উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
গত ১৮সেপ্টেম্বর ভোরে পাঁশকুড়া পুরসভায় জন্দড়া এলাকায় কংসাবতী নদীবাঁধ ভেঙে পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সেচদপ্তর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ করছে। নদীর জল একেবারে কমে গিয়েছে। দু’দিকের চরে একদম জল নেই। জন্দড়ায় নদীবাঁধ ভাঙার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে গণেশ ভুঁইয়ার দোতলা পাকাবাড়ি ভেঙে পড়ে গিয়েছিল। লাগোয়া তাঁর বড়দা কার্তিক ভুঁইয়ার বাড়িও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছলছল চোখে গণেশবাবু বলেন, ২০২২সালে বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করেছিলাম। অনেক কষ্টার্জিত টাকায় বাড়ি চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল।
পাঁশকুড়ার পশ্চিমকোল্লা থেকে জন্দড়া যাওয়ার রাস্তায় কংসাবতী নদীবাঁধের ধারে দুর্গতরা ত্রিপল খাটিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিন জেলা পুলিসের তরফে টোটোয় ত্রাণসামগ্রী ও ত্রিপল নিয়ে গিয়ে ওই জায়গায় বিলি করা হয়। পাঁশকুড়া শহরে স্টেশন বাজারে অধিকাংশ জায়গায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত জল। এদিন বিকেলে পুরসভার বাহারগ্রাম এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে পানীয় জল দেওয়ার সময় দুর্গতরা হামলে পড়েন। একটানা বিদ্যুৎ নেই। যে কারণে পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র। ত্রাণ ও ত্রিপলের দাবিতে এদিন পাঁশকুড়ার মঙ্গলদ্বারি এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন দুর্গতরা। তমলুকের মহকুমা শাসক ও পাঁশকুড়া থানার আইসি গিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলেন।
পাঁশকুড়া ব্লকের গোবিন্দনগর, চৈতন্যপুর-১ ও ২, ঘোষপুর প্রভৃতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এখনও জলের তলায়। ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের ভিড়। এদিন পাঁশকুড়ার জয়কৃষ্ণপুরে একটি সংস্থার উদ্যোগে রান্নাকরা খাবার বিলি করা হচ্ছিল। সেখানে বাসভাসিদের লাইন পড়ে যায়। ওই গ্রামের বাসিন্দা মালতি রানা, বিশ্বজিৎ রানা একটি দোকানের খোলা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এভাবে জল, খাবারের সঙ্কটের মুখোমুখি হব ভাবতেও পারিনি। তিনদিন পর সকলে পেট ভরে ভাত খেলাম।
শুক্রবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী এবং পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য পাঁশকুড়ায় থেকে দুর্গতদের ত্রাণ সামগ্রী বিলির কাজ মনিটরিং করেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী ঢোকার আগেই অনেক জায়গায় তা অন্যের কব্জায় চলে যাচ্ছে। যে কারণে সর্বত্র সমানভাবে বণ্টন হচ্ছে না বলে অভিযোগ। খাবার থেকে ত্রিপল সবেতেই এই ঘটনা ঘটছে বলে বানভাসিদের দাবি। পাঁশকুড়ার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার প্রায় ৭০টি ট্রান্সফরমার জলের তলায়। সংস্থার রাতুলিয়া সাবস্টেশনে এখনও অনেক জল। কর্মীরা সেখানে ঢুকতেই পারছেন না। একইভাবে বণ্টন সংস্থার প্রতাপপুর সাপ্লাই অফিসের গ্রাউন্ড ফ্লোর পুরোপুরি জলের তলায়। সেই অফিসেও ঢোকা যাচ্ছে না। প্লাবিত পাঁশকুড়ার মোট ৮৭৭টি ট্রান্সফর্মার সংযোগহীন রাখতে বাধ্য হয় বণ্টন সংস্থা। এই অবস্থায় খড়্গপুরের কালুয়া বৃন্দাবনপুর সাবস্টেশনের সঙ্গে ফিডার কানেক্ট করে পাঁশকুড়ায় কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বণ্টন সংস্থা। তবে, জল নেমে ট্রান্সফর্মার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। (পাঁশকুড়ায় বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাড়ি।-নিজস্ব চিত্র)