মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

সবুজ হ্রদ

আমাদের এই পৃথিবী সত্যিই এক বিচিত্র জায়গা। এখানে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যার ব্যাখ্যা মেলা কঠিন। তেমনই কিছু জায়গার সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করাচ্ছেন কমলিনী চক্রবর্তী।

সবুজ হ্রদ

আমাদের এই পৃথিবী সত্যিই এক বিচিত্র জায়গা। এখানে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যার ব্যাখ্যা মেলা কঠিন। তেমনই কিছু জায়গার সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করাচ্ছেন কমলিনী চক্রবর্তী।

 

আজব কাণ্ডই বটে। ছিল পার্ক, হয়ে গেল লেক! এ যেন ছিল বেড়াল শেষে হল রুমাল! অস্ট্রিয়ার গ্রানার লেক (সবুজ হ্রদ) দেখলে বুঝতে পারবে এই কথাটা কতটা সত্য। দেশটির দক্ষিণ প্রান্তের ছোট্ট গ্রাম ট্রাগোস। আর সেখানেই এমন ম্যাজিক ঘটে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে। শরৎ থেকে বসন্ত হচস্কোয়াব পাহাড়ের পাদদেশে সুসজ্জিত পার্কটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন আসেন। সামান্য পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উঠে পৌঁছতে হয় এই পার্কে। যাঁরা হাইকিং ভালোবাসেন তাঁদের পক্ষে আদর্শ এই স্পট। চারদিকে ঘন পাইনের বন, তা পেরলেই বরফে ঢাকা রুক্ষ পাহাড় শ্রেণি। আর তারই মাঝে সবুজ ঘাসের গালিচায় ঢাকা পার্ক। ট্রেকারদের বসার জন্য সেখানে রয়েছে বেঞ্চ। উপত্যকার ঘন সবুজ ঘাসের ফাঁকে হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে কিছু ছোট বড় গাছ। তাদের ডালপালা ঘিরে বিনোদনের নানা সুযোগ। পথিকদের চলার সুবিধের জন্য রয়েছে বাঁধানো পথ বা পেভড পাথওয়ে। এহেন পার্কই হঠাৎ হারিয়ে যায় বসন্তের শেষ থেকে। ভারী অবাক লাগছে তো শুনতে? কিন্তু সেই সময় অস্ট্রিয়ার এই অঞ্চলে বেড়াতে গেলে দেখবে টলটলে সবুজ জলে ভরা একটা হ্রদ চোখের সামনে। 
তা এমন কাণ্ড ঘটে কীভাবে? প্রকৃতির অপার লীলার ব্যাখ্যাটা কী? আসলে ওই যে বরফে ঢাকা পাহাড় শ্রেণির কথা বললাম, নাম যার হচস্কোয়াব। সেখানেই লুকিয়ে আছে হ্রদের জলের রহস্য। শীতে বরফ পড়ে সাদা হয়ে যায় পাহাড়। বরফের গায়ে বরফ জমে পুরু হয় সেই আস্তরণ। হেমন্ত ছাড়িয়ে বসন্তের প্রথম ভাগেও তার কোনও হেরফের হয় না। কিন্তু বসন্তের শেষ নাগাদ হাওয়ায় যখন হিমের ছোঁয়া কমে আসে, রোদের তাপ হয় তীব্র, তখনই বরফ ক্রমশ গলতে শুরু করে। আর গলতে গলতে জল হয়ে যায় বরফের স্তূপ। সেই জল পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে এসে পার্ক উপর দিয়ে বয়ে যায়। ব্যস, পার্ক ভেসে তৈরি হয় পুকুর। এদিকে পার্ক নিজের অস্তিত্ব বোঝাতে পুকুরের রং সবুজ করে তোলে। ঘাস চুঁইয়ে রং লাগে জলে। আর সেই রঙে হ্রদ হয় পান্নারঙা। এমন হ্রদে স্কর্কেলিং, স্কুবা ডাইভিং সহ নানারকম আন্ডার ওয়াটার স্পোর্টস সম্ভব। যাঁরা জলের নেশায় মেতে ওঠেন, তাঁরাই তাজ্জব বনে যান সাঁতার কাটতে গিয়ে চলতে চলতে হঠাৎই কোনও বেঞ্চ বা বাঁধানো রাস্তার মুখোমুখি হন তাঁরা। অথবা এমন কোনও গাছের সঙ্গে পরিচয় হয় যার জলের নীচে কোনও অস্তিত্বই থাকার কথা নয়। অস্ট্রিয়ার এই গ্রানার লেক দেখতে চাইলে মোটামুটি মে-জুন মাস নাগাদ ভ্রমণসূচি ছকে নিতে হবে। বাকি বছরটা এখানে সবুজ ঘাসের গালচে মোড়া পার্কই দৃশ্যমান। সেই সৌন্দর্যও নেহাত কম নয়।

রাশিফল