পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
এদিন শুনানির শুরুতেই অভিযুক্তদের আইনজীবী সেলিম রহমান সওয়ালে বলেন, বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে নিয়েছে। ফলে এই মামলা চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। তাছাড়া, চলতি মাসের ২৫ জানুয়ারি এই বণিক পরিবারের একমাত্র মেয়ের বিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক কারণে তাঁর মক্কেলদের জামিন দেওয়া হোক।
দৈনন্দিন সব মামলার শুনানি শেষে বিকেলের দিকে আদালতকক্ষ তখন কিছুটা ফাঁকা। কে জানত যে, তখনও আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে! ওই সময় মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় নির্যাতিতাকে কাঠগড়ায় ডেকে পাঠান। চুলে মানানসই হালকা ‘হাইলাইট’। পরনে অফ হোয়াইট কুর্তি। অত্যন্ত সপ্রতিভভাবে নির্যাতিতা কাঠগড়ায় উঠে বললেন, আমাদের মধ্যে আপস মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। আমরা মিউচুয়াল ডিভোর্স নেব। তাই স্বামী ও ভাশুরকে জামিন দেওয়া হোক। তাছাড়া ২৫ জানুয়ারি বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমি হলফনামায় বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁর এই ভোল বদলে বিস্মিত গোটা আদালত।
এরপরই বিচারক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ৩৭৬ (ধর্ষণ) এবং ৩৭৭ (বিকৃত যৌনাচার) ধারায় আপনি যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুতর। সমাজে এর মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। ফলে আদালত এভাবে জামিন দিতে পারে না। তাছাড়া এটি এই আদালতের এক্তিয়ার বহির্ভূতও বটে। সবশেষে বিচারক সেই জামিনের আর্জি খারিজ করে দুই অভিযুক্তকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ প্রিজন ভ্যানে করে কড়েয়া থানার পুলিস ‘বউ বদল ও ধর্ষণ কাণ্ডে’ দুই অভিযুক্ত নীলাঞ্জন সেন (ভাশুর) এবং সুরঞ্জন সেনকে (স্বামী) আদালতে নিয়ে আসে। আদালত সূত্রের খবর, এদিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা দেননি। এনিয়ে ওই মহিলার আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষ কেন আপস মীমাংসায় গেল? প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিসের এক সূত্র জানাচ্ছে, সেন পরিবারের হাতে যেমন নির্যাতিতার কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ও ছবি রয়েছে, তেমনই নির্যাতিতার পরিবারের হাতেও ওই পরিবারের ‘বউ বদল’ সংক্রান্ত ফোনালাপের রেকর্ডিং রয়েছে। যা ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিসের হাতে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে দায়রা কোর্টে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে উভয় পরিবারের সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দুই পরিবারের সন্ধি ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে কোন পথে সন্ধি এল, তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খুলতে চায়নি।