পাপী বুদ্ধ
শস্ত রাস্তাটা সোজা এগিয়ে গিয়ে মিশেছে মহাবোধী মন্দিরের প্রবেশ তোরণের সামনে উঁচু মতো রাস্তার মোড়ে। মূল মন্দির বা প্রধান মন্দিরে যাওয়ার পথের দু’পাশে আরও কিছু বৌদ্ধ মন্দির বা মঠ আছে।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
মে ৪, ২০২৫
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত: শস্ত রাস্তাটা সোজা এগিয়ে গিয়ে মিশেছে মহাবোধী মন্দিরের প্রবেশ তোরণের সামনে উঁচু মতো রাস্তার মোড়ে। মূল মন্দির বা প্রধান মন্দিরে যাওয়ার পথের দু’পাশে আরও কিছু বৌদ্ধ মন্দির বা মঠ আছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে থাইল্যান্ড, চীন, জাপান ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মঠ। আসলে এ জায়গাটা সারা পৃথিবীর বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। ওই যে আকাশের বুকে মহাবোধী মন্দিরের শীর্ষ দেশ দেখা যাচ্ছে ওই স্থানেই দু’হাজার বছর আগে এক অশ্বত্থ গাছের নীচে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন গৌতমবুদ্ধ। সে সময় এ স্থানের নাম ছিল উরুবিলা। আজ যা বুদ্ধগয়া নামে পরিচিত।
শীতের মেঘ মুক্ত নীল আকাশ। রাস্তায় দেশি-বিদেশি ট্যুরিস্ট, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে দিয়েই মন্দিরের দিকে এগচ্ছিল শাক্য। সঙ্গে আরও দু’জন লোক। তারা দু’জনেই এ অঞ্চলের বাসিন্দা। একজনের নাম রাকেশ যাদব। বয়সে যুবক সে, পরিবেশকর্মী। অপরজন মাঝ বয়সি মানুষ সে। নাম প্রেমানন্দ সিং। তাঁর পরনে কোনও ইউনিফর্ম না থাকলেও তিনি একজন পুলিস অফিসার। শাক্য দলটাকে আরও বাড়াতে পারত, কিন্তু বাড়ায়নি। তাতে তারা অন্যদের চোখে পড়ে যেতে পারে, যাদের সে খুঁজতে যাচ্ছে তারা সতর্ক হয়ে যেতে পারে। শাক্যরা চারপাশে তাকাতে তাকাতে হাঁটছিল। যদি তেমন কিছু চোখে পড়ে যায় সে জন্য। বিশেষত রাকেশ নামের পরিবেশকর্মী যুবকটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল রাস্তার প্রতিটা অংশে। তার জন্যই ভারত সরকারের বন বিভাগের আধিকারিক শাক্যর বুদ্ধগয়াতে আসা। ব্যাপারটা নিয়ে বার বার শাক্যদের দপ্তরে পত্রাঘাত করেছে সে। ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও সে অভিযোগ জানিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে তারা নাকি বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ব্যাপারটা বে-আইনি হলেও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বলেই হয়তো এড়িয়ে গিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে সে শাক্যকে জিজ্ঞাসা করল, ‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি কিছু মনে করবেন না স্যার। আপনি কি বৌদ্ধ?’
শাক্য পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘কেন বলুন তো?’
প্রেমানন্দ সিং বললেন, ‘এখানে অনেক বৌদ্ধ আছে যাদের নাম শাক্য বা শাক্যমুনি।’
শাক্য জবাব দিল, ‘আমার নামটা বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হলেও আমি বৌদ্ধ নই। তবে আমি যে ধর্মের লোকই হই না কেন, এই মুহূর্তে আমার পরিচয় একজন সরকারি অফিসার। আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’ তার কথা শুনে পরিবেশকর্মী রাকেশ উৎসাহিত বোধ করে বলল, ‘আপনি একদম ঠিক বলেছেন স্যার। এখানকার লোকেরা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করত, তবে আমাকে আর এত কষ্ট করে আপনাদের কাছে অভিযোগ জানাতে হতো না।’ ছেলেটার কথা শুনে শাক্য কোন মন্তব্য না করলেও তার মনে হল ছেলেটা যেন এই বক্তব্যর মাধ্যমে প্রেমানন্দকেই ইঙ্গিত করল। তবে তিনি তা গায়ে না মেখে শাক্যকে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি আগে বুদ্ধগয়াতে এসেছেন স্যার?’
শাক্য জবাব দিল, ‘না, আসা হয়নি।’
প্রেমানন্দ সিং বললেন, ‘আমাদের এ জায়গাটা খুব শান্ত আর সুন্দর স্যার।’
তাঁর কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাকেশ যাদব বলল, ‘হ্যাঁ, এ জায়গাটা সুন্দর। তবে আরও সুন্দর হতে পারে যদি পরিবেশ নিয়ে কিছু মানুষের ছেলেখেলা বন্ধ করা যায়। যে চেষ্টা আমি করে চলেছি বেশ কিছু বছর ধরে।’ শাক্য বলল, ‘এখন তো বেলা এগারোটা। এখানে যখন এসেছি তখন দেখি মহাবোধী মন্দিরের বিখ্যাত বুদ্ধ মূর্তি দর্শন করার সুযোগ অন্তত হয় কি না? দেখা যাক যে কাজে এসেছি সে কাজ মিটতে কত সময় লাগে?’
দুই
সে জায়গাটা আসলে একটা রাস্তার মোড়। তবে মন্দিরের সামনে বলে সেখানে সাধারণ যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। রাস্তার মাঝখানে একটা আইল্যান্ড আছে। তার একপাশ দিয়ে মহাবোধী মন্দিরে তোরণে প্রবেশ করার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পর্যটক-পুণ্যার্থীরা। অন্যপাশে দু’টি বিশাল বৌদ্ধ মঠ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। তাদের দু’পাশ দিয়ে দুটি রাস্তা চলে গেছে মঠের পিছন দিকে। তার মধ্যে একটা রাস্তা বেশ ঘিঞ্জি। নানা ধরনের দোকান পাট সেখানে। স্থানীয় অনেক মানুষ বসে গিয়েছে ডালা নিয়ে ধূপ, ফল ইত্যাদি পুজোর সামগ্রী বিক্রি করার জন্য। হাতে পদ্ম কুড়ি নিয়েও ফেরি করছে কেউ কেউ। আর আছে একদল পথশিশু। যাওয়া-আসা করছে পীত বর্ণের পোশাক পরা বৌদ্ধ শ্রমণের দল। সব মিলিয়ে জায়গাটা বেশ জমজমাট। শাক্য জানতে চাইল, ‘এই বাচ্চারা কি বৌদ্ধ ভিক্ষুক?’
প্রেমানন্দ জবাব দিলেন, ‘না, বৌদ্ধ শিশু ভিক্ষুরা মঠে থাকে। এই বাচ্চারা স্থানীয় গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে। এরা কেউ হিন্দু হতে পারে, মুসলিমও হতে পারে, অনাথও আছে অনেকে। কেউ কেউ রাস্তাতেই ঘুমায়।’
যে ব্যাপারে তারা সন্ধান করতে এসেছে সে ব্যাপারটা প্রথমে নজরে পড়ল রাকেশ যাদবেরই। সে আঙুল দিয়ে ঘিঞ্জি গলিটার দিকে দেখিয়ে বলল, ‘স্যার ওই দেখুন, গলির মুখে চায়ের দোকানের পাশে একজন ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে খাঁচা নিয়ে। অমন আরও লোক দাঁড়িয়ে থাকে ওখানে।’
তাকে দেখতে পেয়ে শাক্য বলল, ‘চলুন এগনো যাক। তবে যা কথা বলার প্রথমে আমিই বলব।’
যেন শাক্যরা ট্যুরিস্ট। এমনভাব দেখিয়ে তারা এগিয়ে গিয়ে গলির মুখে লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। লোকটাকে বৃদ্ধই বলা যায়। মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা। পরনে বিবর্ণ শার্ট আর একটা ধুতি। তার মাথার ওপর গামছা চাপা দেওয়া। শাক্য হেসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার খাঁচায় কী আছে?’
প্রশ্ন শুনে লোকটা খাঁচাটা শাক্যর চোখের উচ্চতায় তুলল। শাক্য দেখল তার মধ্যে রাখা আছে একঝাঁক চড়াই, বন মুনিয়া এসব পাখি। শাক্য সেগুলো দেখার পর লোকটা হেসে বলল, ‘কুড়ি টাকা জোড়া বাবু। খুব সস্তা।’
শাক্য প্রশ্ন করল, ‘কী হবে এ পাখি কিনে?’
লোকটা জবাব দিল, ‘উড়িয়ে দেবেন হাতে ধরে। ওরা মুক্তি পেলে আপনার পুণ্য হবে। অনেকেই ওড়ায় এখানে।’
শাক্য জানতে চাইল, ‘তুমি পাখি ধর? নাকি কিনে এনে বিক্রি কর?’
সে জবাব দিল, ‘আমিই ধরি। নদীর পাড়ের জঙ্গল থেকে। আপনি পাখি ওড়াবেন বাবু?’
শাক্য এবার মৃদু কঠিনভাবে বলল, ‘তুমি জানো, পাখি ধরা বে-আইনি কাজ?’
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে লোকটা হেসে জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, জানি বাবু।’
রাকেশ যাদব এবার লোকটার প্রতি নিজের রাগ চাপতে না পেরে বলল, ‘অন্যায় করেও আবার কেমন হাসছে দেখেছেন!’ লোকটার সঙ্গে এইটুকু কথোপকথনের মধ্যেই কৌতূহলী কয়েকজন মানুষের ভিড় জমে গেছে সেখানে। পাখিওয়ালা সম্ভবত কী করবে বুঝতে না পেরে ‘নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাক্যর দিকে। প্রেমানন্দ, শাক্যকে বললেন, ‘তাহলে গাড়ি ডাকছি স্যার? থানায় নিয়ে গিয়ে যা ব্যবস্থা করার করব।’ শাক্য সম্মতি দিল। পুলিসের একটা গাড়ি চলে এল। খাঁচা সমেত লোকটাকে গাড়িতে তুলে তারা রওনা হল পুলিস চৌকির দিকে। লোকটা গাড়িতে ওঠার পর সারাটা পথ কোন কথা বলল না। মাথা নিচু করে খাঁচাটার দিকে তাকিয়ে বসে রইল। রাকেশ যাদবের চোখেমুখে সাফল্যের উল্লাস। পরিবেশ রক্ষার জন্য একটা বড় কাজ করতে পেরেছে সে। পুলিস চৌকিতে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার পর রাকেশ যাদব বলল, ‘ওর হাত দুটো মেরে ভেঙে দেবেন স্যার। যাতে ও আর কোনওদিন পাখি ধরতে না পারে।’
শাক্যর তার কথা শুনে মনে হল ছেলেটা পরিবেশকর্মী হলেও এবার এক্তিয়ারের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সে রাকেশ যাদবকে বলল—‘ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি এবার যান। বাকি কাজটা এবার আমাদের দায়িত্ব। সরকারি কাজের সময় বাইরের লোককে অ্যালাউ করা যাবে না।’
শাক্যর কথা শুনে কিছুটা আশাহতভাবে পুলিস চৌকি ছেড়ে বেরিয়ে গেল ছেলেটা।
তিন
পুলিস চৌকির একটা ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসল শাক্য আর পুলিস অফিসার প্রেমানন্দ। পাখি বিক্রেতাকে তাদের সামনে এনে দাঁড় করানো হল। মাথা নিচু করে দাঁড়াল সে। প্রেমানন্দ তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘তোমার নাম কী? ঘর কোথায়?’ সে জবাব দিল, ‘আমার নাম বুদ্ধ সিং। টেম্পল রোড থেকে যে রাস্তাটা আশি ফুট বুদ্ধের দিকে গিয়েছে। সে রাস্তার এক পাশে আমি থাকি।’
‘বুদ্ধ সিং তুমি কি বৌদ্ধ,’ এবার প্রশ্ন করলেন পুলিস অফিসার?
‘তা ঠিক জানি না। ছোটবেলায় কে যেন আমাকে মন্দিরের সামনে ফেলে রেখেছিল। বাবা-মাকে আমি দেখিনি।’
তোমার নাম বুদ্ধ, কিন্তু বুদ্ধুর মতো অন্যায় কাজ কর কেন? পাখি ধর কেন?’
বুদ্ধ সিং জবাব দিল, ‘অন্যরা পাখি ওড়ালে তাদের পুণ্য হবে তাই।’
শাক্য বলল, ‘কিন্তু এই যে তুমি পাখি ধর তাতে তোমার পাপ হচ্ছে না। অন্য কোনও কাজ করতে পার না? সামান্য ক’টা টাকার জন্য অন্যকে পুণ্য দিয়ে নিজের পাপের বোঝা বাড়াচ্ছ কেন? জানো এর জন্য তোমার বড় সাজা হতে পারে?’
প্রেমানন্দ ভর্ৎসনার স্বরে বললেন, ‘তোমার নাম ‘বুদ্ধ’ নয় ‘বুদ্ধু’ হওয়া দরকার ছিল।’
বুদ্ধ সিং জবাব দিল, ‘জানি পাখি ধরা পাপ কাজ। কিন্তু এখন বয়স হয়েছে। অন্য কাজ করতে পারি না। তাই জাল দিয়ে পাখি ধরি। আমাকে ছেড়ে দিন বাবুরা।’
কী করা যায় তা নিয়ে প্রেমানন্দের সঙ্গে আলোচনার জন্য বুদ্ধ সিংকে ঘরের বাইরে যেতে বলল শাক্য। সে বাইরে বেরবার পর প্রেমানন্দ বললেন, ‘স্যার কী করবেন? কেস লিখে কোর্টে চালান করে দেব?’
শাক্য বলল, ‘দেখে মনে হচ্ছে লোকটা গরিব। পেটের দায়ে কাজটা করছে। কেস দিলে তো বেশ কয়েক বছর জেলের ঘানি টানতে হবে।’
পুলিস অফিসার বললেন, ‘হ্যাঁ, ও পয়সা খরচ করে মামলা লড়ে বেরিয়ে আসার লোক বলে মনে হয় না। কী করব আপনি বলুন স্যার। যেমন বলবেন তেমনই হবে।’
প্রেমানন্দর কথা শুনে শাক্য বুঝতে পারল তিনি মানবিক দৃষ্টিতে লোকটার প্রতি সহানুভূতিশীল। এই বৃদ্ধ লোকটা পাখি ধরে বিক্রি করে ঠিকই। কিন্তু পশু-পাখির চোরাকারবারি বলতে যা বোঝায়, তা ঠিক নয়। লোকটাকে নিয়ে কী করা যায় ভাবতে ভাবতে শাক্যর মাথায় হঠাৎ একটা পরিকল্পনা এল। সে পুলিস অফিসারকে বলল, ‘একটা কাজ করা যেতে পারে। ও আর কোনওদিন পাখি ধরবে না এই মর্মে ওকে মুচলেখা লিখিয়ে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। তাতে এই বুদ্ধ সিং কিংবা অন্যরা হয়তো ভয় পেয়ে ভবিষ্যতে এ কাজ থেকে বিরত থাকবে।’
শাক্যর নির্দেশ মতোই কাজ করলেন পুলিস অফিসার। মুচলেখার কাগজে বুদ্ধ সিং নিশ্চুপভাবে আঙুঠা ছাপ দিল। তবে সে চলে যাওয়ার আগে আগে তার পিঠের থলের থেকে পাখি ধরার জালটা বাজেয়াপ্ত করা হল। পাখি সমেত খাঁচাটাও রেখে দেওয়া হল।
চার
শাক্য নিজের থাকার জন্য একটা হোটেলের ব্যবস্থা করেছিল। পুলিস চৌকি থেকে সেখানে ফিরে এসে খাওয়া সেরে ঘুম দিয়ে যখন সে উঠল, তখন বিকাল হয়ে গেছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ল সে মহাবোধী মন্দির আর আশি ফুট বুদ্ধ মূর্তিটা অন্তত ফেরার আগে দেখে যাওয়ার জন্য। আশি ফুট বুদ্ধ মূর্তির মাথাটা অনেক দূর থেকেই দেখা যায়। সেদিকেই এগল সে। বড় রাস্তা ছেড়ে একটা ছোট রাস্তা ধরল সে। এক সময় সে এমন একটা জায়গায় এসে পড়ল, সেখানে গরিব মানুষদের বাস। ভাঙাচোরা সব ঘর-বাড়ি। জায়গাটা আশি ফুট বুদ্ধমূর্তির খুব কাছেই। মূর্তির মুখ-বুক সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মূর্তির মাথার ওপর পাখি উড়ছে। এমন সময় কাকতালীয়ভাবে দেখতে পেয়ে গেল বুদ্ধ সিংকে। কাছেই রাস্তার পাশে একটা শনের ছাউনি দেওয়া ঘরের সামনে বসে কী যেন করছে। শাক্য কৌতূহলী হয়ে রাস্তা ছেড়ে এগিয়ে তার ভাঙা ঘরটার সামনে দাঁড়াল। শাক্যকে চিনতে পেরে সে মাথা ঝুকিয়ে নমস্কার করে বলল, ‘এটাই আমার ঘর বাবু।’
শাক্য দেখল বুদ্ধ সিংয়ের হাতে একটা জাল ধরা। সে জিজ্ঞাসা করল, ‘জাল দিয়ে তুমি কী করছ?’
‘একটা জাল তো পুলিস চৌকিতে আপনারা জমা নিয়ে নিলেন। এটা ঘরে ছিল, জঙ্গলে নিয়ে পাতব। পাখি ধরা পড়বে।’—এই বলে ভাঙা দাঁত বার করে হাসল বৃদ্ধ।
শাক্য তার কথা শুনে খেপে গেল। রুষ্টভাবে বলল, ‘আবার পাখি ধরবে! এ কথা বলতে তোমার লজ্জা করছে না? আজই তো মুচলেখা দিয়ে ছাড়া পেলে। তোমাকে ছাড়াটাই আমাদের ভুল হয়েছে।’
তার কথা শুনে নিরুত্তর রইল বুদ্ধ সিং।
শাক্য এরপর তাকে বোঝাবার জন্য বলল, ‘ধরে নিলাম তোমার জেলে যাওয়ার ভয় নেই। কিন্তু তোমার কি পাপ-পুণ্যরও ভয় নেই।’
বুদ্ধ সিং বলল, ‘হোক পাপ। আমি পাপ না করলে ওরা খাবে কি?’
ইতিমধ্যে ঘরে থেকে বেরিয়ে এসেছে ওরা। সাত-আট বছর বয়সি পাঁচ-ছয়জন বাচ্চা ছেলে। পরনে বিবর্ণ পোশাক। সম্ভবত বুদ্ধ সিংয়ের কোনও বিপদ হতে পারে আঁচ করেই তারা ঘিরে দাঁড়াল তাকে। শাক্য জিজ্ঞাসা করল, ‘এই বাচ্চগুলো কারা?’
‘ওরা হয়তো কেউ বৌদ্ধ, কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান। তবে ওদের একটাই পরিচয় ওরা অনাথ। মঠে-মন্দিরে জায়গা হয় না ওদের। তাই ওদের পথ থেকে কুড়িয়ে এনেছি আমি। ওদের ভাতের বন্দোবস্ত করার জন্যই আমি পাখি ধরি। আপনি আমাকে পাপ-পুণ্যর কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন না? ওদের জন্য আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন অন্যকে পুণ্য দিয়ে আমি পাপ করতে রাজি। ভগবান বুদ্ধ নিশ্চয়ই সব দেখছেন। তিনি আমার যা করার করবেন।’—এই বলে বৃদ্ধ বুদ্ধ সিং তাকাল আকাশের দিকে। বেলা পড়ে এসেছে। শ্বেত শুভ্র বৌদ্ধর প্রকাণ্ড মুখমণ্ডলে বিদায়ী সূর্যের শেষ আলো। বুদ্ধ সিংয়ের বলি রেখাময় মুখমণ্ডলেও সেই আলোর রেশ খানিক এসে পড়েছে। শাক্যর মনে হল করুণাঘন চোখে তথাগতর মূর্তি যেন চেয়ে আছেন বুদ্ধ সিংয়ের দিকে। তিনি যেন ওপর থেকে শাক্যর সামনে দাঁড়ানো বুদ্ধ সিংকে বলছেন—‘তোমার সব পাপের ভার আমার।’
অমৃত কথা
-
‘বিবেকচূড়ামণি’
- post_by বর্তমান
- জুলাই 19, 2025
এখনকার দর
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025