বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এমন বিক্ষোভ হবে, তা আঁচ করতে পারেনি পুলিস। তবে সেখানে বলপ্রয়োগ করেনি তারা। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকেই পড়ুয়াদের বলেন, তোমাদের এবং আমাদের আন্দোলন এক। পুলিস যে পড়ুয়াদের উপর লাঠিচার্জ করবে না, তার আশ্বাস দিয়ে মমতা বলেন, এই পুলিস দিল্লির নয়, আমাদের পুলিস। এনআরসি এবং সিএএ আমরাও চাই না। এত আর্জি জানানোর পরও পড়ুয়ারা তা শুনতে রাজি না হওয়ায় কিছুটা মেজাজ হারান মুখ্যমন্ত্রী। দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, যা ইচ্ছা করো। দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করো। মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে আজাদির স্লোগান তোলেন পড়ুয়ারা। তার পাল্টা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী ও টিএমসিপি’র সদস্যরা ইনকিলাব জিন্দাবাদের স্লোগান তোলেন। পরে ‘আমরা কারা? নাগরিক’ এই স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা চত্বর। যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের জমায়েত থেকে কেন মোদি-মমতা বৈঠক, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সেই বিষয়টি উপলব্ধিতে এনে কারণও ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, আমরা আমন্ত্রণ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে আসিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তাঁকে সাফ জানিয়ে এসেছি, সিএএ-এনআরসি এ রাজ্যে আমরা চালু করব না। তিনি পড়ুয়াদের বলেন, তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) নিরাপত্তার জন্য এসপিজি রয়েছে, আমাদের পুলিসের দরকার পড়ে না। উনি প্লেনে এসে হেলিকপ্টারে চড়ে শহরে এসেছেন। হোভারক্র্যাফ্টে চেপে বেলুড় গিয়েছেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা সেখানেই রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন। যার জেরে গভীর রাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে থাকে ধর্মতলা চত্বর। এদিন দুপুর থেকেই ব্যানার ছাড়া নন্দন চত্বরে জমায়েত করেছিল পড়ুয়ারা। কারও হাতে রোহিত ভেমুলা, কারও হাতে ভগৎ সিংয়ের ছবি দেওয়া পোস্টার, পতাকা। এনআরসি বা সিএএ মানব না, সেই পোস্টারও ছিল। দলে দলে ভাগ হয়ে পড়ুয়ারা স্লোগান দেন। কখনও ভেসে আসছে আজাদির স্লোগান, তো কখনও ইনকিলাব জিন্দাবাদ। প্রতিবাদের সুর চড়িয়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ছাত্রছাত্রীরা। কখনও কেউ কবিতা পাঠ করেছেন, আবার কেউ দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের এমন আন্দোলন দেখতে এসে রীতিমতো হতবাক এক বিদেশি পড়ুয়া। আন্দোলন, প্রতিবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা করতে তিনি এসেছেন কলকাতায়। তাই যেখানেই আন্দোলনের খবর পান, সেখানেই হাজির হন তিনি।
এই প্রতিবাদ মিছিলে দেখা মিলল অসমের পড়ুয়াদেরও। শিবপুরের আইআইইএসটি’তে স্নাতকোত্তরের কোর্স করছেন অভিজিৎ বোরা এবং অঙ্কুরণ দেওঘরিয়া। অসমেও সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। তাই সেই আন্দোলনে শামিল হতেই কলকাতার এই ক্ষোভে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। মিছিলের সময় এগিয়ে আসতেই, তার রুট নিয়ে পুলিসের সঙ্গে দফায় দফায় বিবাদ হয় আন্দোলনকারীদের। প্রথমে মিছিল করার অনুমতি না দেওয়া হলেও, পরে রাজি হয় পুলিস। শেক্সপিয়র সরণী ক্রসিংয়ের সামনে এসেই পুলিসের সঙ্গে পড়ুয়াদের বিবাদ শুরু হয়। দু’পক্ষই তাদের দাবিতে অনড়। শেষ পর্যন্ত মাঝামাঝি অবস্থানে আসে দু’পক্ষই। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই লেগে যায় ৩০ মিনিটেরও বেশি সময়। ততক্ষণ ওই চত্বরে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।