কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
অনেক ছাত্রছাত্রীই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশের আগে থেকেই স্থির করে রাখে তারা কী নিয়ে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যাবে। তবে কোনও একটা বিষয় নিয়ে পড়ার আগে তার গুরুত্বটা বুঝে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। একজন ছাত্রছাত্রী হঠাৎ কেন উচ্চশিক্ষার জন্য কৃষিবিদ্যাকে বেছে নেবে? আমাদের দেশে যাঁরা গ্রামে বাস করেন, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ কোনও না কোনওভাবে কৃষির সঙ্গে যুক্ত। দেশ যখন সবে স্বাধীন হয় ১৯৫০ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো বছরে ৫১ মিলিয়ন টন। সেটা বেড়ে এবছর হয়েছে ৩১০ মিলিয়ন টন। খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা পাওয়ার একমাত্র পথ কৃষি। তাই কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। স্বল্প আয়তন জমি ও কম পরিশ্রমে কীভাবে বেশি ফসল উৎপাদন করা যায় সেই পথ দেখাতে পারেন কৃষি স্নাতকরা। এগ্রিকালচার বিষয়টির সমাজে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করবে ভাবছে, তারা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
পরাধীন ভারতেই কৃষি নিয়ে পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। ১৯০৬ সালে অবিভক্ত ভারতের আগ্রা, কোয়েম্বাটোর এবং লয়ালপুরে (অধুনা পাকিস্তানের ফয়সলাবাদ) গড়ে ওঠে এগ্রিকালচার কলেজ। বর্তমান ভারতে ৭৩টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে ৫টি ডিমড ইউনিভার্সিটি। আর আছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কৃষি শিক্ষা দেওয়া হয়। যেমন— বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতে প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে ১৯৬০ সালে তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের (উত্তরাখণ্ড)-এর পন্থনগরে। বর্তমানে যেটি জি বি পন্থ ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি নামে প্রসিদ্ধ। ভারতে কৃষি নিয়ে পড়াশোনার জন্য রয়েছে তিনটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলি হল— ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সমস্তিপুরের ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মণিপুরের ইম্ফলে সেন্ট্রাল এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি। আমাদের রাজ্যে আছে দু’টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়— একটি নদিয়ার মোহনপুরের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচবিহারে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
কীভাবে সুযোগ মেলে?
স্নাতকস্তরে কৃষি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের। তবে, তাদের সাবজেক্ট কম্বিনেশনে অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান জীববিদ্যা ও রসায়ন থাকতেই হবে। এছাড়াও ইংরেজি থাকা বাধ্যতামূলক।
উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে অনেক সময় স্নাতকস্তরে ভর্তি নেওয়া হয়। আবার কোনও সময় প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে এগ্রিকালচার (ইউজি) কোর্সে সুযোগ পেতে হয়। আইসিএআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে সর্বভারতীয় পরীক্ষার আয়োজন করে। এই পরীক্ষায় পাশ করলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়, তেমনই ফেলোশিপও পাওয়া যায়। স্নাতকস্তরে এগ্রিকালচার চার বছরের কোর্স। মোট আটটি সেমেস্টার রয়েছে। পড়ানো হয় অ্যাগ্রোনমি, এন্টোমোলজি, প্ল্যান্ট প্যাথোলজি, ইকনমিক্স, কৃষি সম্প্রসারণ, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ইত্যাদি। থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল থাকে।
ভবিষ্যৎ সুযোগ
রাজ্যের কৃষি দপ্তরের অনেক কাজের ক্ষেত্রে এগ্রিকালচার গ্র্যাজেুয়েটদেরই নেওয়া হয়।
অন্যান্য বিষয়ের স্নাতকদের মতোই এগ্রিকালচার গ্র্যাজুয়েটরা যেকোনও সরকারি প্রতিযোগিতামূলক (আইএএস, আইপিএস, ডব্লুবিসিএস ইত্যাদি) পরীক্ষায় বসতে পারে। কৃষি স্নাতকদের কর্মসংস্থানের বিশেষ গন্তব্যস্থল হল অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি সেক্টর।
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এগ্রিকালচার বিষয় হিসেবে নিলে অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কম থাকে।
ফরেস্ট সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে।
বিভিন্ন কৃষি গবেষণাগারে কাজের সুযোগ থাকে।
প্রচুর বেসরকারি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে। তারা প্রশিক্ষিত কর্মীদের সুযোগ দেয়। এক্ষেত্রে এগ্রিকালচার নিয়ে পড়লে সুযোগ পাওয়া যায়।
সার কারখানাতে কাজের সুযোগ থাকে। যেমন— আইএফএফসিও, আরসিএফ, এনএফএল ইত্যাদি।
এমএসসি ও পিএইচডি করলে এগ্রিকালচার রিসার্চ সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে কৃষি বিজ্ঞানী হওয়ার সুযোগ থাকে।
এমএসসি ও পিএইচডি করলে অধ্যাপনারও সুযোগ রয়েছে।