শুক্রবার, 18 জুলাই 2025
Logo
  • শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

টেক অফেই বিপর্যয়, আমেদাবাদে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান, মৃত ২৬৬

সবে আমেদাবাদ বিমানবন্দরের রানওয়ে ছাড়িয়েছে বিমানের চাকা। উড়েছিল সাকুল্যে ৬২৫ ফুট। প্রাণপণে উপরে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই এল বিপদসঙ্কেত... ‘মে ডে... মে ডে... মে ডে’! তারপরই সব চুপ।

টেক অফেই বিপর্যয়, আমেদাবাদে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান, মৃত ২৬৬

আমেদাবাদ: সবে আমেদাবাদ বিমানবন্দরের রানওয়ে ছাড়িয়েছে বিমানের চাকা। উড়েছিল সাকুল্যে ৬২৫ ফুট। প্রাণপণে উপরে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই এল বিপদসঙ্কেত... ‘মে ডে... মে ডে... মে ডে’! তারপরই সব চুপ। বিমান দ্রুত নেমে এল নীচের দিকে। বিশাল বিস্ফোরণ। লেলিহান আগুন-কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী লাফিয়ে গিলে নিল আকাশ। ২৩০ জন যাত্রীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার শহরের আবাসিক এলাকা মেঘানিনগরে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান। গুজরাতের আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে টেক অফের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই। বিমানে ছিলেন ২ জন পাইলট ও ১০ জন ক্রু সদস্যও। মোট ২৪২ জন। তাঁদের মধ্যে একজন অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে গিয়েছেন। বাকি কাউকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যায়নি। ভারতের ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও।
এদিন দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে রানওয়ের শেষপ্রান্ত ছাড়িয়ে উড়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার (এআই১৭১)। বিমানবন্দরের অদূরে বি জে মেডিক্যাল কলেজের অতুল্য হস্টেল, নার্সিং ও স্টাফ কোয়ার্টারের গায়ে সেটি আছড়ে পড়ে। সবে দুপুরের খাবার খেতে বসেছিলেন ডাক্তারি পড়ুয়া-ইন্টার্নরা। হস্টেল বিল্ডিং ভেঙে ঢুকে যায় বিমানের বিভিন্ন অংশ। সেই ঘটনার অভিঘাতে সাত চিকিৎসক পড়ুয়া-ইন্টার্ন সহ ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া হস্টেল, গোটা চত্বর, আর মৃতদেহের সারি। গোটা দেশ শিউরে উঠেছে এই ছবি দেখে।
বেসরকারি সূত্রে দাবি, এদিনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৬৬ জন। যদিও সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি। ডিএনএ টেস্টের পর নিহতদের চিহ্নিত করা হবে। তারপরই এব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। ড্রিমলাইনারের মতো সবচেয়ে নিরাপদ বিমান এই প্রথম দুর্ঘটনার মুখে পড়ল। তাই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে নির্মাতা সংস্থা বোয়িংও। এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা ২০২১ সালে টাটা গোষ্ঠীর হাতে গিয়েছে। তারপর এই প্রথম কোনও দুর্ঘটনা ঘটল এই সংস্থার বিমানে। নিহতদের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে টাটা গোষ্ঠী। আহতদের চিকিৎসার সব দায়িত্বও তারা বহন করবে।
দুর্ঘটনার হাড় হিম করা বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। সুদূর লন্ডন যাওয়ার জন্য বিমানটিতে ছিল প্রায় ৬০ হাজার লিটার জ্বালানি। ফলে দুর্ঘটনার পর বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও লাগোয়া বহুতলে আগুন নেভাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে। পুড়ে কালো হয়ে যায় বহুতল ও গাছপালা। দুর্ঘটনাস্থলে অবস্থিত বহুতলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন ধাতব অংশ আটকে থাকার অসংখ্য ছবিও সামনে এসেছে। উদ্ধারের কাজে নামে কেন্দ্র ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আটটি টিম এবং ভারতীয় সেনাও। ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের (ডিজিসিএ) তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিমানটি দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে আমেদাবাদের ২৩ নম্বর রানওয়ে থেকে উড়েছিল। বিমানের তরফে এটিসিকে মে ডে কল করা হয়। কিন্তু এরপর এটিসি বহুবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিমানটির দিক থেকে কোনও সাড়া মেলেনি।’ দুর্ঘটনার পর আমেদাবাদ বিমানবন্দরের পরিষেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়।
নিজের রাজ্যেই এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নাইডুর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। মোদির নির্দেশেই দ্রুত আমেদাবাদ পৌঁছে যান তাঁরা। রামমোহন নাইডু এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আমেদাবাদে বিমান ভেঙে পড়ার কথা শুনে স্তম্ভিত ও বিপর্যস্ত। এভিয়েশন ও ইমার্জেন্সি রেসপন্স এজেন্সিগুলিকে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছি।’ শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ব্রিটেনের রাজপরিবারের তরফেও এসেছে শোকবার্তা।

রাশিফল