বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: পোস্ট অফিসের ব্যাঙ্কিং পরিষেবার খরচ আবারও বাড়ল। খরচ বাড়ানো হয়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ১৮ শতাংশ জিএসটি। সব মিলিয়ে খরচ বাড়ছে ১১৮ টাকা পর্যন্ত। ১০ জানুয়ারি দিল্লির ডাক ভবন থেকে সবক’টি পোস্টাল সার্কেলকে এই বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এখনও একমাস পূর্ণ হয়নি, ডাকবিভাগের ব্যাঙ্কিং পরিষেবার খরচে বেশ কিছু রদবদল এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তা ছিল গ্রাহকের কাছে বড় ধাক্কা। এরপর ফের পরিষেবা বাবদ খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায়, তা নিয়ে আবারও ক্ষোভ জমছে গ্রাহকের মধ্যে।
দেশের অধিকাংশ গ্রামেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা নেই। সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষের কাছে একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল ডাকঘর। এখানে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে নানা পরিষেবার জন্য যেহেতু এজেন্টরা নিয়োজিত আছেন, তাই বহু মানুষ ডাকঘরের সঞ্চয় প্রকল্পতেই বেশি ভরসা পান। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলিতে এমনভাবে বদল আনা হয়েছে গত মাসে, যাতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া গ্রাহকের জন্য সেই সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে— এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কীভাবে হয়েছে সেই রদবদল? এতদিন পোস্ট অফিসে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যেত ২০ টাকা দিয়ে। তা এখন খুলতে হবে ৫০০ টাকা দিয়ে। অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা ব্যালান্স না থাকলে ১০০ টাকা পেনাল্টি। আগে এই নিয়ম ছিল না। যদি অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা না থাকে, তাহলে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাবে। সাইলেন্ট অ্যাকাউন্ট, অর্থাৎ যেগুলি লেনদেন না হওয়ার কারণে থমকে আছে, তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফে বছরে ৫০০ টাকা না রাখলে অ্যাকাউন্টটি ‘ডিসকন্টিনিউড’ অ্যাকাউন্ট হিসেবে চিহ্নিত হবে। যতক্ষণ না সেটি বন্ধ করছেন গ্রাহক, ততক্ষণ তিনি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না। এই অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও ঋণও পাওয়া যাবে না। দিতে হবে ৫০ টাকা ডিফল্ট ফি। মান্থলি ইনকাম স্কিমে ১০০ টাকা বা তার গুণিতকে টাকা জমা করা যেত। এখন তা এক হাজার টাকা করা হয়েছে। টাইম ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা করা যেত। তা এক হাজার টাকা করা হয়েছে। রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলা যেত। এখন তা ১০০ টাকা। পাঁচ টাকার গুণিতকে আগে টাকা জমা হতো। এখন তা ১০ টাকা। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা এনএসসি কেনা যেত ১০০ টাকা থেকে। এখন তা এক হাজার টাকা করা হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি আরও এক দফা খরচ বাড়ালো কেন্দ্রীয় সরকার। ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট বা পাসবুক ইস্যু করা থেকে শুরু করে সেগুলির ট্রান্সফার— হরেক পরিষেবায় খরচ বাড়াল তারা। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্মল সেভিংস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাসের কথায়, সাধারণ মানুষ ও প্রবীণদের বল-ভরসা ডাকঘরের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। এখানে খরচ কম, পরিষেবাও ঝঞ্ঝাটহীন। তাই তার জনপ্রিয়তা বেশি। কিন্তু সরকার হয়তো চায় না, পোস্ট অফিসের ব্যাঙ্কিং লেনদেন বাড়ুক। তাই সব পরিষেবায় দাম বাড়াচ্ছে। এতে গ্রাহক দ্রুত মুখ ফেরাবেন বলেই মনে হয়। এমনিতেই সুদ কমছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে। এসব মিলিয়ে সঙ্কট বাড়ছে। তার উপর আমাদের কমিশনও কমানো হয়েছে হু হু করে। এখন সরকার হয়তো স্বল্প সঞ্চয় নামক বিষয়টিই তুলে দিতে চাইছে। আমাদের প্রতিবাদেও কর্ণপাত করছে না সরকার, এটাই দুঃখের।