মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়

মেয়েরা তখন পর্দানশীন। কৌলিন্য প্রথা, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও সতীদাহ গোটা সমাজের উপর জাঁকিয়ে বসে রয়েছে। তাদের দুর্বিষহ জীবনের কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ‘ভারত পথিক’ রাজা রামমোহন রায়। 

ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়

প্রধান শিক্ষকের কলমে

মেয়েরা তখন পর্দানশীন। কৌলিন্য প্রথা, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও সতীদাহ গোটা সমাজের উপর জাঁকিয়ে বসে রয়েছে। তাদের দুর্বিষহ জীবনের কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ‘ভারত পথিক’ রাজা রামমোহন রায়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম সমাজ নারীমুক্তি ও নারী কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছিল। রামমোহনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেনরা। গড়ে তুলেছিলেন একাধিক বিদ্যালয়। পরবর্তীকালে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের উদ্যোগে শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গামোহন দাস প্রমুখের চেষ্টায় শুরু হয় নতুনের পথচলা। ১৮৯০ সালের ১৬ মে প্রতিষ্ঠা হয় ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়।
১৩ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রিট (অধুনা বিধান সরণী)-এর লাহাদের বাড়িতে ১৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে এই স্কুল শুরু হয়। তখন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী গান শেখাতেন এবং পড়াতেন। তারপর ভূমিকম্পের কবলে পড়ে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্কুল স্থানান্তরিত হয় মির্জাপুর স্ট্রিটে (সূর্য সেন স্ট্রিট)। এরপর আপার সার্কুলার রোড (আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড)-এর উপর তৈরি হয় নতুন ভবন। দুর্গামোহন দাসের জমি এবং তাঁর পরিবারের সাহায্যে। পরবর্তীতে উপন্দ্রেকিশোরের পরিবারের আর্থিক সহায়তায় স্কুলের কলেবর বৃদ্ধি পায়। ১৯২৮ সালের ২ এপ্রিল শিক্ষালয়ের দ্বারোদ্ঘাটন করেন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু।
১৯৩০ সালে লেডি অবলা বসু চালু করেন মন্তেসরি বিভাগ। তিনি ছিলেন স্কুল অন্তপ্রাণ। জগদীশচন্দ্রের পত্নী লেডি অবলার উদ্যোগে এই স্কুলে যোগদান করেন মিস সেকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্ধ হয় পঠনপাঠন। তখন মিস সেকারের নেতৃত্বে সুদূর মধুপুরে চলতে থাকে স্কুল। পরবর্তীকালে ফের এপিসি রোডের ভবনে স্কুল চালু হয়। এই শিক্ষালয়ের মূলমন্ত্র— শ্রদ্ধয়া, তপসা, সেবয়া। এই তিনটি মন্ত্রের উপর ভিত্তি করে স্কুলটি বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করেছে।
বহু ইতিহাস ছড়িয়ে আছে স্কুলের অন্দরে। শুরুর দিন থেকে আজও মেয়েদের হস্টেল চালু রয়েছে। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের নিয়মনীতিতে পরিচালিত হয় শিক্ষালয়টি। ১৩৫ বছরের প্রাচীন এই স্কুলে আজও বজায় আছে ঐতিহ্য ও পরম্পরা। লাইব্রেরিতে আছে দুষ্প্রাপ্য বই। বর্তমানে রয়েছে ৭০০ ছাত্রী। উপেন্দ্রকিশোরের দুই কন্যা সুখলতা, পুণ্যলতা সহ সুপ্রভা চৌধুরী, নলিনী দাশ, ফুলরেণু গুহ, ঊর্মিমালা বসু প্রমুখ ছিলেন এই স্কুলের কৃতী প্রাক্তনী।
—রুবি সাহা চক্রবর্তী, টিচার-ইন-চার্জ

সংকলক: শম্পা সরকার
ছবি: দীপেশ মুখোপাধ্যায়

রাশিফল