ: বাসমতি চাল ১ কাপ, ৬ কাপ খাঁটি দুধের ছানা, ময়দা ১ টেবিল চামচ, বাদাম ১ কাপ, কাঁচা কাজুবাদাম ১ কাপ, পেস্তা ২ টেবিল চামচ, শুকনো নারকেল কুচি ১ কাপ, কিশমিশ ৩ টেবিল চামচ, ঘি ৩ টেবিল চামচ+ ৫০০ গ্রাম, হলুদ ১ চা চামচ, দুধ ১ চামচ, জাফরান সামান্য, লবঙ্গ ৬টা, দারচিনি ২ ইঞ্চি কাঠি, এলাচ ৬টা, শুকনো লঙ্কা ১টা, গোটা জিরে ১ চা চামচ, গোটা ধনে ১ চা চামচ, হিং চা চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, নুন স্বাদ মতো, গরম জল ৩ কাপ।
পদ্ধতি: চাল বেছে ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর জল ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন। ছানা মেখে নিয়ে তার সঙ্গে ময়দা যোগ করে তা বলের আকারে গড়ে নিন। বাদাম, কাজু, পেস্তা, কিশমিশ নারকেল একসঙ্গে একটা পাত্রে রাখুন। জল ঝরানো চাল একটা স্যসপ্যানে ঢালুন তাতে হলুদ এবং ১ চামচ ঘি মেশান। দুধ গরম করে তাতে জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। একটা কড়াইতে বেশ খানিকটা ঘি গরম করে নিন। এবার তাতে সব বাদাম ও নারকেল ভেজে নিন। তারপর কিশমিশ দিয়ে ভাজুন। এগুলো তুলে রেখে ছানার বলগুলো ভেজে তুলুন। এবার একটা তলা মোটা কড়াইতে চার চামচ ঘি গরম করুন। তাতে লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, শুকনো লঙ্কা জিরে, ধনে ফোড়ন দিন। সব শেষে হিং দিন। অল্প একটু ঘিয়ের সঙ্গে হলুদ গুলে নিয়ে এই কড়াইতে ঢালুন। এরপর চাল, চিনি ও নুন একসঙ্গে কড়াইতে দিয়ে নাড়ুন। একটু ভাজা ভাজা হলে তাতে জল গরম করে মেশান। ঢিমে আঁচে চাপা দিয়ে রাঁধুন। ফুটে উঠলে ভাজা বাদাম ও নারকেল দিন। নেড়ে মিশিয়ে ছানার বলগুলো মেশান। সব শেষে জাফরান মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে আরও একটুক্ষণ রান্না করুন। চালের সঙ্গে সব উপকরণ মিশে গেলে নামিয়ে নিন।
ডালমা (৪-৬ জনের মতো)
উপকরণ: মটর ডাল ২ কাপ, জল ৪-৬ কাপ, হলুদ ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো ২ চা চামচ, ফুলকপি, রাঙালু, গাজর, আলু, কুমড়ো, লাউ সব ডুমো করে কাটা ২ কাপ, বড় সাইজের টম্যাটো কুচি করে কাটা ৩-৪টে, ঘি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা ২টো, হিং সামান্য, দারচিনি গুঁড়ো ১ চামচ, আদার শুট ১ চা চামচ, জিরে গুঁড়ো ৩ চা চামচ, ছোট ক্যাপসিকাম কুচি করা ২ চামচ, নুন স্বাদ মতো, চিনি ২ চামচ, লেবুর রস ৩ চা চামচ, ধনেপাতা কুচি অল্প।
পদ্ধতি: ডাল ধুয়ে নিন। তারপর একটা বড় পাত্রে তা ১০ কাপ জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ডালের জল ঝরিয়ে নিন। একটা বড় কড়াইতে চার কাপ জল ফুটিয়ে নিন। তাতে জল ঝরানো ডাল দিয়ে ঢিমে আঁচে সেদ্ধ করুন। ডালের সঙ্গে নুন ও হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। ডাল খানিকটা ফুটে উঠলে বাকি গুঁড়ো মশলা, আদার শুট ইত্যাদি মিশিয়ে দিন। আরও খানিকক্ষণ ফোটার পর বাকি সব মশলা মিশিয়ে নেড়ে নিন। সবশেষে কেটে রাখা সব্জি ও টম্যাটো মিশিয়ে আরও দেড় ঘণ্টা রান্না করুন। সব একসঙ্গে মিশে গেলে, ডাল সেদ্ধ ও ঘন হলে নামিয়ে নিন। ওপর থেকে ঘি ছড়িয়ে দিন।
আলু কাজু ভাজা (৪-৬ জনের মতো)
উপকরণ: আলু ৮০০ গ্রাম, ঘি ৩ টেবিল চামচ (প্রয়োজনে ভালো অলিভ অয়েলও ব্যবহার করা যেতে পারে), গোটা সর্ষে ১ চা চামচ, আধভাঙা বিউলির ডাল ২ চা চামচ, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, কারি পাতা ২০ টা, কাঁচালঙ্কা ২টি, নারকেল কুচি ৪ টেবিল চামচ, নুন স্বাদ মতো, লেবুর রস ২ চা চামচ, অর্ধেক করে ফালি করা ভাজা কাজু কাপ।
পদ্ধতি: আলু ধুয়ে নিন। একটা পাত্রে জল নিয়ে তাতে আলু ফুটতে দিন। আধসেদ্ধ হলে নামিয়ে নিন। এরপর ঠান্ডা হতে দিন। খোসা ছাড়িয়ে আলু একটু বড় করে কেটে নিন। কড়াইতে ঘি গরম করে নিন। আঁচ মাঝারি রেখে সর্ষে ফোড়ন দিন। সর্ষে ফাটতে শুরু করলে আঁচ কমিয়ে বিউলির ডাল দিন। বাদামি করে ভেজে নিন। তারপর কারিপাতা দিন। লঙ্কা মাঝখান থেকে চিরে দিয়ে দিন। আদা, লঙ্কা একে একে ডালে যোগ করুন। সুগন্ধ বেরলে নারকেল কোরা দিন। সব মিশে গেলে আলু দিয়ে দিন। নুন দিয়ে খানিকক্ষণ ঢিমে আঁচে রান্না করুন। সব উপকরণ একে অপরের সঙ্গে মিশে গেলে এবং তা একটু মাখা মাখা হলে কাজুবাদাম দিয়ে দিন। ওপর থেকে লেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।