অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
একটু বাদে গণনা কেন্দ্রের দিকে পা বাড়ালেন রুদ্রনীল ঘোষ। স্কুল বাড়ির দরজায় মুখোমুখি হতেই শোভনদেববাবু বললেন, ‘রুদ্রনীল, তুমি বড্ড রোগা হয়ে যাচ্ছ!’ প্রত্যুত্তরে এল একচিলতে হাসি। পরের রাউন্ডগুলির কয়েকটিতে সামান্য একটু এগল বিজেপি। কিন্তু তাতেও আত্মবিশ্বাস এতটুকু টলেনি তৃণমূল প্রার্থীর। বললেন, ‘৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে কিন্তু আমরা গত লোকসভা ভোটে মারাত্মক খারাপ ফল করেছিলাম। এবারে লিড দিচ্ছি।’ শুধু ৬৩ নম্বর নয়, ৭০ থেকে ৭৪—পাঁচটি ওয়ার্ডেই লোকসভায় পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খাসতালুক’ ভবানীপুরে এই হার যথেষ্ট সমালোচনার মুখে ফেলেছিল রাজ্যের শাসক দলকে। এবার এগুলোর কোনওটিতে শুরু থেকে এগিয়ে তৃণমূল, কোথাও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল বিজেপির সঙ্গে।
দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন রুদ্রনীল ঘোষ। তখনও ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। রুদ্রনীল তবু মচকালেন না। বললেন, ‘এখনও অনেকগুলো রাউন্ড বাকি। তাতে আমরা এগিয়ে থাকব।’ কিন্তু যেভাবে তৃণমূল এগচ্ছে, সে ব্যাপারে কী বলবেন? রুদ্রনীলের জবাব, ‘মুসলিমরা তো তৃণমূলকেই ভোট দেবে। চাকরি না পেলেও তৃণমূলকে ভোট দেবে, আবার হুকিং করে ইলেকট্রিক নেওয়ার খুশিতেও তৃণমূলকে ভোট দেবে।’ কিন্তু হিন্দুরা? রুদ্রনীলের আক্ষেপ স্পষ্ট হল, করোনা আতঙ্কে নাকি আবাসনের বাসিন্দারা ভোট দিতেই নামেননি। তারা যদি ভোট দিতেন, তাহলে ভোটের ফল অন্যরকম হত!
একটানা বসে ঘাড়ে যন্ত্রণা শুরু হয় শোভনদেববাবুর। প্রেশার বাড়ার আশঙ্কা করছিলেন। পাশ থেকে একজন ওষুধ আনার কথা বলায় জবাব এল, ‘না’। যন্ত্রণা কমাতেই হয়তো কাগজ-কলম নিয়ে ছবি আঁকতে বসলেন তিনি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের অবয়ব এঁকে ফেললেন নিমেষে। কিছুক্ষণ পরে আবার প্রশ্ন এল, ঘাড়ের যন্ত্রণা কমেছে? শোভনদেববাবু বললেন, ‘কিছুটা কমেছে। মার্জিন যত বাড়বে, যন্ত্রণা তত কমবে!’
গণনা কেন্দ্র থেকে খবর এল ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে লিড দিচ্ছে তৃণমূল। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এই ওয়ার্ডে গত লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেখানে অন্তত ৭০০ ভোটে শোভনদেব এগচ্ছেন। শুনে অবিচল রইলেন তিনি। শুধু বারবার খোঁজ নিলেন, নন্দীগ্রামে কী হল, কেউ বলতে পারো? প্রাথমিকভাবে যখন খবর এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে জিতে গিয়েছেন, বারবার কপালে হাত ঠেকালেন। নিজের মার্জিন যে ২৫ হাজার ছুঁইছুঁই, তাকে গ্রাহ্যই করলেন না। অবশেষে খবর এল, ইভিএমে ২৯ হাজার ৩৭৮ ভোটে এগিয়ে আছেন। চেয়ার ছেড়ে উঠলেন শোভনদেব। শুভেচ্ছার বন্যা চারদিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গড়’ আগলানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। ফুল মার্কস পেয়ে সেই পরীক্ষায় পাশ করলেন দলের ইতিহাসের ‘প্রথম’ বিধায়ক। গণনা কেন্দ্র পেরিয়ে উচ্ছ্বাস নামল রাজপথে।