দ্য ক্রুকেড ফরেস্ট
উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে যারা গিয়েছ তারা নিশ্চয়ই পাইন বনের সঙ্গে কম বেশি পরিচিত। লম্বা চিরহরিৎ পাইন গাছগুলো সার দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড় ঘিরে।
উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে যারা গিয়েছ তারা নিশ্চয়ই পাইন বনের সঙ্গে কম বেশি পরিচিত। লম্বা চিরহরিৎ পাইন গাছগুলো সার দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড় ঘিরে। আর সেইসব জঙ্গল ভেদ করে পাহাড় ফাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে আঁকাবাঁকা পথ। যাই হোক, আজ আমরা পথের সন্ধানে যাব না। বরং গল্প বলব পাইন বনের। আমাদের দেশের এই যে পাইন গাছ, এগুলো কিন্তু সবই সোজা লম্বা উঠে গিয়েছে মাটি থেকে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন পাইন বনও আছে যেখানে গাছের গড়ন বাঁকাচোরা।
পোল্যান্ডের পোমেরানিয়া অঞ্চলের পশ্চিমে রয়েছে বাঁকা পাইনের জঙ্গল। সেখানে মোটামুটি চারশো পাইন গাছের ঠিকানা। কিন্তু গাছগুলো সব বাঁকাত্যাড়া হয়ে উঠেছে মাটি থেকে। কারও কাণ্ডই সোজা নয়! মাটি থেকে ইংরেজি অক্ষর ‘C’-এর মতো উঠেছে এই পাইন গাছগুলো। গড়নে বাঁকা হলেও গাছের স্বাস্থ্যে কোনও সমস্যা নেই। মোটামুটি পঞ্চাশ ফুট লম্বা গাছগুলো মাটি থেকে উঠে গিয়েছে। এই জঙ্গল ক্রুকেড ফরেস্ট নামে পরিচিত।
গাছের এই বাঁকা গড়নের পিছনে নানান যুক্তি সাজিয়েছেন ভৌগোলিক থেকে পরিবেশবিদ সকলেই। কেউ বলে মাধ্যাকর্ষণের কারণেই নাকি এই গাছগুলো শিকড় থেকেই বেঁকে গিয়েছে মাটির উপর। কিন্তু তাই যদি হবে তাহলে পরে তা আবার সোজা লম্বা হয়ে আকাশ ছুঁয়ে যাবে কেমন করে? অতএব এই যুক্তি ধোপে টিকল না। কেউ বা বলে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণেই এই গাছের কাণ্ডগুলো বেঁকে গিয়েছিল একেবারে গোড়ায়। কিন্তু তাই যদি হবে তাহলে শুধুমাত্র পাইন গাছের উপরেই তার প্রভাব পড়ল কেন? এই প্রশ্নেরও কোনও সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে বাঁকানো কাণ্ডওয়ালা পাইনের জঙ্গল আজও ঈশ্বরের আজব সৃষ্টি রূপেই বর্ণিত। বুদ্ধি দিয়ে গাছের এমন গড়নের কোনও ব্যাখ্যা মেলে না। ইতিহাসবিদরা অবশ্য বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের ওই অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম রাতারাতি ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও বহুদিন সেখানে আর জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এর অনেক পরে প্রায় ১৯৩০ সাল নাগাদ আবারও লোকে বাড়ি বানিয়ে অঞ্চলটিকে জনবহুল করে তুলতে শুরু করে। ফলে পাইন বনের বেঁকে যাওয়ার কারণ যদি কারও জানাও থাকত তা আর আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। কেবলই প্রাকৃতিক বিস্ময় হয়ে থেকে গিয়েছে পোল্যান্ডের ক্রুকেড ফরেস্ট।
