নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেলা তখন সাড়ে ১২টা। কবি সুভাষ থেকে দমদমগামী মেট্রোতে উঠেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ৪০-৫০ জন সমর্থক। তাঁরা তখনই ফোন করেছিলেন সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া পরিচিতদের। ফোন করেই বুঝেছিলেন, সমাবেশস্থল কার্যত ভরে গিয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি মিছিল আসছে। তখনই প্রচুর লোক ঢুকতে না পেরে রাস্তায় বসে পড়েছেন অথবা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের পক্ষে আর সমাবেশে ঢোকা সম্ভব নয় বুঝে নেমে পড়লেন কালীঘাটে। বলতে শোনা গেল, যখন নেত্রীর কাছে পৌঁছতেই পারব না, তাহলে আর গিয়ে কী লাভ! তাই কালীঘাটে গিয়ে মা’কেই দেখে আসি। অন্য একজন বলেই ফেললেন, কালীঘাটে যখন যাওয়া হচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি একবার দেখব না, এটা হয় নাকি?
শুধু এঁরাই নন, সমাবেশে আগত হাজার হাজার সমর্থককে মাঝপথে এদিন এভাবেই ফিরতে হয়েছে। কেউ ফিরলেন বাড়িতে, কেউ কেউ আবার ভিক্টোরিয়া অথবা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে চলে গেলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া হিসেবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এদিন সেখানে গিয়েছিলেন। শনিবার সকাল থেকে শহর ও শহরতলি, প্রত্যেকটি জায়গা থেকে মিছিলের অভিমুখ ছিল ব্রিগেডের দিকে। ফলে মিছিলে আসা শাসকদলের কর্মী-সমর্থক এবং গাড়ির দখলে চলে যায় সমাবেশস্থলের আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাঠে ঢুকে অনেকে ‘বুড়িছোঁয়া’ করে বেরিয়ে যেতে শুরু করেছিলেন। যেকারণে পিছনে পড়ে যাওয়া অনেক মিছিল বা গাড়িতে আসা সমর্থকরা আর প্রবেশ করতে পারেননি সভাস্থলে। শহরের মাঝপথে বা সভাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন মাঠে রাখা এলইডি স্ক্রিনে তাঁদের প্রিয় নেত্রী এবং বাকি নেতাদের বক্তব্য দেখেই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হল।
শাসকদলের এক নেতার কথায়, সকাল থেকেই লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক এসেছেন। তাঁদের অনেকেই বাসে করে এসেছেন। সেগুলিকে পার্কিং করার রাস্তা কার্যত আটকে গিয়েছে। আগেই বলা হয়েছিল, এবারের সমাবেশ ঐতিহাসিক হবে। কর্মীদের বাড়ি থেকে ভোরের দিকে বেরতেও আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা অনেকেই করেননি। ফলে তাঁরা মাঝপথেই আটকে পড়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার দুর্গানগর থেকে আসা বহু সমর্থককে মোহরকুঞ্জের সামনে বসে থাকতে দেখা গেল। তাঁদের দাবি, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে রাস্তা যানজটে আটকে। মিছিলের পা এগচ্ছে অত্যন্ত দেরিতে। তাহলে সমাবেশে ঢুকবে কীভাবে? তাঁদের থেকে কিছুটা দূরেই বসেছিলেন উলুবেড়িয়া থেকে আসা জনা সাত-আটেক। তাঁরাও বললেন, সমাবেশে ঢুকতে পারব ভেবেছিলাম। তা না হওয়ায় চিড়িয়াখানা ও গঙ্গার পাড় ঘুরে এলাম। কালীঘাটে আমাদের দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বাড়ি একবার দেখে আসব ভাবছি। দেখি হয় কি না।
উত্তর এবং মধ্য কলকাতার দিক থেকে আসা বেশ কয়েকটি মিছিলকেও দেখা গেল পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেডের সামনে পুলিসকে দাঁড় করিয়ে দিতে। কারণ, ততক্ষণে সমাবেশস্থলের একেবারে পিছনের দিক মানুষের ভিড়ে ঠাসা। এই হাজার হাজার মানুষকে তখন জায়গা দেবে কোথায়? এক পুলিসকর্তা বললেন, প্রায় আড়াইটে-তিনটে নাগাদ সভাস্থল কিছুটা ফাঁকা হতেই ওই মিছিলকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।