নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বাঁকুড়া: ‘বাঁচার কোনও রাস্তা নেই!’ এই হুঁশিয়ারি জারি করে তৃণমূল নেতাদের জীবন কার্যত ‘হাতের মুঠোয়’ নিয়ে নিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ভগবান আর সিবিআই-কে এক আসনে বসিয়ে তৃণমূল নেতাদের ‘তুলে’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। যা নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের সরাসরি অভিযোগ, এতো একেবারে প্রাণে মারার হুমকি!
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হুমকি দিতে অভ্যস্ত। কখনও ‘বুকে পা তুলে দেব’, আবার কখনও ‘তৃণমূল নেতাদের পিছনে পেট্রল ঢেলে দিন, দেখুন কেমন দৌড়য়’—চটকদার হুমকিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু শনিবার যে মন্তব্য দিলীপ ঘোষ করেছেন, তা যাবতীয় বিতর্কের পরিধিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে। শনিবার বাঁকুড়ার মাচানতলায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দিলীপবাবুর হুমকি, ‘যারা আমাদের পিছনে লাগবে, দেশের ক্ষতি করবে, সমাজের ক্ষতি করবে, ভগবান নিয়ে যাবে। নইলে সিবিআই নিয়ে যাবে। বাঁচার কোনও রাস্তা নেই।’
বিজেপি নেতার এই বক্তব্য সামনে আসার পর বাংলার রাজনৈতিক পরিসরে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তাদের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে হেনস্তা, নতুবা প্রাণে মেরে দিতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির বিরুদ্ধাচরণ করলে বেঁচে থাকা যাবে না, মরে যেতে হবে—এটাই সহজ-সরল স্বীকারোক্তির মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন দিলীপবাবু।
সামাজিক পরিসরে ভগবান, ঈশ্বর, আল্লাহর কাছে যাওয়া মানে জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যুকেই বোঝায়। কিন্তু জীবিত কাউকে ‘ভগবান নিয়ে যাবে’ বলা আসলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিরই নামান্তর বলে মনে করছে তৃণমূল। এখানেই শেষ নয়। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরে তৃণমূলের ‘ভবিষ্যৎ’ নির্ধারণ করে দিয়েছেন দিলীপবাবু। তাঁর কথায়, ‘মোদির পিছনে কাঠি করলে উদ্ধব থ্যাকারে, নীতীশ কুমার, মুলায়ম হয়ে যাবে। বাকিদের অবস্থা মমতার মতো হবে।’ এক্ষেত্রে কুণালের অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে বিজেপি এখন ইডি, সিবিআইকে শাখা সংগঠন হিসেবে ওই কাজে নামিয়েছে। তবে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির এই বক্তব্য যে আগামী কয়েক দিন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চর্চার বিষয় হবে, তা বলাই বাহুল্য। সেই রেশ ধরে দিলীপকে তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘শকুনের অভিশাপে গোরু মরে না।’ এদিন বড়জোড়া, ওন্দাতেও তৃণমূলকে চড়া সুরে বিঁধেছেন দিলীপ। ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, পার্টির মধ্যে ভোট হচ্ছে। ব্যালট বাক্স লুট হচ্ছে। কীভাবে পঞ্চায়েত ভোট লুটবে, তার প্র্যাকটিশ চলছে। পাল্টা তৃণমূলের উত্তর, সব আসনে প্রার্থী দিতে পারবে কি না, বিজেপি আগে সেটা দেখুক।