সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: চা গাছে ফার্স্ট ফ্লাশের পাতা আসতে শুরু করেছে। কিন্তু মন ভালো নেই বাগান মালিকদের। গাছে সদ্য আসা ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’ ফেলে দিয়ে নষ্ট করে দিতে হচ্ছে। কারণ পাতা তোলার ব্যাপারে টি বোর্ডের নয়া নির্দেশিকা মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। যদিও বুধবারই টি বোর্ড নির্দেশিকা জারি করেছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পাতা তোলা ও কারখানা খোলা যাবে। সেই নির্দেশিকা হাতে পেলেও দিনটি এগিয়ে আনলে ভালো হয় বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা।  এদিকে, টি বোর্ডের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চা পাতা তোলার নির্দেশিকার ঘটনায় সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার সফরে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, বাংলাকে বঞ্চনা করতে টি বোর্ড এমন ফতোয়া জারি করে। ২২ জানুয়ারি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। অবশেষে বুধবার টি বোর্ড ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চা পাতা তোলা যাবে বলে নির্দেশিকা জারি করল। কিন্তু ততদিনে গাছে ফার্স্ট ফ্লাশের আসা প্রচুর পাতা নষ্ট করে ফেলতে হবে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (টাই) উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, উপায় নেই। ফার্স্ট ফ্লাশের আসা পাতা এখন নষ্ট করে দিতে হচ্ছে। মরশুমের শুরুতেই বাগান মালিকরা ক্ষতির মুখে। নির্দেশিকা পেলাম টি বোর্ড ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পাতা তোলার কথা জানিয়েছে। 
চা গবেষক তথা ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স ব্রাঞ্চের মুখপাত্র রামঅবতার শর্মা বলেন, পাতা তোলা আরও কিছুদিন এগিয়ে আনা হলে ভালো হতো। এটা বড্ড দেরি। কারণ ফার্স্ট ফ্লাশের আসা প্রচুর চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। তবে টি বোর্ডের কাছে আমাদের আবেদন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে উত্তরবঙ্গে এ বছর যেন ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাতা তোলার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। 
২০২৩ সালে পাতা তোলা শুরু হয়েছিল ২০ ডিসেম্বর থেকে। গতবছর টি বোর্ড নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, ৩০ নভেম্বরের পর আর চা পাতা তোলা যাবে না। পাতা তোলার সময়সীমা অসমের ক্ষেত্রে ঠিক থাকলেও বাংলার চায়ের ক্ষেত্রে একেবারেই প্রযোজ্য ছিল না বলে চা বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত। কারণ আবহাওয়ার তারতম্যের দরুন দার্জিলিং বিশেষ করে তরাই-ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাতা তোলা যায়। কিন্তু টি বোর্ডের ফতোয়ায় গত মরশুমে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাতা তোলা গিয়েছে। তারপর পুরো ডিসেম্বর মাস নষ্ট হয়েছে পাতা। এরপর গাছ ছাঁটা হয়। গত সপ্তাহে বৃষ্টি হতেই চা গাছে ফার্স্ট ফ্লাশের পাতা আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু টি বোর্ডের নিয়মের গেড়োয় সেই পাতা ঘরে তোলা যাচ্ছে না। পাতা তুলে নষ্ট করে দিতে হচ্ছে।