নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শহরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রতিবাদে তখন হাতিবাগান মোড়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ হচ্ছে। তখনই কানে এল, যা চলছে, যা হচ্ছে, সব কী মেনে নেওয়া যায়! দেশটাকে তো দ্বিতীয় আমেরিকা বানাতে চাইছেন মোদি। ফিরে তাকাতেই দেখা গেল, এক বৃদ্ধ এই মন্তব্য করছেন। তাঁর নাম বিশ্বজিৎ মাইতি। চোখে মুখে রাগ-রাগ ভাব। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এত ক্ষোভ কেন, কলকাতায় কি তিনি স্বাগত নন? জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, উনি প্রধানমন্ত্রী, আসতেই পারেন। জেএনইউ, এনআরসি কিংবা সিএএ নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কিন্তু দেশের আর্থিক যা অবস্থা, তাতে কি মোদির কোনও হেলদোল আছে! সেই বৃদ্ধর কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে কিশোর প্রামাণিক নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, তিনি কি বুঝছেন না কিছুই? এত কিছুর পরও কোনও প্রতিক্রিয়া নেই তাঁর।
রাজ্য সফরের দিনই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসা নিয়েও নানা মতামত উঠে এসেছে। হাতিবাগান থেকে হেদুয়া মোড়ের কাছে ভুটিয়াদের শীতবস্ত্রের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা এক অবাঙালি বলে উঠলেন, যো হো রহা হ্যায়, ঠিক নেহি হো রহা হ্যায়। আরও তীব্র ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া মিলল কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। এক চাওয়ালা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী সবই জানেন। কিন্তু কিছু বলছেন না। তাঁকে নিয়ে এত অসন্তোষ তো আর এমনি এমনি হচ্ছে না। তিনি এখানে না আসলেই বরং ভালো হতো। আবার এক বইয়ের ব্যবসায়ীর কথায়, দেশে এখন খুবই কঠিন পরিস্থিতি চলছে। সবাই প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু তিনি নির্বিকার।
শহরজুড়ে বিক্ষোভের জেরে ট্রাফিক ব্যবস্থা এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়ে। ধর্মতলা, রবীন্দ্র সদন চত্বরে বাস-ট্যাক্সি চলাচল ব্যাহত হয়। সেইরকম পরিস্থিতিতে ধর্মতলা থেকে নিজের বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। কোনও কিছু না পেয়ে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দেন। এঁরা এখানে আসবেন, আর আমাদের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে! চতুর্দিকে বিক্ষোভ হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। মোদিকে ঘিরে একদিকে যেমন মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই কেউ কেউ আবার এই বিক্ষোভকে ভালো চোখে নিচ্ছেন না। রবীন্দ্রসদন চত্বরে বাস ধরার জন্য অপেক্ষামান এক যাত্রী বলেন, রাজনৈতিক বা নীতিগতভাবে কেউ কাউকে পছন্দ নাও করতে পারেন। তবে এমনভাবে বিক্ষোভ কিন্তু রাজ্যের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা এক অফিসযাত্রীকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার রয়েছে। তাই বলে সব সীমা ছাড়িয়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে কোনও আন্দোলন করা উচিত নয়।