কর্মলাভের যোগ আছে। ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা জুটবে। ... বিশদ
‘ভারতের আচরণ ভালো না’ আর ‘সর্বাধিক শুল্ক নেয় নয়াদিল্লি’। সফর শুরুর আগে ট্রাম্পের এই দুই উক্তিতে মনে হয়েছিল, প্রথম ভারত সফরে মোদিকে হয়তো বেগ দিতে পারেন ট্রাম্প। কিন্তু সোমবার থেকে শুরু হওয়া ৩৬ ঘণ্টার সফরের গোড়া থেকেই স্রেফ মোদি বন্দনায় মেতে উঠলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাল্টা সৌজন্যে মোতেরা স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে মোদি ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, ‘সুস্থ ও সুখী আমেরিকার জন্য আপনি যা করেছেন, মার্কিন মুলুক তার সুফল পাচ্ছে। শিশুদের জন্য আপনার উদ্যোগ অবিস্মরণীয়।’
ভারতে সফরে আসার মাঝেই হিন্দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যুইট করেছিলেন, ‘রওনা হয়ে গিয়েছি।’ উত্তর দিতে বিন্দুমাত্র সময় নেননি নরেন্দ্র মোদি। হিন্দিতেই ট্যুইট করেন, ‘অতিথি দেব ভব। আপনাকে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে রয়েছি।’ ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর হৃদ্যতাটা সেখানেই বাঁধা হয়ে গিয়েছিল। তা পরিণতি পায় আমেদাবাদ বিমানবন্দরে। এয়ারফোর্স ওয়ানের এরোব্রিজ দিয়ে নামতেই করমর্দনের প্রোটোকল ছাপিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। দুই দেশের আপামর জনতার সঙ্গে সেই উষ্ণ মুহূর্তের সাক্ষী তখন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও।
সোমবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমানের। তার একঘণ্টা আগেই সেখানে পৌঁছে যান মোদি। নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট আগে মাটি ছোঁয় এয়ারফোর্স ওয়ান। অভ্যর্থনার পালা চুকিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার কনভয় ছোটে সবরমতী আশ্রমের দিকে। উত্তরীয় পরিয়ে সেখানে মোদি যখন ট্রাম্পকে স্বাগত জানাচ্ছেন, আবহ সঙ্গীতে বাজছে ‘রঘুপতি রাঘব...’। এরপর সস্ত্রীক ট্রাম্পকে নিয়ে হৃদয়কুঞ্জে ঢোকেন মোদি। আশ্রমের এই ঘরেই স্ত্রী কস্তুরবাকে নিয়ে থাকতেন গান্ধীজি। সেখান থেকে বেরিয়ে ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে নিয়ে মোদি যান চরকার কাছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এর গুরুত্ব মোদির কাছে শুনতে শুনতেই অনভ্যস্ত হাতে ট্রাম্প বসে পড়েন সুতো কাটতে। বেরনোর সময় মোদির থেকে গান্ধীজির মতাদর্শগত ‘তিন জ্ঞানী বাঁদর’-এর মূর্তি, চরকা উপহার পেয়ে ভিজিটর্স বুকে ফের একপ্রস্থ মোদিস্তুতি করেন ট্রাম্প। লেখেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু মোদির জন্য... এই অভূতপূর্ব সফরের জন্য ধন্যবাদ।’ সবরমতী আশ্রমে ১৫ মিনিট কাটিয়ে ট্রাম্প ও মোদি রওনা হন মোতেরা স্টেডিয়ামের উদ্দেশে। সেখানেই যে মূল উৎসব। ‘নমস্তে ট্রাম্প’।
বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটারের এই ‘ইন্ডিয়া রোড শো’য়ে রাস্তার ধারে মোট ৫০টি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। নাচ-গানের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল ট্রাম্পের সৌজন্যে। আর স্টেডিয়ামের ভিতর লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত। সেখানে পারস্পরিক প্রশংসার মাঝেই ট্রাম্প বলে বসেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক বেশ ভালো। তার সুফল আমরা পাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদ দমনে ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। আমাদের আশা, এর ফলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।’
মোতেরার সভা সেরে সপরিবারে ট্রাম্প যান তাজমহলে। ২০ বছর পর কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর। তাই দুপুরের মধ্যেই পর্যটকশূন্য করে দেওয়া হয়েছিল এই স্মৃতিসৌধকে। খেরিয়া এয়ারবেস থেকে ট্রাম্পের ৩০ গাড়ির কনভয় যখন তাজমহলে এসে পৌঁছয়, সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলতে শুরু করেছে। আর সেই আভায় রাঙা হয়ে উঠেছে ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট। এটাই তো দেখতে চেয়েছিলেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি। তাই নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত না থাকলেও, তাজমহল সফর শেষে ট্রাম্প হিন্দিতে ট্যুইট করেন, ‘৮ হাজার মাইল সফর করে আমরা এই বার্তাই দিতে এসেছি, আমেরিকা ভারতকে ভালোবাসে।’ আগ্রায় তাজ দর্শন সেরে সন্ধ্যায় রাজধানীতে পা রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলের ‘চাণক্য’ স্যুইটে সপরিবারে রাত কাটাবেন ট্রাম্প।