কর্মক্ষেত্রে অশান্তির সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কার শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার: ... বিশদ
এবং সেটা যে প্রত্যাশিতই ছিল তা কংগ্রেস সভাপতি রাহুল কেন সাধারণ জনতাও মানেন। তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র্যালিকে রাহুল গান্ধী ওইভাবে সমর্থন জানালেন—সে তো অমনি অমনি নয়! যেভাবে শনিবার সারা দেশের তাবড় বিরোধী নেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং জননেত্রী মমতাকে সামনে রেখে মোদিরাজ খতমের ডাক দিয়েছেন তাতে আসন্ন লোকসভা যুদ্ধের রাশ ও সেনাপতিত্ব কার হাতে থাকছে সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন রাহুলজি যদি গোঁ ধরে তাঁর ইউপিএ শরিকদের নিয়ে আলাদা লড়তে চলতেন, তবে সেটা যে রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হতো না—সেটা বলাই বাহুল্য। রাহুল গান্ধীও নিশ্চয়ই সেটা বুঝেছেন। আর তাই মমতার ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র্যালিকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করে চিঠি লিখে ও সমাবেশে দলীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে রাজনৈতিক দিক থেকে সময়োচিত কাজটি করেছেন।
একমাত্র ব্যতিক্রম সিপিএম সমেত বামেরা। তাঁরা মমতার সমাবেশের ধারপাশ দিয়ে যাননি। গোটা দেশের মোদি-বিরোধী শিবির যখন মমতার নেতৃত্বে এককাট্টা, লোকসভা মহাযুদ্ধে পদ্মদলের সুপ্রিমোকে পরাস্ত করার জন্য তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার নেতৃত্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনও এ রাজ্যের সিপিএম মমতা-মোদি আঁতাঁতের উদ্ভট তত্ত্ব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে আর জল মাপছে! মোদি-বিরোধী লড়াইতে ইতিমধ্যেই সিপিআই রাহুল গান্ধীর হাত ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, সিপিএম এখনও মনে হচ্ছে দোলাচলে—রাহুল গান্ধী, না এই মহাজোট—কোনদিকে যাবে স্থির করে উঠতে পারছে না! তবে, শনিবারের ব্রিগেড জনসমুদ্র এবং তারকাখচিত মঞ্চে জননেত্রী মমতার উজ্জ্বল উপস্থিতি ও একচ্ছত্রতা দেখে তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন—হাওয়া কোন দিকে বইতে শুরু করেছে। কিন্তু, সেই কঠিন সত্যিটা কি মুখে মানা যায়! ২০১১ সালের ক্ষতটা যে এখনও দগদগে।
তার ওপর এত গালি এত ব্যঙ্গবিদ্রুপ এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য সত্ত্বেও সিপিএম দেখছে, আসমুদ্রহিমাচল এই বাংলা এখনও মমতায় মুগ্ধ, মমতায় মগ্ন। জাতীয় স্তরেও এই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে বহুদিন। আর যত দিন যাচ্ছে তার ব্যাপ্তি ও গভীরতা যেন বেড়েই চলেছে। এবং যেভাবে বাড়ছে তাতে দেশের প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নটা বাস্তবায়িত হওয়াটাকেও যেন আজ আর তেমন অসম্ভব বলে বোধ হচ্ছে না! পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে কি আমবাঙালির দরবারে ওই স্বপ্ন নিয়ে চর্চাটাও তাই যেন দ্রুত বর্ধমান! এমন পরিস্থিতিতে সিপিএমের মতো একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপের পক্ষে কি মমতার মতো রাজনৈতিক শত্রুকে নেত্রী বলে মানা সম্ভব! সে ঔদার্য সেই বিচক্ষণতা দেখানোর ক্ষমতা কি আজ আর বাম শিবিরে অবশিষ্ট আছে! অতএব যা হওয়ার তাই হয়েছে—দূর থেকে তৃণমূল নেত্রীকে গালি পেড়েই ক্ষান্ত থেকেছে সিপিএম ও তার বন্ধুরা, শনিবারের সমাবেশের ধারকাছে ঘেঁষেনি। কিন্তু, মমতার মহাসমাবেশ নিয়ে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামেদের এহেন আচরণকে রাজনৈতিক তথ্যভিজ্ঞজনেদের অনেকেই সুবুদ্ধি সুচিন্তার পরিচয় বলে মনে করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে রাজ্য-রাজনীতিতে তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও বামেরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে, প্রাসঙ্গিকতা হারাবে।
কেননা, সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে গোটা দেশের বিরোধী শিবিরের নানা মহলের নেতানেত্রীরা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, মোদিরাজ উৎখাতের রাজনৈতিক যুদ্ধে আজ মমতার সমকক্ষ প্রধান সেনাপতি মেলা ভার। মহাজোটের অনেকেই রাজনৈতিক যুদ্ধে বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, দক্ষ কিন্তু লড়াকু মমতা অনন্য, অদ্বিতীয়। একক প্রচেষ্টায় টানা ৩৪ বছরের লাল দুর্গ ধূলিসাৎ করে যিনি সিপিএমের মতো ধুরন্ধর পার্টিকে লিলিপুটে পরিণত করতে পারেন এবং মাত্র ক’টা বছরে একটা রুগ্ন বিবর্ণ রাজ্যকে এমন উজ্জ্বল বিশ্ববাংলায় রূপান্তরিত করতে পারেন তাঁর রাজনৈতিক প্রশাসনিক যোগ্যতা দক্ষতা প্রশ্নাতীত। লোকসভা যুদ্ধে এবার তাই বিরোধী শিবিরে জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর চেয়েও প্রকট হয়ে উঠেছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার মুখ। মহাজোটের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা ভোটফল প্রকাশের পর ঠিক হবে বলে রাহুল গান্ধী ঘোষণা করলেও বিরোধী শিবিরের সকলেই বুঝতে পারছেন পরিবেশ অনুকূল হলে সেক্ষেত্রে মমতার নামটিই সবার আগে উঠে আসবে।
কেননা, এই মুহূর্তে ধারে-ভারে, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে এবং রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কর্মকুশলতায় রাজ্যে তো বটেই, জাতীয় স্তরেও মমতার বিকল্প নেই। তাঁর মা-মাটি-মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ স্বচ্ছ-সৎ পরিশ্রমী ভাবমূর্তিও তুলনারহিত। রাজ্যবাসী থেকে বাদবাকি দেশজনতা—সকলের কাছেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আজ অপ্রতিরোধ্য। সুতরাং, তিনিই যে প্রথম পছন্দ হবেন তাতে সন্দেহ কি? অন্যদিকে, গত চার-সাড়ে চার বছরের গেরুয়ারাজে তিনি বা তাঁর সরকার যা-ই করুন, দেশের মানুষ যত রুষ্টই হোন তাঁর প্রতি—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো অমন বলিষ্ঠ কৌশলী সুবক্তা রাজনীতিককে ভোটযুদ্ধের ময়দানে ধরাশায়ী করা যে সহজ কাজ নয় সেটা বিরোধী শিবিরে সকলেই বোঝেন। সেক্ষেত্রে আর পাঁচজনের থেকে মমতার নেতৃত্ব যে অনেক অনেক বেশি কার্যকরী হবে সেটাও বোঝেন। এহেন মমতা বা তাঁর নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে উপেক্ষা করে বামেরা যাবেন কোথায়?
সে যেখানে যেতে চান যান, আমাদের বলার কী আছে? আমরা কেবল ব্রিগেডের মহাসমাবেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বর্তমান রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান ও গুরুত্বটা বোঝার চেষ্টা করলাম। সেটা সিপিএম কংগ্রেস কে কতটা মানবে, না মানবে তাদের ব্যাপার।
কিন্তু প্রশ্ন হল, শনিবারের ব্রিগেড ও মমতার মহাজোটের ঐক্যবদ্ধ আহ্বান কি মোদিজির চিন্তা আর এক প্রস্থ বাড়িয়ে দিল? বাড়িয়ে দিলেও সেটা অস্বাভাবিক নয়। এমনিতেই রাফাল থেকে নীরব-চোকসি-মালিয়া থেকে মূল্যবৃদ্ধি নোটবন্দি থেকে সিবিআই-আরবিআই নিয়ে জেরবার প্রধানমন্ত্রী। তার ওপর তাঁর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ সোয়াইন ফ্লুর দাপটে হাসপাতালে, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি চিকিৎসা করাতে বিদেশে! এবং যতদূর শুনেছি, আরও কে কে যেন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। সব মিলিয়ে বলাই যায়, ২০১৯ লোকসভা মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে রাজনৈতিক বিরোধীদের আক্রমণের পাশাপাশি রোগভোগের জ্বালাও সামলাতে হচ্ছে পদ্মশিবিরের মহানেতা মোদিজিকে। তার ওপর মহামান্য আদালতের নির্দেশে এই বঙ্গে বিজেপি’র রথযাত্রাও রদ হল। মুখ পুড়ল বঙ্গ বিজেপি’র এবং যতদূর খবর তাই নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপের তরজা শুরু হয়েছে গেরুয়াদলের অন্দরমহলে! এমন অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দেশের তাবড় বিরোধী নেতাকে এক মঞ্চে, এক ছাতার তলায় এনে দাঁড় করালেন এবং বিপুল জনজোয়ারের তুমুল উচ্ছ্বাসে ভেসে শনিবারের ব্রিগেড থেকে একযোগে মোদি জমানা খতম
করে নতুন ঐক্যবদ্ধ জনদরদি ভারত গড়ার ডাক দিলেন—তাতে ২০১৯ ভোটযুদ্ধের রাজনৈতিক পারদ তো চড়লই, মোদিজির চিন্তাও কি একটু
বাড়ল না! কী মনে হয়?