সোমবার, 19 মে 2025
Logo
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত বোধনা নিকেতন পড়ে অবহেলায়

ঝাড়গ্রামে মূকবধির ছেলেমেয়েদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল ‘বোধনা নিকেতন’ বিদ্যালয়। যার উদ্বোধনে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জেলাজুড়ে পঁচিশে বৈশাখ উদযাপনের মধ্যে ভেঙেচুরে পড়ে থাকা বোধনা নিকেতন উপেক্ষিতই রইল। 

রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত বোধনা নিকেতন পড়ে অবহেলায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামে মূকবধির ছেলেমেয়েদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল ‘বোধনা নিকেতন’ বিদ্যালয়। যার উদ্বোধনে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জেলাজুড়ে পঁচিশে বৈশাখ উদযাপনের মধ্যে ভেঙেচুরে পড়ে থাকা বোধনা নিকেতন উপেক্ষিতই রইল। 
বিশ শতকের তিনের দশকে ঝাড়গ্রামের বাঁধগড়ার বাঁশতলা রেল স্টেশন এলাকায় স্কুলটি গড়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের আদলে ‘বোধনা নিকেতন’ নামকরণ করা হয়েছিল। অরণ্য অধ্যুষিত জেলায় মূকবধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই এই উদ্যোগ। উদ্বোধনের সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন— ‘ লুপ্তম সর্বম্ দৈববশাৎ নবী ভূতম পুন্ করু।’ অর্থাৎ দৈববশে যা লুপ্ত হয়ে গেছে তাকে পুনরায় জাগাও। কবির বন্ধু ও বিশিষ্ট সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন। আর্থিক কারণে বিদ্যালয়টি পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। সাতের দশকে আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মন্মথ রায়ের মতো মনীষীদের উদ্যোগে নতুন করে বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যবসায়ী তারপদ সাউ আর্থিক সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। তাঁর স্ত্রীর নামেই বিদ্যালয়ের নতুন নামকরণ হয় ‘লীলাবতী শিক্ষা সদন’। তবে এলাকার মানুষের কাছে স্কুলটি বোধনা নিকেতন নামেই পরিচিত আজও। বাম সরকারের আমলে স্কুলটিকে সরকারের অধীনে আনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বর্তমানে স্কুলটি ভেঙেচুরে, ঝোপঝাড়ে ঢেকে পড়ে রয়েছে। দরজা-জানলাহীন স্কুলের দোতলায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা। শুক্রবার পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে জেলাজুড়ে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে বর্ণাঢ্য পদযাত্রা শোভাযাত্রা হয়েছে। স্কুল কলেজ, সামাজিক সংগঠন এমনকী বিভিন্ন থানার পক্ষ থেকেও রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়েছে। আড়ালে থেকে গিয়েছে বোধনা নিকেতন। ঝাড়গ্রাম প্রয়াস নাট্যদলের কর্মী সুশান্ত দে বলেন, রবীন্দ্রনাথকে আমার এদিন স্মরণ করছি। তাঁর বিশ্ব মৈত্রীর ভাবনা, শিক্ষা বিস্তার নিয়ে আলোচনা করছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত বোধনা নিকেতনের সংরক্ষণ নিয়ে কোনওরকম উদ্যোগ নেই। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার দেবলীনা দাশগুপ্ত বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তাঁর ভাবনা আমাদের পথ দেখায়। পঁচিশে বৈশাখে তাঁকে আমরা স্মরণ করি। যাঁরা স্মরণ করেন তাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গেই করেন। পঁচিশে বৈশাখ পালনে আনুষ্ঠানিকতার ভাগই বেশি বলব। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত বোধনা নিকেতন সংরক্ষণ হওয়া জরুরি। জেলার সকল স্তরের মানুষকেই এই উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে।