শারজা, ১৫ জানুয়ারি: এএফসি এশিয়ান কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও ভারতের পারফরম্যান্স বাকিদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। সোমবার এই মন্তব্য করেন বিদায়ী কোচ স্টিভন কনস্টানটাইন। গ্রুপ-এ’র শেষ ম্যাচে বাহরিনের কাছে হারের পর তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতার রাউন্ড অব সিক্সটিনে উঠতে পারলাম না। একে দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কীই-বা বলা যায়। ৯১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল হজম করতে হল আমাদের। তবে ভারতের পারফরম্যান্স ফেলে দেওয়ার মতো নয়। গ্রুপের তিনটি ম্যাচে সুনীল ছেত্রী-সন্দেশ ঝিংগানরা লড়াকু ফুটবল খেলেছে। ভারতীয় ফুটবলের সম্মান ওরা বাড়িয়েছে। থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয় দিয়ে আমরা প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলাম। পরের ম্যাচে শক্তিশালী ইউএই’র কাছে হারলেও প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে খেলেছি আমরা। প্রতিযোগিতার আরম্ভ হওয়ার আগে কেউ ভাবেননি, আমরা রাউন্ড অব সিক্সটিনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারব। এখন অবশ্য তাঁদের অনেকের মুখেই ফুটবলারদের প্রশংসা শুনছি।’
বাহরিনের কাছে হারের পর পদত্যাগ করেন ভারতের কোচ স্টিভন কনস্টানটাইন। তাঁর সঙ্গে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের চুক্তি ছিল ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তথ্যাভিজ্ঞমহলের ধারণা, প্রণয় হালদার-উদান্তা সিংরা এশিয়ান কাপের রাউন্ড অব সিক্সটিনে উন্নীত হলে কনস্টানটাইনের চুক্তির মেয়াদ বাড়ত। সোমবার ম্যাচের পর আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে অশ্রুসিক্ত ব্রিটিশ কোচ বলেন, ‘আজ আমার স্ত্রী’র জন্মদিন। ভারতকে পরবর্তী রাউন্ডে তুলতে পারলে সেটাই হত ওর জন্য সেরা উপহার। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই চেষ্টা করেছিল। অল্পের জন্য লক্ষ্যপূরণ হল না আমাদের। এবার পরিবারের জন্য সময় দিতে হবে। গত ছ’বছর বাড়ি যাইনি। তিন মেয়ের সঙ্গে দেখা হত তিন-চার মাস অন্তর। এটাই আমার জীবন। কিছু পেতে গেলে কিছু তো দিতেই হবে। দ্বিতীয়বার ভারতের দায়িত্ব নেওয়ার সময় লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপে প্রতিনিধিত্ব করা। তা অবশ্য সফল হয়েছে। আমার প্রশিক্ষণেই ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯৭ তম স্থানে পৌঁছেছে সুনীলরা। এর নেপথ্যে শুধু কোচ নয়, ফুটবলার এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের অবদান রয়েছে। বিদায় লগ্নে প্রত্যেকের জন্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা। গত কয়েক বছরে ভারতীয় সমর্থকদের সহযোগিতাও আমাদের ভালো খেলতে সাহায্য করেছে। আশা করব, আগামী দিনে এশিয়ান ফুটবলের মানচিত্রে ভারত অবস্থান আরও মজবুত করবে।’ স্টিভন কনস্টানটাইনের পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে এআইএফএফ। সংস্থার সচিব কুশল দাস বলেছেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমরা কোচের থেকে পদত্যাগপত্র পাইনি। তবে ওঁর ইচ্ছাকে সম্মান জানাচ্ছি। ভারতীয় ফুটবলে স্টিভন কনস্টানটাইনের অবদান অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।’
বাহরিনের বিরুদ্ধে ড্রয়ের মানসিকতা নিয়ে খেলতে নেমেই ডুবল ভারত। ম্যাচের পর এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের সঙ্গে অবশ্য একমত নন স্টিভন। তাঁর বক্তব্য, ‘অনেকেই এখন অনেক কথা বলবেন। তবে আমরা মোটেই ড্রয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামিনি। ম্যাচের প্রারম্ভিক পর্ব থেকে গোল তুলে নেওয়ার জন্য বাহরিন আক্রমণাত্মক খেলেছে। প্রচণ্ড গতিতে একের পর এক আক্রমণ সামলাতে হয়েছে ঝিংগানদের। দলের অভিজ্ঞতা বেশি হলে এই পরিস্থিতি হয়তো হত না। ক্রমাগত রক্ষণ সামলানোর কারণে আমাদের পিছু হটতে হয়েছে। বাহরিন গোল পাওয়ার জন্য ছ’জনকে আপফ্রন্টে ব্যবহার করেছে। ৯১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল হজম না করলে আমরাই পরবর্তী রাউন্ডে পৌঁছাতাম।’