যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
যে দর্শক ‘সাসভি কভি বহু থি’, ‘ঘর ঘর কি কাহানি’ কিংবা ‘পটলকুমার গানওয়ালার’ মতো সিরিয়ালের গুণমুগ্ধ তাঁদের জীবন নিয়ে এতকিছু ভাবার অবকাশ নেই এবং সেটা বোধহয় আশা করাটাও ভুল। কিন্তু শুভঙ্কর আর সীমার আছে সেই সূক্ষ্মতাবোধ। নিজের অতীতকে পর্যালোচনা করার ইচ্ছে। ওরা ভাবছে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে বা বর্তমানের ভুলত্রুটি নিয়ে। এই নিয়েই ব্রাত্য বসুর নতুন নাটক ‘ভয়’। যেটি প্রযোজনা করেছে ‘থিয়েলাইট’।
সুন্দর ঝকঝকে চেহারার অল্পবয়সী দম্পতি সীমা আর শুভঙ্কর। শুভঙ্কর ব্যাঙ্কে আর সীমা একটি বড় কর্পোরেট অফিসে চাকরি করে। অর্থনৈতিক প্রাচুর্যতায় ভালোই চলছিল জীবনটা। কিন্তু সব জট পাকিয়ে গেল সারান্ডার একটি নির্জন রিসর্টে ছুটি কাটাতে গিয়ে। গল্পের শুরু এখান থেকেই।
সারান্ডার গভীর জঙ্গলে প্রায় নির্জন রিসর্টে তারা ভূত দেখতে শুরু করল। ভূত, মানে অতীত। যে অতীতকে পিছনে ফেলে তারা পালাতে চেয়েছিল একদিন। সেই অতীত এসে হাজির হয় তাদের পিছনে। ভূত এসে জবাবদিহি চায়। জানতে চায়, কেন কলেজ জীবনে আগুনখোর ছাত্রনেতা শুভঙ্কর কেন রাজনীতি ছেড়ে, প্রেমিকাকে ছেড়ে কেরিয়াকেই গুরুত্ব দিল? শুভঙ্কর তো অনেক স্বপ্ন দেখেছিল সমাজবদলের। একটি প্রেমও ছিল তার জীবনে। সারান্ডার গভীর জঙ্গলে বসে তাকে কুড়ে কুড়ে খায় নানান প্রশ্ন। সে কি পালিয়েছিল রাজনীতির ময়দান থেকে? কাকে ঠকালো সে? আদর্শকে! প্রেমকে! না কি নিজেকে? ওদিকে সীমার প্রায় একই অবস্থা। ঘরে সুদর্শন রোজগেরে স্বামী থাকতেও অফিসের বসের সঙ্গে নিয়মিত ক্লাব, পার্টি কিংবা সিনেমায় যাওয়া। কিছু সুখের মুহূর্ত কাটানো পরপুরুষের সঙ্গে। সেও কি আদতে ঠিক করছে? কীসের অভাব তার? আজ সারান্ডার গভীর জঙ্গলে নিঃস্তব্ধতা তাকে ঠেলে দিয়েছে এইসব প্রশ্নের মুখে। একজন মহিলা এবং তার রক্ষক (আজকের আধুনিক যুগে যাকে মেন্টর বলা হয়) এই দুটি কাল্পনিক চরিত্রে মধ্যে দিয়ে নাটককার এইসব বাস্তব প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন শুভঙ্কর এবং সীমাকে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও। হয়তো বা নিজেকেও! এই নাটকে অনেকগুলি পরত রয়েছে। একবগ্গা সরলরৈখিক নাটক নয় ‘ভয়’।
তবে শুভঙ্করের চরিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, মানে সে যে একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল সেটা বোঝাবার জন্য কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে অহেতুক গালিগালাজ না করলেও চলত। এ নাটকে বেশ কতকগুলি বিভাগ নাটকটির মান উজ্জ্বল করেছে। যেমন পৃথীশ্ব রাণার অসাধারণ মঞ্চ পরিকল্পনা, তারই সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করে সুদীপ সান্যালের আলোক পরিকল্পনা। ঠিক যেন কৃশানু-বিকাশ জুটি। আবহসঙ্গীত যথেষ্টই ভালো। অভিনয়ে কমবেশি সবাই নিজের জায়গায় ঠিকঠাক। বিশেষভাবে নজর কাড়ে আগন্তুক ব্যক্তির ভূমিকায় অশোক মজুমদার। আর অভিনয়ের কথা যখন আলোচনাই হচ্ছে তখন একটি নাম উল্লেখ না করলে এই প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শুভঙ্করের ভূমিকায় সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, একজন পরিপক্ক অভিনেতার ভূমিকা পালন করলেন মঞ্চে। মঞ্চ অভিনয়ের মাপকাঠিকে বজায় রেখে আপন শৈলীতে শুভঙ্কর হয়ে উঠতে সক্ষম হলেন সন্দীপন। সন্দীপনের কাছ থেকে আরও ভালো অভিনয় দেখার প্রত্যাশায় রইল বাংলার দর্শক। নাটকের শেষ দৃশ্যে তিন ভাবনার তিনজন শুভঙ্করকে হাজির করে আধুনিক নির্মাণের পরিচয় দিলেন নির্দেশক অতনু সরকার। থিয়েলাইটের নবতম প্রযোজনা ‘ভয়’ নাটকটির যাত্রাপথ সুগম হোক।
নাটক: ভয়
প্রযোজনা: থিয়েলাইট
পরিচালনা: অতনু সরকার
শুভঙ্কর গুহ