বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিজিওনাল ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর ডাঃ মৃদুময় দাস বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই সঙ্কট চলছে। পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত তাঁদের সরবরাহ করা হচ্ছে। কেউ রক্ত না দিলে তাঁকে তাঁর প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে রক্তদান শিবির না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন মহলকে জানানো হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের মজুতে টান পড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন রোগীর আত্মীয়রা। তাঁরা রক্তের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেরাচ্ছেন। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিজিওনাল ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে বিমল সাহা নামে এক ব্যক্তি বলেন, গুরুতর অসুস্থ এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর অপারেশনের জন্য বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দরকার। দু’দিন ধরে এই ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেও তা মেলেনি। অবশেষে এক প্রতিবেশী রক্তদান করলেন। পরিবর্তে ব্যাঙ্ক থেকে চাহিদামতো গ্রুপের রক্ত পেলাম।
শিলিগুড়ি শহরের আরএক ব্যক্তি বলেন, কয়েকদিন আগে এক আত্মীয়ের জন্য এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে আবেদন করার পর একজন ডোনার খুঁজে পাই। শুধু ওই দু’জন নন, করোনা মহামারীর মধ্যে জীবনদায়ী রক্তের জন্য অনেককেই হয়রান হতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিজিওনাল ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের মজুত প্রায় শূন্য। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এখানে প্যাকড রেড ব্লাড সেল বা পিআরবিসি মজুত করা যায় প্রায় ১০০০ ইউনিট। বর্তমানে এখানে মজুত আছে মাত্র ১০ ইউনিট রক্ত। যার মধ্যে ‘এ পজিটিভ’ গ্রুপের কোনও রক্ত নেই। এ, বি, বি পজিটিভ, এবি পজিটিভ, ও পজিটিভ প্রভৃতি গ্রুপগুলির রক্ত এক-দুই প্যাকেট করে রয়েছে। এরফলে এখানে রেড ব্লাড সেল (আরবিসি) ও ফ্রেস ফ্রোজেন প্লাজমা (এফএফপি) মজুতে টান পড়েছে। এখানে আরবিসি ১৫০০ থেকে ২০০০ ইউনিট এবং এফএফপি ২০০০ ইউনিট মজুত রাখার ব্যবস্থা আছে। প্লেটলেটও মজুত করা যাচ্ছে না। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দিনে এখানে রক্তের চাহিদা প্রায় ৭০-৮০ ইউনিট। যখন এখানে যথেষ্ঠ পরিমাণ রক্ত মজুত থাকে, তখন শিশুদের চিকিৎসা সহ কিছু অপারেশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দেখেই রক্ত দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে সেই সময় রোগীর আত্মীয়দের রক্তদান করতে হয় না। কিন্তু বর্তমানে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন সমস্ত ধরনের রোগীর আত্মীয়দের রক্তদান করার পর এখান থেকে প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত নিতে হচ্ছে।
শুধু এই রিজিওনাল ব্যাঙ্ক নয়, এর অধীনে থাকা অন্যান্য ব্লাড ব্যাঙ্কেও এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এর অধীনে কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত প্রায় ১৯টি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির আধিকারিক ও কর্মীরা বলেন, বিগত বছরগুলিতে এসময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ক্লাব রক্তদান শিবির করে। সেইসব শিবির থেকে সংগৃহীত রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত করা হয়। এবার করোনা থাবা বসানোর পর রক্তদান শিবির বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে ক্লাব ও সংস্থাগুলি রক্তদান শিবির করছে না। ফলে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের মজুতে টান পড়েছে।