শুক্রবার, 11 জুলাই 2025
Logo
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

বিশ্বাসের অলৌকিক বেঁচে ফেরা

কনুইয়ের ছাল-চামড়া উঠে গিয়েছে। শরীরে রক্তের দাগ। ঝলসে যাওয়া গোটা চত্বর... ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসছেন তিনি। সামান্য খুঁড়িয়ে। দেখে মনে হচ্ছে, তেমন কিছুই হয়নি। 

বিশ্বাসের অলৌকিক বেঁচে ফেরা

আমেদাবাদ: কনুইয়ের ছাল-চামড়া উঠে গিয়েছে। শরীরে রক্তের দাগ। ঝলসে যাওয়া গোটা চত্বর... ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসছেন তিনি। সামান্য খুঁড়িয়ে। দেখে মনে হচ্ছে, তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু তিনি যে বেরিয়ে আসছেন ওই এয়ার ইন্ডিয়া ড্রিমলাইনার বিমান থেকেই! সেই বোয়িং ৭৮৭’এর লেজটা ঝুলছে বাড়ির মাথায়। ডানাগুলো আধপোড়া অবস্থায় ভেঙে পড়ে আছে। চারদিকে শুধুই পুড়ে যাওয়া মৃতদেহের গন্ধ। কিন্তু তিনি হেঁটে আসছেন। বছর চল্লিশের বিশ্বাস কুমার রমেশ। সিট নম্বর ‘১১এ’। অলৌকিক? হতে পারে। কিন্তু ১০০ শতাংশ সত্যি। রাখে হরি মারে কে! 
টেক অফের কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিল বিমানটা। কারও বেঁচে থাকার আশা ছিল না। সময় যত এগিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ঘোষণা বেড়েছে। কিন্তু ওই তালিকায় বিশ্বাস নেই। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে তিনি এখন আমেদাবাদের আসরবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ‘১২ এ’ সিট কার ছিল? গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। বেঁচে ফেরেননি তিনি। তাঁর মতো আরও দুই শতাধিক যাত্রী। হাসপাতালে, দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে প্রিয়জনের দেহ হাতড়াচ্ছে পরিজন। ঘুরছে উদভ্রান্তের মতো। চেনাই যে দায়! পুড়ে খাক তো সবই! আর এই মৃত্যুর ধ্বংসস্তূপেই যেন নতুন জন্ম হল বিশ্বাসের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর চোখে, বুকে ও পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে। 
‘টেক অফের কিছুক্ষণের মধ্যেই কানে এল বিকট শব্দ। কোনওকিছু টের পাওয়ার আগেই ভেঙে পড়ে আমাদের বিমান। এক মুহূর্তে কী যে হয়ে গেল, বুঝতে পারিনি।’ হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলছিলেন ব্রিটেনের এই নাগরিক। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে দিন কয়েকের জন্য ভারতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার ভাই অজয় কুমার রমেশের সঙ্গে ব্রিটেনের উদ্দেশে পাড়ি দেন। কিন্তু আর ফেরা হল না। বিশ্বাসের কথায়, ‘চোখ খুলে দেখি, এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত-দগ্ধ দেহ। উঠে ছুটতে শুরু করি। পরে একজন আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’ একটু পরেই ঢোক গিলে তাঁর কাতর আর্জি— ‘আমার সঙ্গে ভাই ছিল। ওকে খুঁজে পাচ্ছি না! দয়া করে কেউ বলবেন, ও কোথায় আছে? কেমন আছে?’ রক্ত মাখা ফোলা চোখ থেকে তখন জল গড়িয়ে পড়ছিল বিশ্বাসের। পাশে রাখা বোর্ডিং পাসটা... এয়ার ইন্ডিয়া ইকনমি, সিট ১১এ।

রাশিফল