শনিবার, 19 জুলাই 2025
Logo
  • শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

রংবেরঙের গ্রহ

সৌর জগতে গ্রহের সংখ্যা আট। কিন্তু তাদের রং আলাদা। কোন গ্রহ কেমন দেখতে জানালেন স্বরূপ কুলভী।

রংবেরঙের গ্রহ

সৌর জগতে গ্রহের সংখ্যা আট। কিন্তু তাদের রং আলাদা। কোন গ্রহ কেমন দেখতে জানালেন স্বরূপ কুলভী।

 

পৃথিবীর আকাশ নীল। আকাশের এই রং আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু কেন? ছোট্ট বন্ধুরা, একথা তোমাদের মনে হতেই পারে। আর তোমরা জানো আমাদের সৌরজগতে আটটি গ্রহ। সেগুলির আকাশের রং কেমন? উত্তরে বলা যায়, সব গ্রহের রং কিন্তু এক নয়। কিন্তু কেন? আসলে গ্রহের রং তাদের গঠন ও বায়ুমণ্ডলের উপর নির্ভর করে। প্রত্যেক গ্রহই সূর্যের আলো পায়। এখন সূর্য রশ্মি কীভাবে প্রতিফলিত হয়, তা ঠিক করে দেয় এই রঙের বৈচিত্র্য। ফলে এই রং দেখেই গ্রহগুলির বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ সেগুলি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি, তা জানা যায়। 

পৃথিবী
প্রথমেই আসা যাক আমাদের পৃথিবীর কথায়। পৃথিবীর আকাশ নীল। তাই সুদূর মহাকাশ থেকে একে নীলই দেখাবে। কিন্তু কেন? এর কারণ হল বায়ুমণ্ডল। আমাদের বায়ুমণ্ডলে বাতাসের সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য ধুলোবালি। আমরা জানি সূর্যের আলোর সাতটি রং। সেই আলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসে। এই সময় গ্যাসের অণু ও ভাসমান ধূলিকণার উপর আলো পড়লে তা সাতটি রঙে ভাগ হয়ে যায়। একটা কথা বলে রাখি, দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রং আমাদের চোখে বেশি ধরা পড়ে। সাতটি রঙের মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। এর বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম। আর নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম ও  বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি। এর মানে হল লাল আলো ছড়ায় সবচেয়ে কম। আর নীল আলো ছড়ায় সবচেয়ে বেশি। তাই সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রবেশের সময় বায়ুকণার আলো ভাগ হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়। তখন নীল আলোই বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। সেজন্য দিনের বেলায় আমরা আকাশ নীল দেখি। অন্যদিকে পৃথিবীর বাইরে থেকে গোটা পৃথিবীটাকে নীল দেখায় বায়ুমণ্ডলের নীল রঙের কারণে। এছাড়াও পৃথিবীতে যে তিন ভাগ জল, তারও একটা প্রভাব আছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে দিনেও পৃথিবীর আকাশ দেখাত কালো। তখন দিনেও তারা দেখা যেত। 

বুধ
সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ হল বুধ। এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। যা আছে তা অত্যন্ত পাতলা। সেখানে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, হিলিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম সামান্য পরিমাণে থাকে। তাই সূর্যের আলো বুধে সরাসরি এসে পড়ে। সেখানে বায়ুমণ্ডলে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে না।  মূলত আয়রন, নিকেল ও সিলিকেট দিয়ে তৈরি বুধের পৃষ্ঠদেশের রংটাই দেখা যায়। তা কালচে ধূসর দেখায়।  মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তোলা ছবিতেও সেটাই ধরা পড়েছে। 

শুক্র
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ শুক্র। এর আকাশ বুধের চেয়ে একে একেবারেই ভিন্ন। বায়ুমণ্ডলও বুধের মতো অতটা হালকা নয়। এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন, সালফার ডাই অক্সাইড। সেইসঙ্গে মিশে রয়েছে সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘ। এসব উপাদানের কারণে শুক্রের বায়ুমণ্ডল কমলা রঙের করে তুলেছে। এটাই টেলিস্কোপের মাধ্যমে দূর থেকে আমরা থেকে দেখতে পাই।  শুক্রের পৃষ্ঠতলের রং দেখা যায় না। 

মঙ্গল
মঙ্গলকে আমরা লাল গ্রহ বলেই জানি। মঙ্গলের পৃষ্ঠে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন অক্সাইড। তার মানে লোহা। আর লোহা থেকে এসেছে লোহিত বা লাল শব্দ। তাই মঙ্গলের রং লাল। এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা। সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণও নেই। তাই মঙ্গলের পৃষ্ঠের রংটাই দূর থেকে ধরা পড়ে। 

বৃহস্পতি
সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এর কোনও একটা নির্দিষ্ট রং নেই। সাদা, কমলা, বাদামি ও লালের মতো নানা রং এই গ্রহের। বৃহস্পতি আসলে গ্যাসীয় দানব। এর কোনও শক্তপোক্ত পৃষ্ঠদেশ নেই। তা তৈরি হিলিয়াম, হাইড্রোজেন ও অন্যান্য গ্যাস দিয়ে। সেইসঙ্গে বায়ুমণ্ডলে রয়েছে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি মেঘ। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের গ্যাস রয়েছে। এই কারণে এই গ্রহরাজের এই রংবাহার। 

শনি
বৃহস্পতির মতো শনির কোনও কঠিন পৃষ্ঠদেশ নেই। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। হাইড্রোজেন থাকায় গ্রহটি গাঢ় লাল রং হওয়ার কথা। কিন্তু এই গ্যাসীয় স্তরের উপরে রয়েছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের মেঘ। এর প্রভাবে শনির রং ফিকে সোনালি। 

ইউরেনাস
ইউরেনাস গ্রহের রং হল ফিকে নীলচে সবুজ। এর কারণ হল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি। এই গ্যাস লাল আলোর কিছু অংশ শোষণ করে আর নীল-সবুজ আলো প্রতিফলিত করে।  

নেপচুন
সৌরমণ্ডলের সর্বশেষ গ্রহ নেপচুন। সূর্য থেকে বহু দূরে এর অবস্থান। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন ও সামান্য পরিমাণ অ্যামোনিয়া রয়েছে এই গ্রহে। এখানে সূর্যের আলো ক্ষীণ। এই গ্রহের রং নীল। তবে পৃথিবীর মতো নীল নয়। তা গাঢ় নীল।

রাশিফল