মানুষ ভয় পেতে শুরু করে, তারপর একদিন ভয় পেয়ে বসে মানুষকে। সে ভয়ের নেপথ্যে কারণও থাকে না সবসময়। জীবনের সাত কাজে ব্যস্ত থাকলেও ‘ফোবিয়া’ আমাদের ছেড়ে যায় না। আমরাও ছাড়তে পারি না ফোবিয়াকে। দীপাবলির আলোয় মনের কালো ভয় কি দূর হবে?
সুকুমার রায় যতই বলুন ‘ভয় পেয়ো না’, ভয় মানুষের মজ্জাগত। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ প্রথম কবে ভয় পেল জানা নেই, তবে ভয় যে তার গুহাজীবনে মিশে ছিল, তা বোঝা যায় তার গুহার ও জীবনের অন্দরে উঁকি দিলেই। বন্য জন্তু থেকে আগুন, সবই তখন তার কাছে ‘থ্রেট’! এই ভয়মিশ্রিত জীবনে একটু স্বস্তিতে থাকতে সে বানিয়েছে হাতিয়ার, গড়েছে গোষ্ঠী। তারপর পেরিয়েছে হাজার হাজার বছর। মানুষ এখন উত্তর আধুনিক। ফোনে ফোনে ফাইভ জি। ঘরের কোণে এআই, রোবট। তবু মনের অন্দরে ‘ভয়’ নিয়ে তার ভীতির শেষ নেই। তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়েও মনের ভিতর তীব্র ভয়ের গুহা রেখে দিয়েছে সে। কার্তিকী অমাবস্যা তিথিতে মনের সব কালো, ভয়, অন্ধকারকে দূর করতে ও জীবনকে আলোয় ভরিয়ে তুলতে বাঙালি যেখানে দীপান্বিতা কালীপুজোর আয়োজন করে, সেই অন্ধকারে মজার ছলে ভয়কে জয় করার উৎসবই হ্যালোউইন। এর উৎপত্তিস্থল মূলত আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড। কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে উৎসবটি পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে গ্রীষ্মের শেষ এবং শীতের শুরুকে চিহ্নিত করতে তৈরি হতো নানা মুখোশ, যা পরে বনফায়ারের আয়োজন হতো। তৈরি হতো কুমড়োর লণ্ঠন। পরবর্তীকালে নিয়ম ও রীতির বিবর্তনে তা বিদেহী আত্মাকে তাড়ানোর উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই অতৃপ্ত আত্মাকে তাড়ানোর মধ্যেও রয়েছে ভয়েরই থাবা। শুধু ভূত বা আত্মা নয়, মনের গভীরে রয়েছে আরও নানা ভয়ের বাস। ছোটখাট, খুচরো নানা বিষয়, এমনকী, খুবই নিরীহ কিছু বিষয় নিয়েও ভয় দানা বাঁধে মনে।
আমাদের বর্তমান সমাজে প্রতিদিনই প্রচুর লোক নানা আশঙ্কা বা ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এমনিতেই দৈনন্দিন জীবনে প্রতিযোগিতা বা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মানুষ বিপর্যস্ত। প্রতি পরিবারেই রয়েছে কিছু টেনশন ও স্ট্রেস। ভয়ের ঘাড়ে চেপে যা ভয়ের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভয় বা আতঙ্ক আমাদের প্রাচীনতম অনুভূতির একটি। ভয় পায় না, এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। কারও ভূতের, কারও বা অন্ধকারে ভয়। আবার মৃত্যুভয়কেও অস্বীকার করার উপায় নেই। আসলে অজানা, অদেখা ও অতিপ্রাকৃত যে কোনও ঘটনা ভয়ের জন্ম দেয়। তা যুক্তির অভিধান মানে না। আর তাই ‘ফোবিয়া’ আজও মানুষের সঙ্গী।
চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘ফোবিয়া’ বা অস্বাভাবিক ভীতিকে একটি স্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী ভয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এর উৎস কোনও বস্তু বা স্থান হতে পারে। এর ফলে ভুক্তভোগী ভয়ের কারণকে কেন্দ্র করে নানা অবান্তর ও অযৌক্তিক কল্পনা করে তার থেকে দূরে থাকেন বা মানসিক চাপে থাকেন। আবার কোনও কিছু কল্পনা না করেও অজানা আশঙ্কা থেকে কোনও কোনও সময় ভয় মারাত্মক হয়ে ওঠে। ভয় আসলে মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে তখন একে ভয়রোগ বা ভীতি-রোগ বা ফোবিয়া বলে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী, ভয় অনেক প্রকার। এর মধ্যে অন্ধকারে থাকার ভয়, নির্দিষ্ট পশু বা প্রাণী থেকে ভয়, অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক ব্যাপারে ভয়, কোনও নির্দিষ্ট স্থানের ভয় ইত্যাদি রয়েছে।
ভয়ের আমি, ভয়ের তুমি
ভয়ের বা ফোবিয়ার পরিধিও ব্যাপক। মানুষের জীবনের সব স্বপ্ন এবং আশা হল তার ভবিষ্যৎকে নিয়ে। সে চায় একটি সুন্দর, আনন্দের ও শান্তিময় জীবন। কিন্তু অদ্ভুত হল পরম সত্য তবু মানুষ সব সময়ই মৃত্যুভয়ে জড়সড়। যখনই মনের মধ্যে মৃত্যুভয় বাড়তে থাকে, তখনই মানুষ বাস্তবের পৃথিবীর সম্পর্কে নিঃস্পৃহ হতে থাকে। সে মরণশীল জেনেও বেঁচে থাকতে চায়। মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া মানেই এই জাগতিক সবকিছু থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। আর এই ভাবনা থেকেই মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মানুষের সবচেয়ে তীব্র আতঙ্ক এই মৃত্যুভয়।
এর পরেই যে ভয় মানুষকের তাড়া করে বেড়ায়, তা সামাজিক ভয়। আমাদের এই পৃথিবীতে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মানুষের মধ্যে সামাজিক ভয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে খুব বেশি করে। সমাজের মানুষ এই প্রচলিত রীতি-নীতির বাইরে গেলেই শুরু হয়ে যায় এক অস্বস্তি। এই বিশেষ ধরনের ভয়কে গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন ‘সোশ্যাল ফোবিয়া’ হিসেবে। এ ধরনের সামাজিক ভয় বা আতঙ্ক মানুষের পরিচিত আতঙ্কের তালিকায় রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। আজকাল অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার আতঙ্কেও আতঙ্কিত। সেখানেও ভার্চুয়াল সোস্যাইটি নিয়ে ভয় বা উদ্বেগের স্বীকার হন অনেকে।
সামাজিক ভয় যদিও বা কাটিয়ে ওঠা গেল, ঘাড় থেকে নামানো গেল না ভূতের ভয়। মানুষের ভূতে বিশ্বাস সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সেই কোন ছোটবেলায় ‘জুজু’-র সঙ্গে পরিচিত হয় মানুষ। তারপর থেকে নানা ভূত-প্রেত-দত্যি-দানোর গপ্প শুনে সে বড় হয়। বড় হয়ে কেউ কেউ ভূতের ভয়কে গা না করেই বেঁচে থাকেন, কেউ আবার ভূত-অতৃপ্ত আত্মা এসবের জন্য যথেষ্ট ভীত থাকেন। সারা দুনিয়া জুড়েই তাই ভূতের ছবি, গা ছমছমে আবহে তৈরি ঘটনার পাঠক ও দর্শক বেশি। ভূতের ভয়কে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘স্পেকট্রোফোবিয়া’ বলা হয়। ভূত মানে মৃত আত্মা বা অপচ্ছায়া। অসংখ্য প্রাচীন লোককাহিনিতে ভূতের উল্লেখ আছে। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতিই ভূতে বিশ্বাস করে। তাদের বিশ্বাস, প্রাণীর শরীর থেকে আত্মা চলে গেলেই সে প্রাণহীন হয়ে পড়ে। কোনও কোনও আত্মা প্রাণীর শরীর থেকে বের হওয়ার পরও ফিরে আসে। আর এই ফিরে আসা আত্মাই হল ভূত। ভূতের শরীরী রূপ তার থাকে না। সে থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তার চালচলন স্বাভাবিক জীবিত শরীরের মতো। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু উপলব্ধি করা যায়। ইংরেজিতে ঘোস্ট শব্দটির প্রাচীন ইংরেজির ‘গাস্ট’ থেকে উদ্ধৃত। লাতিনে ‘স্পিরিটাস’ শব্দটির অর্থ হল শ্বাস বা জোরে বাতাস ত্যাগ করা। এমনকী উনিশ শতকে ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বইতে লেখক চার্লস ডিকেন্স ভূত এনেছিলেন। ভূতদের নিয়ে নানা লৌকিক-অলৌকিক কাহিনি ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর সর্বত্র।
এই বিশ্বে বহু মানুষই বিশ্বাস করেন যে ভূত নেই কিন্তু তবুও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে যান। অতিপ্রাকৃত ঘটনার ভয়ঙ্কর বর্ণনা শুনে ভূতের ভয় পেয়ে রোম খাড়া হয়ে যায় অনেকেরই। কারও কারও মনের ভিতর চলতে থাকে অস্বস্তি। কেউ আবার ভয়ের চরমে পৌঁছে যান। আসলে এই বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্য সম্ভবত ভূত। মানুষের চিরন্তন আগ্রহ আর রহস্যময়তার কারণেই ভূত বিষয়টির জনপ্রিয়তা কখনও কমেনি। সবার একই চিন্তা— ভূত আছে, নাকি নেই?
তবে ভূত না থাকলেও সুন্দরী নারী তো অবশ্যই বিদ্যমান। মনোবিদ্যা বলছে, পুরুষদের মধ্যে সুন্দরী নারীকে ভয় পাওয়ার রোগকে ‘ক্যালিজেইনফোবিয়া’ বলে। এ ধরনের ভয় প্রবল বলেই সুন্দরী নারীর সঙ্গ, সাধারণ পরিচয় পর্ব থেকে প্রেমের প্রস্তাব— সবেতেই তাঁরা ভয় পান। অকারণে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অমূলক ভয়ও অনেকেরই থাকে। গবেষকেরা দেখেছেন, এই অদ্ভুত বা বিচিত্র অনুভূতির মূলে রয়েছে নারীর সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের কারণে মানুষের মুগ্ধতা যত বেশি , ভয়ও ততই বেশি।
তবে প্রাণীজগতে ভয়ের বিষয়ের অভাব নেই। অনেকেই পোকামাকড় বা বিভিন্ন কীটপতঙ্গ দেখেও ভয় পান। মানুষভেদে এই আতঙ্কের রকমফের আছে। কেউ মাকড়সা দেখলে আঁতকে ওঠেন, আবার কেউ আরশোলা দেখলে বা ইঁদুর দেখলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কেউ ভয় পান টিকটিকি, গিরগিটি, কেউবা সাপ, কেঁচো ইত্যাদিতে। বিভিন্ন পোকামাকড় ছাড়াও কিছু জন্তুকেও ভয় পায় মানুষ। তার মধ্যে কুকুর, বেড়াল, বানর, ষাঁড় ইত্যাদি গৃহপালিত পশুরাও রয়েছে। এটি শুধুই শারীরিকভাবে আক্রান্ত হওয়ার ফলেই যে হয়, তা নয়, মানসিকভাবেও নানা অজানা অস্বস্তি ও ভয় থাকে। মনের ভয় প্রকট হওয়ায় কারণেই একে ফোবিয়ার তালিকায় রাখা হয়।
এছাড়া উঁচুতে দাঁড়ানো বা উঁচু কোনও কিছুতে চড়ার ভয় কম-বেশি সব মানুষেরই রয়েছে। খুব বেশি উঁচুতে চড়লেই এ ধরনের ভয় প্রবল হতে থাকে। অনেকের হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে, মাথা ঘুরতে শুরু করে এবং একসময় খুব উঁচু জায়গা থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু নিশ্চিত— এরকম ভাবনা মনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তাই উচ্চতাজনিত কারণে প্রচণ্ড ভয় আচ্ছন্ন করে ফেলে মানুষকে। অনেকে আবার জনবহুল জায়গায় অস্বস্তিতে ভোগেন এবং এক সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরেন। এই ভয়কে ক্লস্ট্রোফোবিয়া বলা হয়ে থাকে। অনেক মানুষের জটলা বা ভিড় ট্রেন-বাস দেখলে অনেকের মনে ভয় প্রবল হতে দেখা যায়। এর পিছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষকেরা দেখেছেন, বেশি লোকের সামনে মানুষ মনে করে শ্বাসের ঘাটতি হচ্ছে, অনুভূতিও হয় তেমন। এছাড়া কেউ কেউ অনেক লোকের মাঝে নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় পান, ব্যক্তিগত ত্রুটিগুলো প্রকাশ হওয়ার আতঙ্কে ভোগেন।
ভিড়ের ভয় খুব মজার! মানুষ নাচতেও ভয় পায়! মনোবিদরা বলছেন, বিভিন্ন পার্টি বা বন্ধু-বান্ধবের সামনে নাচতে অনেকেই ভয় পান। এর নেপথ্যেও রয়েছে ভয়। নৃত্য প্রদর্শনের ভয়টি বিশ্বজুড়ে সাধারণ ভয়গুলোর একটি। অহেতুক আতঙ্ক রয়েছে বলেই নাচের প্রতি মানুষের ভালোলাগা থাকার পরও নিজে থেকে সে নাচতে চায় না। এগুলি ছাড়াও আরও নানাবিধ ভয়ের ভাণ্ডার ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের চারপাশে।
তারকামনের ভয়!
আমজনতাই শুধু নয়, ভয়ের থাবা থেকে বাঁচেন না বড়সড় সেলিব্রিটি বা প্রতাপশালী রাষ্ট্রনেতারাও। সকল মানুষ যে আদতে এক ও রক্তমাংস-হাড়ের পিণ্ড তা এই স্বাভাবিক সাদৃশ্যগুলো দেখলে বোঝা যায়। হিটলার যেমন ভয় পেতেন দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে। দাঁত নিয়ে তীব্র টেনশনে থাকতেন তাই। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ভীষণ ভয় পান অন্ধকারকে। এমনকী, তাঁর দেওয়া নানা সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, রাতের বেলায় ঘরে আলো জ্বালিয়েই ঘুমোন এই তারকা। অন্ধকারে চলাফেরা করা বা ঘরের বাইরে বের হওয়া একেবারেই অসম্ভব কাজ আলিয়ার জন্য। বেড়াল অনেকেই ভালোবাসেন। অনেকেই আদর করে বেড়াল পোষেন। কিন্তু এই শান্ত প্রাণীকেই ভীষণ ভয় পান বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। আশেপাশে কোথাও বেড়ালের আওয়াজ শুনলেই আতঙ্ক শুরু হয়ে যায় দাপুটে এই অভিনেত্রীর। আলিয়ার স্বামী, অভিনেতা রণবীর কাপুর আবার ভয় পান আরশোলা আর মাকড়শাকে। সেটের কোথাও এই ছোট্ট প্রাণীদের দেখলেই ভয়ে একদম কুপোকাত তিনি! ‘রব নে বনা দে জোড়ি’ ছবিতে অনুষ্কা শর্মাকে বাইক চালাতে দেখা গেলেও বাস্তবে বাইকে চড়তে একদমই পছন্দ করেন না এই অভিনেত্রী। বাইকে চড়তে রীতিমতো ভয়ই পান তিনি।
ভয়ের খাতায় নাম রয়েছে বলিউড বাদশা শাহরুখ খানেরও। তবে তাঁর ভয় ঘোড়াকে। ভাবছেন সিনেমার দৃশ্যে তবে কী করে ঘোড়ায় চড়েন? সে প্রশ্নের উত্তর তিনি ও তাঁর পরিচালকরাই ভালো দিতে পারবেন। অর্জুন কাপুর আবার কোনও প্রাণী বা মানুষকে ভয় পান না, ভয় পান সিলিং ফ্যানকে! আর এই কারণে বাড়িতেও কোনও সিলিং ফ্যান নেই! দীপিকা পাড়ুকোন সাপকে ভীষণ ভয় পান। সাপ নিয়ে এতই আতঙ্কিত যে মাঝে মাঝে রজ্জুতে সর্পভ্রম হয় তাঁর! আবার দেখুন, প্রজাপতি প্রায় সবাই আমরা ভালোবাসি। অথচ এই ছোট্ট প্রাণীকেই ভয় পান সেলিনা জেটলি। প্রজাপতি দেখলেই অস্বস্তিবোধ হয় এই অভিনেত্রীর। তবে আরও অনেকের মতোই অজয় দেবগণ ভয় পান উচ্চতাকে। আর তাই কোনও উঁচু স্থানে একা একা উঠতে একদমই নারাজ তিনি।
পর্দায় যদিও এই তারকারা সবাই ভীষণ সাহসী। নানা স্টান্ট ও ভেলকিতে ভুলিয়ে রাখেন আমাদের। নিজেদের অভিনয়, চরিত্র দিয়ে মুগ্ধ করেন পর্দার সামনের মানুষদের। তাহলেই বুঝুন পেশার কারণে ভয়কে সঙ্গে নিয়েই আমার-আপনার মতোই দিন গুজরান করেন তাঁরা।
ভয়ের উত্তর আছে?
ফোবিয়া সারে না। সারানোর চেষ্টা করলে তা মনের উপর বাড়তি চাপ ফেলে। তবে ফোবিয়া একটু আধটু জয় করা যায় বটে, কিন্তু পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব। অন্তত দেশ-বিদেশের গবেষণা তা-ই বলছে।
তবে এই ভয় থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে হলে আমাদের নিজেদেরই সে সাহস অর্জন করতে হবে। আমাদের মধ্যে থাকা ভয়কে আমরাই একমাত্র দূর করতে পারি। নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে পারলে ভয়কে কিছুটা জয় করা সম্ভব। বিভিন্ন মনোবিদ এই ভয়কে জয় করার নানা তত্ত্ব নানা সময়ে জানিয়েছেন। রইল তাদেরই কিছু হদিশ।
অনেক বেশি যুক্তিনির্ভর হয়ে উঠুন। যা আপনার সামনে আসবে তাকে যুক্তি দিয়ে বিচার করুন।
সোশ্যাল সাইট কিংবা টিভিতে খুন, জখম, রক্তপাত, অপহরণের ছবি দেখা থেকে বিরত থাকুন।
এমন একজনের সঙ্গে মনের কথা ভাগ করে নিন, যাঁর থেকে যুক্তিসম্পন্ন প্রতিক্রিয়া পাবেন। এমন কারও সঙ্গে নিজের কথা ভাগ করবেন না, যিনি আপনার উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবেন।
নিজের যুক্তিতে স্থির থাকুন। কোনও দলে ভেসে গিয়ে নিজের যুক্তি নষ্ট করবেন না। আপনাকে কেউ চালনা করবে এমন সুযোগ করে দেবেন না। নিজের মাথা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সকলের সঙ্গে মেলামেশা করুন।
তবে এই সকল তত্ত্ব দিয়ে জন্ম থেকে অর্জিত অজানা ভয়কে জয় করা পুরোপুরি সম্ভব হয়তো নয়, কিন্তু আসন্ন দীপান্বিতা কালীপুজোর ক্ষণে মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা নানা দ্বন্দ্ব ও কালোকে জয় করে সেখানে আলোর ঝালর ঝুলিয়ে দেওয়া কিন্তু খুব কঠিন নয়। তাই দ্বন্দ্বের কালো, যুক্তির দৈন্য ও অমূলক ভয়ের বিসর্জন দিন প্রকৃতিস্বরূপিণী দেবীর চরণে। দীপাবলি হয়ে উঠুক যুক্তির আলোয় উদ্ভাসিত এক শৌর্যের উৎসব।
কালীপদ চক্রবর্তী
ঋণ: নানা সাক্ষাৎকার ও মনোবিদ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থ।
ছবি: সুব্রত মাজী