বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই জায়গার দূষণের পরিমাণ প্রায় একই। এখানেই প্রশ্ন উঠছে শীতের প্রাক্কালে পাঞ্জাব, হরিয়ানাতে সৃষ্ট বায়ু দূষণ দিল্লিকে পুরো ঢেকে দেয়, তাহলে গরমকালে কলকাতা তথা এ’রাজ্য পূর্বঘাট পর্বতমালায় সৃষ্ট দূষণ থেকে কীভাবে রক্ষা পাচ্ছে। কারণ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেব বলছে, কলকাতা তথা এ’বঙ্গে গরমকালে বায়ু দূষণ অত্যন্ত কম থাকে। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গবেষকদের দাবি, এক্ষেত্রে সুন্দরবনই হচ্ছে কলকাতা তথা বঙ্গের রক্ষাকর্তা।
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তথা গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ প্রাচীর না থাকলে কলকাতা তথা বঙ্গের অবস্থাও দিল্লির মতো হত। কিন্তু, কীভাবে হচ্ছে গোটা বিষয়টি। অভিজিৎবাবু জানান, পূর্বঘাট পর্বতমালার অন্তর্গত ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানাতে এবং তামিলনাড়ুর একাংশে চাষিরা মূলত এক জমিতে একবার চাষ করার পর, পরের চাষটি সেই জমিতে করেন না। কৃষির পরিভাষায় যাকে ঝুম চাষ বলে। এক জমি থেকে অন্য জমিতে চাষ করতে যাওয়ার সময় আগের জমির সমস্ত কিছু (পড়ে থাকা ফসল, অন্যান্য গাছপালা, জঙ্গল) তাঁরা পুড়িয়ে দেন।
এই ঘটনায় দূষিত বায়ুর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক উপাদান নির্গত হয়, যা উপরের পরিষ্কার বায়ুতে মিশে যায়। গরমের সময় এ’রাজ্যে দক্ষিণা বাতাসের চলাচল বেশ ভালো থাকে। সেই বাতাসের সঙ্গে মিশেই ওইসব দূষিত উপাদানগুলি এ’বঙ্গে চলে আসে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই দূষিত উপাদানের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সালফিউরিক এবং নাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে, যা বাষ্প আকারে দক্ষিণা বাতাসের সঙ্গে ভেসে ভেসে এ’রাজ্যে চলে আসে।
অভিজিৎবাবু জানান, ধারাবাহিকভাবে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে নজর রেখে এরকমই চাঞ্চল্যকর তথ্য তাঁরা জানতে পেরেছেন। সমুদ্র পেরিয়ে এই সব দূষিত উপাদান যখন এ’বঙ্গে ঢুকতে যায়, তখন সমুদ্রের নোনা জলের উপাদানের সঙ্গে তা মিশে যায়। সেই উপাদানকে সুন্দরবনের সামুদ্রিক ম্যানগ্রোভ অরণ্য থেকে নির্গত বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান (বায়োজেনিক গ্যাস) শুষে নেয়। ফলে দূষিত সেই উপাদানগুলির পদার্থগত এবং রসায়নগত অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়, সেগুলি ম্যানগ্রোভের প্রাচীর ভেদ করে আর এগোতে পারে না।
অভিজিৎবাবু বলেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গুরুত্ব কতটা অপরিসীম। তবে এর সমাধান কী? অভিজিৎবাবু বলেন, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে রক্ষা করা এবং সেই সঙ্গে ধাপে ধাপে পূর্বঘাট পর্বতমালা এলাকার কৃষকদের চাষের অভ্যাসকে বদল করাই এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পিএইচডি ছাত্র অভিনন্দন ঘোষ এবং অধ্যাপক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম রায়, সনৎ দাস, সঞ্জয় ঘোষ এবং শিবাজি রাহার মিলিত গবেষণায় উঠে আসা এই তথ্য সম্প্রতি বিজ্ঞানের বিখ্যাত জার্নাল কেমোস্ফেয়ারে প্রকাশিত হয়েছে।