সম্প্রীতির স্মারক চাঁদকাজির সমাধি, দেখভালে চৈতন্য মঠ
বাংলায় সম্প্রীতির মূর্ত প্রতীক মায়াপুরের মৌলানা সিরাজউদ্দিনের সমাধি। দীর্ঘ প্রায় পাঁচশো বছর সৌভ্রাতৃত্ব বোধের শিক্ষা দিয়ে আসছেন কবরে শায়িত সিরাজউদ্দিন।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
এপ্রিল ২১, ২০২৫
সমীর সাহা, নবদ্বীপ: বাংলায় সম্প্রীতির মূর্ত প্রতীক মায়াপুরের মৌলানা সিরাজউদ্দিনের সমাধি। দীর্ঘ প্রায় পাঁচশো বছর সৌভ্রাতৃত্ব বোধের শিক্ষা দিয়ে আসছেন কবরে শায়িত সিরাজউদ্দিন। তিনি চাঁদকাজি নামেই সমধিক পরিচিত। কবরের উপর প্রাচীন চাঁপা ফুলের গাছ। সব ঋতুতেই তার শাখা থেকে ঝরে সম্প্রীতির ফুল। সেগুলি কুড়িয়ে কোলাকুলি করেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। সমাধির তদারকির দায়িত্বে মায়াপুরের শ্রীচৈতন্য মঠ। আবার সমাধিকে ঘিরে উরস উৎসব উদযাপনে পুরোভাগে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে চাঁদকাজির এই সমাধিস্থলকে ‘সম্প্রীতির বিদ্যালয়’ বলে উল্লেখ করেছেন নবদ্বীপের বিশিষ্ট শিক্ষক তথা গবেষক সিরাজুল ইসলাম। বুধবার তিনি বলেন, ‘ষোড়শ শতাব্দীতে শ্রীচৈতন্যদেব ও চাঁদকাজি মানুষের দলাদলিকে কোলাকুলিতে পরিণত করে প্রমাণ করেছিলেন মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ। তাই, আজও দেশ-বিদেশের মানুষ এসে মাথা ঠেকান মনুষ্যত্বের এই স্মারকস্তম্ভে।’
মায়াপুর শ্রীচৈতন্য মঠের সাধারণ সম্পাদক তথা আচার্য ভক্তিস্বরূপ সন্ন্যাসী মহারাজ বলেন, ‘শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে সর্বধর্মের মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। চাঁদকাজি মুসলিম সম্প্রদায়ের হলেও তাঁর সমাধিক্ষেত্র দেখভাল করেন আমাদের শ্রীচৈতন্য মঠের বৈষ্ণবরা। আবার এই সমাধিতে মুসলিমদের পবিত্র উরস উৎসব উদযাপিত হয় বিপুল সমারোহে।’
মায়াপুরের বামুনপুকুরে চাঁদকাজির এই সমাধিপীঠ হেরিটেজ স্বীকৃত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ফের বিকেল চারটে থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত খোলা হয়। লোকশ্রুতি, সমাধির উপরে যে গোলক চাঁপার গাছটি রয়েছে, সেটি স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু রোপন করেছিলেন। সেই হিসেবে গাছের বয়স আনুমানিক পাঁচশো বছরেরও বেশি। কাণ্ডটি এখন ফাঁকা। তবুও আশ্চর্যজনকভাবে বছরের প্রতিটি ঋতুতে ফুল হয়।
গৌড়ের রাজা হুসেন শাহ স্থানীয় কাজি বা প্রশাসক হিসেবে মৌলানা সিরাজউদ্দিনকে নবদ্বীপে পাঠিয়েছিলেন। চৈতন্য চরিতামৃতের তথ্য অনুযায়ী, একদিন নবদ্বীপের শ্রীবাস অঙ্গনে হরিনাম সংকীর্তন চলছিল। সিরাজউদ্দিন সেখানে এসে মৃদঙ্গ মাটিতে ফেলে ভেঙে দেন। বেজায় চটে যান শ্রীচৈতন্য। তিনি সেদিন রাতেই মশাল মিছিল সহকারে কাজির বাসভবনে যান। প্রচুর লোক সমাগম দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অন্দরমহলে লুকিয়ে পড়েন কাজি। চৈতন্যের একরোখা খোঁজাখুজিতে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। দু’জনে ধর্ম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। শেষে সিরাজউদ্দিন হার মেনে নিয়ে নবদ্বীপে নাম সংকীর্তনের অনুমতি দেন। সিরাজউদ্দিন থেকে নাম হয় চাঁদ কাজি। শিক্ষক সিরাজুল সাহেবও বলছিলেন, ‘চাঁদকাজি প্রথমে ভেবেছিলেন, এত ভোরে কীর্তন করে প্রজাদের ঘুম নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু, পরে তিনি বুঝতে পারেন, ওদের ধর্মের মূল কথা কীর্তন, মানুষকে জাগরণের বার্তা। তখনই তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন।’ নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের কথায়, ‘বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে এই শিক্ষাটাই দিয়ে গিয়েছেন আমাদের প্রেমের অবতার চৈতন্য মহাপ্রভু। আজকের দিনে শ্রীচৈতন্য ও চাঁদকাজিদের উদারতাকে সম্মান জানানো দুই সম্প্রদায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে আমার মনে হয়। নিজস্ব চিত্র
related_post
রাশিফল
-
আজকের রাশিফল
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
অমৃত কথা
-
ধ্যান
- post_by বর্তমান
- জুন 14, 2025
এখনকার দর
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুন 13, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুন 13, 2025