এক পশলা বৃষ্টির পরে একটু টক ঝাল মিষ্টির আয়োজন হলে মন ভরে যায়। তাই দামাল হাওয়ার সঙ্গে চাই মনপসন্দ পাওভাজি। তাতে আবার বিভিন্ন স্টাইল। আমিষ ও নিরামিষ পাওভাজির রেসিপি দিলেন শেফ রাহুল অরোরা।

মুম্বইয়ে জন্ম হলেও পাওভাজি এখন কলকাতাবাসীর কাছেও  বেশ জনপ্রিয় স্ন্যাক্স। ভরপেট ডিনার হিসেবেও অনেকেই তা খেতে ভালোবাসেন। নানারকম সব্জি দিয়েই পদটি বানিয়েছিলেন সর্দার আহমেদ। সেটা ছিল ছয়ের দশক। মুম্বইয়ের ক্র্যাফোর্ড মার্কেটে একটা কাপড়ের মিলের গেটে ফল বিক্রি করতেন সর্দার আহমেদ। কখনও বা সেই ফল দিয়ে তৃষ্ণার্ত মিল মজুরদের শরবতও বানিয়ে দিতেন। একদিন হঠাৎই ভাবলেন কম খরচে পুষ্টিকর ও পেট ভরা খাবার যদি জোগান দিতে পারেন কেমন হয়? সেই ভাবনা থেকেই পাও বান, সব্জি এবং মাখন মিশিয়ে তৈরি করলেন একটা আস্ত পদ। নাম দিলেন পাওভাজি। রমরমিয়ে বিক্রি হতে শুরু করল পদটি। প্রথম দিকে ফলের ঠেলাতেই পাওভাজি বিক্রি শুরু করেছিলেন। ক্রমশ তার চাহিদা এত বেড়ে যায় যে একটা ছোট রেস্তরাঁ খোলেন সর্দারজি। আজও মুম্বইয়ের ক্র্যাফোর্ড মার্কেট অঞ্চলে সেই রেস্তরাঁ রয়েছে। মুম্বইতে জন্ম নেওয়া পাওভাজি এখন কলকাতাবাসীরও দারুণ প্রিয়। সান্ধ্যকালীন জলখাবার হিসেবে অনেকেই এই পদটি পছন্দ করেন। বাঙালির চাহিদা অনুযায়ী আপাত নিরামিষ এই পদটির তাই আমিষ রেসিপিও বানানো হচ্ছে। তেমনই একপদ আমিষ ও একপদ নিরামিষ পাওভাজির রেসিপি দিলেন পরাঠেওয়ালি গলি ও বন অ্যাপেতিত রেস্তরাঁর কর্ণধার শেফ রাহুল অরোরা। তাহলে আর দেরি কেন? গরম চায়ের সঙ্গে পাওভাজিতে জমে যাক বর্ষা।     

পাও ভাজি
উপকরণ: বেস বানানোর জন্য: গ্রেট করে নেওয়া গাজর, বিনস, ফুলকপি, বাঁধাকপি ৫০০ গ্রাম, কড়াইশুঁটি ১০০ গ্রাম, জল ৫০০ মিলি, নুন ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ। 
সব একসঙ্গে একটা বাটিতে নিয়ে সেদ্ধ করুন। তারপর জল ঝরিয়ে তা চটকে মেখে নিন। 
মাখন ১০০ গ্রাম, রসুন কুচি ৩ টেবিল চামচ, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, লঙ্কা কুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১টা বড়, পেঁয়াজ শাক কুচি  কাপ, আলু সেদ্ধ করে মেখে নেওয়া ২টো, নুন স্বাদ মতো, পাওভাজি মশলা ৩ টেবিল চামচ, শুকনো লঙ্কা কুচি অল্প, ধনে গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, টম্যাটো পেস্ট ২টো, লেবুর রস স্বাদ মতো।
পদ্ধতি: একটা পাত্রে মাখন গলিয়ে নিন। তাতে আদা রসুন, পেঁয়াজ ও লঙ্কা কুচি ভেজে নিন। এরপর ক্যাপসিকাম ও পেঁয়াজ শাক দিয়ে নেড়ে নিন। ক্যাপসিকাম যেন সেদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এরপর একে একে বাকি সব মশলা দিয়ে নেড়ে নিন। মাখন ছেড়ে আসতে থাকলে টম্যাটো বাটা এবং বাকি সব উপকরণ দিয়ে দিন। নুন দিয়ে ঢিমে আঁচে একটুক্ষণ বসিয়ে রাখুন। ক্রমাগত নাড়তে নাড়তে সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটা ঘন গ্রেভি মতো হলে ওপর থেকে লেবুর রস ছড়িয়ে নামান। এবার ফ্রাই প্যানে মাখন গলিয়ে নিন। তাতে পাও বান এপিঠ ওপিঠ করে সেঁকে নিন। পাও বানের সঙ্গে এই ঘন গ্রেভি সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ইরানি কিমা পাও
উপকরণ: কিমার জন্য: কিমা ৫০০ গ্রাম, আদা রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, নুন স্বাদ মতো, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ।
সব মশলা কিমাতে মাখিয়ে আলাদা করে রেখে দিন। 
গ্রিন মশলা বানানোর জন্য: ধনেপাতা ১০০ গ্রাম, পুদিনা পাতা ২৫ গ্রাম, কাঁচা লঙ্কা ৩টে।
সব একসঙ্গে বেটে রাখুন।
শুকনো মশলা বানানোর জন্য: গোটা ধনে  কাপ, গোলমরিচ ২০টা, ছোট এলাচ ২টো, দারচিনি ১ ইঞ্চি কাঠি, জায়ফল টা, গোটা জিরে ১ চা চামচ।
সব মশলা শুকনো খোলায় ভেজে নিন। তারপর তা গুঁড়ো করে রেখে দিন। 
তেল ২ টেবিল চামচ, মাখন ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ৩০০ গ্রাম, রসুন কুচি ২ টেবিল চামচ, শুকনো লঙ্কা কুচি ১ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, গোলমরিচ গুঁড়ো স্বাদ মতো, ধনে গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, টম্যাটো বাটা ১টা, কড়াইশুঁটি  কাপ, ডিম ১টা, লেবুর রস স্বাদ মতো। 
পদ্ধতি: একটা পাত্রে মাখন এবং তেল একসঙ্গে গরম করুন। তাতে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি ভাজুন। এরপর ম্যারিনেট করা কিমা দিয়ে দিন। বেশ খানিকক্ষণ ধরে ঢিমে আঁচে ভাজুন। তারপর কড়াইশুঁটি দিন। এরপর শুকনো করে গুঁড়ো করা মশলা, ধনে গুঁড়ো লঙ্কা গুঁড়ো, নুন ও মরিচ দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর টম্যাটো বাটা দিন এবং তারপর গ্রিন পেস্ট মেশান। অল্প জল দিয়ে ঢিমে আঁচে কিমা রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দেবেন। সব সেদ্ধ হলে ওপর থেকে লেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। এবার ফ্রাই প্যানে মাখন গলিয়ে নিন। তাতে পাও বান এপিঠ ওপিঠ করে সেঁকে নিন। কিমার সঙ্গে পাও বান দিয়ে পরিবেশন করুন। চাইলে এর সঙ্গে ডিমের পোচও দিতে পারেন।