নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মোবাইল ফোন হোক বা ল্যান্ডলাইন— টেলিকম পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে ১২ নম্বর স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। দেশজুড়ে ফোন ব্যবহার করার গড় হারের চেয়ে খানিকটা পিছিয়েই আছে পশ্চিমবঙ্গ। এখানে টেলিকম পরিষেবা গ্রহণ করার হার ৮৯.১৬ শতাংশ। দেশের গড় হার ৯১.২১ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সারাদেশে শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। সেখানে পরিষেবা নিয়েছেন ২৩৫.৬৮ শতাংশ গ্রাহক। অর্থাৎ সেখানে এক ব্যক্তির একাধিক ফোন ব্যবহার করার হার সবচেয়ে বেশি। গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে গ্রাহকরা যে টেলিকম পরিষেবা নিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই তথ্য প্রকাশ করেছে দেশের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ট্রাই।
ফোন ব্যবহারের পরিসংখ্যানে দিল্লির ধারেকাছে আসতে পারেনি কোনও রাজ্য, বলছে ট্রাই। টেলিকম পরিষেবায় দিল্লির পরেই আছে হিমাচল প্রদেশ। সেখানে টেলি ঘনত্বের হার ১৪৫.৯৫। এর পর আছে পাঞ্জাব, কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা। এরপর রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। তারপর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ট্রাই জানাচ্ছে, এই রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সিকিমও। পশ্চিমবঙ্গের পরে রয়েছে রাজস্থান। তারপর ঠাঁই পেয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। এরপর রয়েছে ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অসম এবং বিহার।
এ তো গেল রাজ্যগুলির অবস্থা। গোটা দেশে কত ফোন পরিষেবা আছে? ট্রাইয়ের হিসেব বলছে, নভেম্বর পর্যন্ত এখানে মোট ফোনের সংখ্যা প্রায় ১১৯ কোটি ৩৭ লক্ষ। এর মধ্যে মূলত মোবাইল ফোন রয়েছে প্রায় ১১৭ কোটি ১৭ লক্ষ। বাকিটা ওয়্যারলাইন বা ল্যান্ডলাইনের দখলে। দেশে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৫১ কোটি ১৯ লক্ষ। এর মধ্যে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের দিকেই পাল্লা ভারী অনেকটাই। সেই গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪৯ কোটি ৩৮ লক্ষ। সংশ্লিষ্ট মহলের মত, যেভাবে ব্রডব্যান্ড ব্যবহার দেশজুড়ে বাড়ছে, বৃদ্ধিতে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এঁটে উঠতে পারছে না মোবাইল সংযোগও।
টাওয়ার বা অন্য কোনও কারণে সিগন্যালের সমস্যা থাকায় বহু গ্রাহক বদলে ফেলছেন তাঁদের মোবাইল পরিষেবা সংস্থা। নম্বর একই রেখে, পোর্ট করিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। পোর্টেবিলিটির সেই তালিকাতেও পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গ। টেলিকম সংস্থাগুলি পশ্চিমবঙ্গকে দু’টি সার্কেলে ভাগ করে পরিষেবা দেয়। একটি কলকাতা, অপরটি বেঙ্গল সার্কেল। কলকাতা সার্কেলে গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯৯ লক্ষ ৪০ হাজার নম্বরে মোবাইল সংস্থা বদলে ফেলেছেন গ্রাহক। বেঙ্গল সার্কেলে সেই সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৭ লক্ষ। গোটা দেশে গত নভেম্বর পর্যন্ত মোবাইল নম্বর পোর্ট করিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৪০ কোটি ৭২ লক্ষ। ট্রাইয়ের এক কর্তার কথায়, গোটা দেশে গ্রাহকরা নিজেদের টেলিকম সংস্থার পরিষেবা নিয়ে কতটা বিরক্ত এবং বিচলিত, এই পরিসংখ্যান দেখলেই তা বোঝা যায়। শুধু নভেম্বর মাসেই দেশে প্রায় ৩২ লক্ষ ৪০ হাজার গ্রাহক তাঁদের সংস্থা বদলে ফেলেছেন। কথা বলার সময় সিগন্যাল না পাওয়া বা ডেটার স্পিড নিয়ে অভিযোগ যেমন আছে, তেমনই যোগ হয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলির তরফে কম পয়সায় পরিষেবা দেওয়ার প্রতিযোগিতা। তবে নভেম্বর থেকে একাধিক বেসরকারি মোবাইল সংস্থা যেভাবে প্রতি মাসে ন্যূনতম টাকা না ভরলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নিয়ম এনেছে, তাতে মোবাইল পোর্টেবিলিটির হার আরও খানিকটা বাড়বে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।