মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

তরী ভেসে যায় নীলনদে

ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এমন অভিজ্ঞতা হয়— বইয়ের পাতায় পড়ে বা ছবি দেখে একটা জায়গাটা সম্পর্কে যে ধারণা মনের মধ্যে লালিত হয়েছিল, সেই স্থানে যাওয়ার পর তা মিলল না। 

তরী ভেসে যায় নীলনদে

কী সুন্দর মায়াময় এই বিশাল পৃথিবী! সুনীল সাগর থেকে উত্তুঙ্গ পর্বতমালা, ঊষর মরুভূমি থেকে গহীন অরণ্য, গগনচুম্বী অট্টালিকার নগরী থেকে প্রাচীন জনপদ—সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে অপার সৌন্দর্য। তারই সন্ধানে ছুটে ঩বেড়ায় ভ্রমণ পিয়াসী মন। তাই তো পাখির ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মেখে উড়ে চলা।  দলবদ্ধভাবে কিংবা একা।

 

হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত: ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এমন অভিজ্ঞতা হয়— বইয়ের পাতায় পড়ে বা ছবি দেখে একটা জায়গাটা সম্পর্কে যে ধারণা মনের মধ্যে লালিত হয়েছিল, সেই স্থানে যাওয়ার পর তা মিলল না। তখন বেশ আশাহত হতে হয়। সেই কোন ছেলেবেলা থেকে পড়ে এসেছি— মিশরকে বলা হয় নীলনদের দান। কাজেই ইজিপ্ট বা মিশর ভ্রমণে গেলে নীলনদ দর্শন যেকোনও পর্যটকের কাছে পিরামিড বা ফিংসের মতোই আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু!
আগের রাতে সদ্য কায়রো শহরের হোটেলে এসে পৌঁছেছি। আমি একলা মানুষ। পায়ে হেঁটে শহরের অনেকটা দেখা হয়ে যায়। কোনও শহরকে পায়ে হেঁটে না দেখলে তার জনজীবনকে ঠিক চেনা যায় না। কায়রো শহরকে কেন্দ্র করে যে জায়গাগুলো দেখতে চাই তার জন্য আগাম একটা পরিকল্পনা মনে মনে ছকে রেখেছিলাম।
আমার হোটেল কায়রো শহরের ডাউন টাউন অঞ্চলে। এ জায়গাটা কায়রো শহরের অপেক্ষাকৃত একটা প্রাচীন অঞ্চল। ইউরোপীয় স্থাপত্যে নির্মিত বেশ কিছু প্রাচীন বাড়ি আছে এ অঞ্চলে। পাঁচ-ছয়তলা বিশাল বিশাল বাড়ি। তাদের গায়ে ঝুলবারান্দাতে দাঁড়িয়ে নীচে রাস্তার জনপ্রবাহ দেখা যায়।
পরদিন সকাল আটটা নাগাদ রিসেপশনে গেলাম কয়েকটা বিষয়ে খোঁজখবর করার জন্য। দীর্ঘদেহী, জোব্বা পরা সাদা দাড়ির এক মিশরীয় ভদ্রলোক রিসেপশনে বসেছিলেন। বেশ অমায়িক, বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার। বললাম, ‘আজ তো কায়রোর বাইরে কোথও যাব না। নীলনদটা দেখে নেওয়া যায় কীভাবে?’
জবাবে তিনি বললেন, ‘এ জায়গা থেকে নীলনদের পাড়ের দূরত্ব বেশি নয়। ট্যাক্সিতে আধঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। ওদিকে কায়রো টাওয়ারও আছে। তার মাথা থেকে পাখির চোখে দেখা যাবে নীলনদের পাড়ে বিস্তৃত কায়রো শহরকে।’
একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলাম কায়রো টাওয়ার দেখব আর নীলনদের পাড়ে গিয়ে কিছু সময় কাটাব বলে। চালক পরামর্শ দিলেন, আগে কায়রো টাওয়ার যাওয়া দরকার। কারণ, বেলা যত বাড়বে, তত সেখানে ট্যুরিস্টদের ভিড় বাড়বে। টিকিট কেটে সেখানে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। টিকিট নম্বর ধরে লিফটে ওঠার ডাক আসে। কায়রো টাওয়ারের দিকেই চললাম প্রশস্ত রাজপথের দু’পাশ দেখতে দেখতে। ইজিপ্টের সরকারি ভবন, আধুনিক হোটেল, ঘর-বাড়ি সব কিছুই প্রাচীন স্থাপত্যের রঙে সাজানো। অর্থাৎ হলদেটে সাদা রং দেখা যায়। আরও দুটো জিনিস কায়রো শহরের রাস্তায় প্রায়শই চোখে পড়াতে বেশ খানিকটা অবাকই হচ্ছিলাম। এক হল হাত রুটি। ঠিক যেমন রুটি আমাদের ঘরে বানানো হয়। ঠিক তেমনই ফুলকো ফুলকো রুটি দোকানের সামনে বাঁশের চালিতে সাজানো আছে বিক্রির জন্য। আর দ্বিতীয় জিনিসটা হল বই। প্রতিটা রাস্তার মোড়ে অন্তত একটা বইয়ের দোকান চোখে পড়বেই। এ সব দেখতে দেখতে একসময় পৌঁছে গেলাম কায়রো টাওয়ারের সামনে।
আরবি নাম ‘বোর্গ এল কাহিরা’। ইংরেজি নাম কায়রো টাওয়ার। এই টাওয়ারটিকে মিশরের গিজার গ্রেট পিরামিডের পর সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ড মার্ক হিসাবে ধরা হয়। এই ‘এল কাহিরা’ শব্দের অর্থ হল ‘বিজয়ী’। ১৮৭ মিটার উচ্চতার এই টাওয়ারটি একসময় আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থাপত্য ছিল। টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম প্রাঙ্গণে। বেলা বেশি হয়নি বলে ভিড় বেশি নেই। টাওয়ারটির বাইরের ভাগের নির্মাণশৈলী জালিকাকার। মাথার উপর দিকে একটি বৃত্তাকার ঘেরা স্থান আছে। যেখানে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা নীচের পৃথিবীকে প্রত্যক্ষ করে। ডিসপ্লে বোর্ডে কিছু সময়ের মধ্যেই আমার টিকিট নম্বর ভেসে উঠল। কয়েক ধাপ অতিক্রম করে কাঠামোর ভিতর প্রবেশ করলাম। আরও কয়েকজন বিদেশি ট্যুরিস্টের সঙ্গে উঠে বসলাম লিফটে। ওপরের জায়গাটা রেলিং দিয়ে ঘেরা। সত্যি যেন নীচে তাকিয়ে হাতের মুঠোতে চলে এল কায়রো শহর। এ দৃশ্য একবার দেখলে যে সারা জীবন মনে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নীলনদ? তাকেও দেখতে পেলাম। গঙ্গা বা বড় নদীর মতো প্রশস্ত সে নয়। মাঝে মাঝে নর্তকীর কোমড়ে বিভঙ্গর মতো বাঁক নিয়েছে সে। কিন্তু কায়রো শহরের বড় বড় আধুনিক ঘর-বাড়িগুলো যেন দু’পাশ থেকে তাকে চেপে ধরছে। বইতে পড়া বা ছবিতে দেখা নীল নদের যে বিস্তৃতি তার সঙ্গে কোন মিলই এই নীলনদের। নদীর বুকে কয়েকটা বড় নৌকা বা প্রমোদতরী দেখা যাচ্ছে বটে তবে তারা স্থির অচঞ্চল। নীলনদের একটি অংশই শুধু দেখা যাচ্ছে, বাকি অংশ হারিয়ে গেছে শহরের বহুতলগুলোর আড়ালে। নীলনদের এই শীর্ণ অবস্থা দেখে আমার মনে হল হয়তো বা এত ওপর থেকে দেখছি বলেই তাকে এত শীর্ণ বেগহীন বলে মনে হচ্ছে। নীচে নেমে কাছে গিয়ে দেখলে হয়তো বা ছবিতে দেখা নীলনদের বিশালত্বকে খুঁজে পাব। আধঘণ্টার বেশি সময় থাকতে দেওয়া হয় না মিনারের নজর প্রাঙ্গণে।
দুই
নীলনদের গায়ে গাড়ির পার্কিং লটে পৌঁছতে মিনিট দশেক সময় লাগল। গাড়ি থেকে নামার পর ড্রাইভার সামনের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলল ওই যে নীলনদ। যে ভাসমান রেস্তরাঁগুলো আছে সেখানে সস্তায় বুফে সিস্টেমে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন। পায়ে গিয়ে দাঁড়ালাম নদীর পাড়ে। নদী আমার বড় পছন্দের। কত সভ্যতার জন্মদাত্রী নদী, কত মানুষের জীবিকার উৎস, কবির কাব্যির প্রেরণা। এবার বলি যে কথা দিয়ে এ লেখা শুরু করেছিলাম, অনেক সময়ই জানার সঙ্গে, ভাবনার সঙ্গে সেই নির্দিষ্ট জায়গা চর্মচক্ষে দেখার পর তা মেলে না। তবে সত্যিই নদীনদের পাড়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখে আমি একই সঙ্গে বিস্মিত ও মর্মাহত হলাম। পৃথিবী বিখ্যাত যে নদ-নদীগুলো আমার এ যাবৎকাল দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, তার সঙ্গে এ নদকে কোনওভাবেই যেন মেলানো যায় না! কোথায় তার বইতে পড়া দিগন্ত বিস্তৃতি? কোথায় তার নীল জল? যে জলে একসময় ভেসে বেড়াত প্রাচীন মিশরীয় ফ্যারাওদের প্রমোদ তরী! কোথায় তার প্রবহমানতা? এ যেন মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করে চলা এক নদী! শীর্ণ শরীর নিয়ে সে ধুঁকছে। নদীর তীরে যে ভাসমান হোটেলগুলো রয়েছে, তাদের গঠন জলযানের মতন হলেও তারা অচঞ্চল, স্থির। হোটেল আর কায়রো শহরের আবর্জনা এসে পড়ছে নীলনদের জলে। ভাসছে নানা ধরনের আবর্জনা। জলের রং কালো এবং প্রায় স্থিরই বলা যায়। এ জায়গায় নীলনদকে মজা খাল বললেও অত্যুক্তি হয় না। কায়রো শহরের আধুনিক বাড়ি-ঘর, এসব ভাসমান হোটেলগুলো যেন গলা টিপে মারতে উদ্যত হয়েছে নীলনদকে। অথচ এই নদী না থাকলে এই ঊষর মরুদেশে কোনও সভ্যতারই জন্ম হতো না। সূর্য মাথার ঠিক ওপরে। গরম লাগতে শুরু করছে। কাছেই একদল কাক নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে ট্যুরিস্টদের ফেলে যাওয়া খাবারের প্যাকেটের অধিকার নিয়ে। নদীর পাড়ে ফেলে রাখা আবর্জনার স্তূপ থেকে ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে এসে লাগছে। সে জায়গাতে আর বেশিক্ষণ থাকতে ভালো লাগল না। আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিল।
রিসেপশনে যখন চাবি নিতে গেলাম তখনও সেখানে সেই ভদ্রলোক বসে আছেন। তিনি জানতে চাইলেন ‘কেমন দেখলেন আমাদের নীলনদ?’ প্রশ্ন শুনে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ‘একদমই বাজে লেগেছে। শীর্ণ, অপরিষ্কার, গতিহীন। আমার কল্পনা বা দেওয়ালে টাঙানো ছবির সঙ্গে যেন কোনও মিলই পেলাম না।’
আমার কথা শুনে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন বৃদ্ধ। যেন তিনি আমার কথা শুনে মৃদু আহতও হলেন। কারণ এ দেশের সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যর সঙ্গে নীলনদের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। একটু চুপ করে থেকে তিনি বললেন, আমাদের ছেলেবেলাতেও এর চেহারা অন্যরকম ছিল। আমরা দল বেঁধে নীলনদে সাঁতার কাটতে যেতাম। তারপর শহর যত বাড়ল, তত ধীরে ধীরে সব কিছু হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনও নীলনদের সৌন্দর্য আছে। যে রকম নদী দেখতে চাইছেন আপনি। তবে তার জন্য আপনাকে কায়রো শহরের বাইরে যেতে হবে ক্রুজে করে। তারা তিন দিন নীলনদের বুকে ঘুরে বেড়ায়। নদীতীরের প্রাচীন দ্রষ্টব্যগুলো দেখিয়ে আবার কায়রো ফিরিয়ে আনে। আমি বললাম, আমার ট্যুর প্রোগ্রামে ওই সময় নেই। তাছাড়া শুনেছি ওইসব প্রমোদতরীর ভাড়াও অনেক। বৃদ্ধ মিশরীয় ভদ্রলোক আবারও একটু ভেবে নিয়ে বললেন, তবে আর একটা কাজ করতে পারেন। সন্ধ্যাবেলা এখানে রিভার ক্রুজের ব্যবস্থা আছে। সব মিলিয়ে তিন-চার ঘণ্টার প্রোগ্রাম। রাত্রিবেলা শহরের বাইরে তারাও আপনাকে নীলনদ দেখাতে নিয়ে যাবে। আশা করি আপনার সেটা ভালো লাগবে।
তিন
ঠিক সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হোটেলের সামনে গাড়ি এসে দাঁড়াল। প্রমোদতরীরই গাড়ি। রাতে তারাই আবার আমাকে হোটেলে নামিয়ে দেবে এমনই ব্যবস্থা। গাড়িতে উঠে বসলাম। তাতে রয়েছে আরও কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ পর্যটক। কায়রো শহরে এখন সন্ধ্যার ঝলমলে আলো ছড়াচ্ছে। কায়রো টাওয়ারেও আলোর খেলা শুরু হয়েছে। কখনও তা লাল হচ্ছে, কখনও নীল, সবুজ বা হলুদ। আমরা এগচ্ছি সেদিকেই। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম কায়রো টাওয়ারের কাছে নির্দিষ্ট জেটিতে। এখান থেকেই নদী বিহারের জন্য নৈশ প্রমোদতরীগুলো যাত্রা করে। বেশ কয়েকটা প্রমোদতরী নীলনদের বুকে ভাসার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। খুব সুন্দর করে সাজানো সেগুলো। মাথায় নিয়নের আলোতে তাদের নাম লেখা।
আমাদের প্রমোদতরীর নাম ক্লিওপেট্রা। কাঠের সাঁকো পেরিয়ে তাতে পা রাখতেই প্রাচীন মিশরীয় পোশাক পরা দু’জন ক্রুজ কর্মী স্বাগত জানালেন। প্রমোদতরীর দুটো অংশ। একটি ছাদহীন, রেলিং ঘেরা ডেক। আর অন্য দিকে রয়েছে কাঠের প্যানেল আর কাচ বসানো একটা ব্যাঙ্কোয়েট হলের মতো জায়গা। আমাদের নিয়ে যাওয়া হল কাচের দেওয়াল ঘেরা জায়গাতে। তার ঠিক মাঝামাঝি জায়গাতে একটা মঞ্চ মতো আছে। আর তাকে ঘিরে অতিথিদের বসা আর পানাহারের জায়গা। এক পাশে থরে থরে খাদ্যদ্রব্য সাজানো আছে। টিকিটের মধ্যেই তার দাম ধরা। পছন্দসই একটা জায়গা বেছে নিয়ে আমিও বসে পড়লাম। কিছু লোক আগেই ছিল সে জায়গাতে, বাকি আসনগুলো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেল। ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় একটা ভোঁ দিয়ে কেঁপে উঠে চলতে শুরু করল ক্লিওপেট্রা। একজন সুবেশী কোট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোক কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চে উঠে এলেন। পরিবহন সংস্থার তরফে তিনি অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলতে শুরু করলেন, আমরা রওনা হয়ে পড়েছি নীলনদের বুকে এগিয়ে চলার জন্য। আমাদের সৌভাগ্য আজকে পূর্ণিমার রাত। তাই আপনারা নদীবক্ষ থেকে চারপাশে বেশ খানিক দূর পর্যন্ত দেখতে পারেন। হ্যাঁ, এই সেই নীলনদ যা আপনারা বইয়ের পাতায় পড়েছেন, ছবি দেখেছেন। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম নদ। যা ইথিওপিয়ার পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্ট হয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুদান, উগান্ডা, কঙ্গো, কেনিয়া, তানজেনিয়া, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, মিশরসহ আরও বেশ কিছু দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে। আফ্রিকার ধমনীও বলা যেতে পারে এই নদকে। সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে নীলনদের অববাহিকা অঞ্চলে উর্বর জমিতে প্রথমে মানুষের বসবাস শুরু হয়।
তাঁর কথা শুনতে শুনতেই এক সময় খেয়াল করলাম কাচের দেওয়ালের ওপাশে কায়রো শহরের আলোকবিন্দুগুলো ধীরে ধীরে অনেকটাই যেন দূরে সরে গেছে। শহরকে পিছনে ফেলে নীলনদের গভীরে এগিয়ে চলেছে ক্লিওপেট্রা।
দেখলাম, সকালে যে নীলনদ দেখে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল তার সঙ্গে এ নীলনদের কোনও মিলই নেই। আধুনিক সভ্যতা এখনও মিশরের নীলনদকে গ্রাস করতে পারেনি। আমার চোখের সামনে চরাচরহীন জলরাশি। নদের এক পাড় ঘেষে আমাদের প্রমোদতরী চলছে। তবে পাড়ে কোনও জনবসতি নেই। যতদূর চোখ যায় চাঁদের আলোতে দেখা যাচ্ছে ধূসর মরুভূমি আর বালির টিলা। এক অপার্থিব সৌন্দর্য। যখন চন্দ্রালোকিত রাতে নীলনদের বুকে এমনই তরী ভাসাতেন মিশর সুন্দরী ক্লিওপেট্রা। এ যেন আমার স্বপ্নে দেখা নীলনদ। 

রাশিফল