নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: নতুন বইয়ের গন্ধে ম-ম করছে প্রাঙ্গণ। কান পাতলেই ঠুকঠাক শব্দ। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কাঠের কাঠামোর গায়ে সাজছে নকশা, কারুকার্য। বাঙালির এই ‘দ্বিতীয় দুর্গোৎসব’ শুরুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন লক্ষ লক্ষ পাঠক। কারণ, ভিড় ঠেলে তাঁরাই তো খুঁজে নেন প্রিয় লেখকের নতুন-পুরনো বই। আজ সেই অপেক্ষার অবসান। আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হতে চলেছে ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। স্টলের সংখ্যাও এবার সর্বাধিক। ফোকাল থিম কান্ট্রির প্যাভিলিয়নেও থাকছে চমক। কারণ, যাঁর হাত দিয়ে জার্মানির প্যাভিলিয়ন তৈরি হচ্ছে, তিনি একজন বাঙালি স্থপতি। নাম অনুপমা কুণ্ডু। জন্ম ভারতেই। তবে, কর্মসূত্রে রয়েছেন বার্লিনে। কলকাতায় তাঁর প্রথম কাজ। বাবা-মায়ের শহর। তাই এক অন্য আবেগ।
ময়দান থেকে সায়েন্স সিটি ঘুরে বইমেলা সরে এসেছে সল্টলেকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন বইমেলার নিজস্ব ঠিকানা। তাই সেন্ট্রাল পার্ক এখন বইমেলা প্রাঙ্গণ। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রধান গন্তব্য। এবার সল্টলেকেও ফিরছে ময়দানের স্বাদ। কারণ, বইমেলা এ বছর খোলা আকাশের নীচেই। ইংরেজি প্রকাশনার যে এসি প্যাভিলিয়ন থাকত, তুলে দেওয়া হয়েছে। এবার সহজে স্টল খুঁজে পেতে তৈরি হয়েছে বইমেলার মোবাইল অ্যাপ। পাশাপাশি, মেলার ৯টি গেটেই থাকবে কিউআর কোড। যেখানে স্ক্যান করলেই মিলবে গাইডম্যাপ।
সোমবার বইমেলার আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে এবং সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘গত বছর ছোট ও বড় মিলিয়ে ১০৫০টি স্টল হয়েছিল। এবার তা বেড়ে ১০৫৭টি হয়েছে। অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত বইমেলার ইতিহাসে সর্বাধিক।’ তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিকেল ৪টে নাগাদ উদ্বোধন করবেন। সেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত হবে বইমেলা দরজা। অর্থাৎ, গতবারের মতো এবারও উদ্বোধনের দিন থেকেই খুলে যাবে কলকাতা বইমেলা।
১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন দেখা গেলেও এবার সেই অভাবটা থাকছে। তবে, ৪৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার ফোকাল থিম কান্ট্রি হয়েছে জার্মানি। থিম কান্ট্রির প্যাভিলিয়ন তৈরি করছেন বিখ্যাত আর্কিটেক্ট অনুপমা কুণ্ডু। শতাধিক বুকশেল্ফ দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্যাভিলিয়ন। লোহার কাঠামোয় ঝুলন্ত অবস্থাতেও থাকছে ওই বুকশেল্ফ। ভিতরে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে আকাশের নীল রং। থাকবে আলোর কাজ। প্যাভিলিয়নের ভিতরে দাঁড়িয়ে অনুপমাদেবী একান্তে শোনালেন থিমের গল্প। বললেন, ‘এই থিমের নাম দিয়েছি সেল্ফ লাইফ। একটা বইয়ের তাক মানুষকে অনেক কিছু দিতে পারে।’ তাঁর স্মৃতিচারণা, ‘আমার জন্ম মুম্বইয়ে। তবে, আমার বাবা-মা কলকাতার। আমি কর্মসূত্রে বার্লিনে থাকি। ভারতের পুদুচেরিতেও বাড়ি আছে। ভারতে অনেক কাজ করেছি। তবে, কলকাতায় এই প্রথম কোনও কাজ করলাম। বাবা-মা আজ বেঁচে নেই। তবে উপর থেকে নিশ্চয়ই দেখছেন।’