কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
নীচের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর তোমাকে দিতে পারে সেই সঠিক পথের দিশা:
১) কোন বিষয়ে তোমার আগ্রহ
২) কোন পেশায় তোমার উৎসাহ
৩) সেই পেশায় উন্নতির সম্ভাবনা কতটা
৪) উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে কি
৫) এবং অবশ্যই তোমার প্রত্যাশামতো পে-প্যাকেজ অথবা আজকের কথায় ‘রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট’ সুনিশ্চিত কি না।
এমন এক পথের ঠিকানা – মার্চেন্ট নেভি অফিসার।
পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল এ তো আমরা সবাই জানি। এই বিশাল জলরাশিকে অবলম্বন করেই যুগ যুগ ধরে গড়ে উঠেছে সারা বিশ্বের জল পরিবহণ বাণিজ্যশিল্প। এই জলপথ ধরেই বিশ্বের ৯০ শতাংশ পণ্য পরিবহণ হয়। তাই তো শিপিং ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্ব বাণিজ্যের লাইফলাইন বলা হয়। আমাদের ভারতবর্ষের উপকূল রেখার দৈর্ঘ্য ৭ হাজার কিমির বেশি। আর এই সুবিস্তৃত উপকূল জুড়ে কোস্টাল শিপিংয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ভারতীয় উপকূল বাণিজ্য। এই পথ জুড়ে আছে ছোট বড় অনেক সরকারি বেসরকারি বন্দর আর চলাচল করে ১ হাজারটিরও বেশি ভারতীয় উপকূলীয় জাহাজ। সম্প্রতি ভারত সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এই সুদীর্ঘ সমুদ্র উপকূলকে ব্যবহার করে কোস্টাল শিপিংকে আরও উন্নত করা এবং তার ফলে অদূর ভবিষ্যতে কোস্টাল শিপিং এবং বন্দরে বাড়বে অনেক কাজের সুযোগ।
সুপ্রাচীনকালের চাঁদ সওদাগরের পালতোলা বাণিজ্যতরণী আজ আর নেই। তার জায়গা নিয়েছে আজকের আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি জাহাজ-অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংবলিত ইলেকট্রিক ইঞ্জিন এবং পাঁচতারা হোটেলের সুবিধাযুক্ত বিলাসবহুল অত্যাধুনিক ক্রুজ।
বিশাল অন্তহীন সমুদ্রের পথ ধরে এই জাহাজ নিয়ে যাঁরা ২৪ × ৭ এক বন্দর থেকে আর এক বন্দরে মাল বা প্যাসেঞ্জারদের নিরাপদে এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেন, তাঁদেরকে আমরা বলি সিফারার বা চলতি কথায় নাবিক। প্রতিটি জাহাজ পরিচালিত হয় কিছু আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডিসিপ্লিনড অফিসার এবং ক্রু দ্বারা। এই অফিসাররাই হলেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার। এই কেরিয়ার পথ অবশ্যই দিতে পারে এক সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং গণিত নিয়ে ১০+২ পাশ করতে হবে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে আর ইংরেজিতে স্কোর করতে হবে ৫০ শতাংশের বেশি।
ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পরিচালিত কমন অ্যাডমিশন টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং তার পরেই তোমার পছন্দমতো যে কোনও আইএমইউ অনুমোদিত বা ডিজি শিপিং অনুমোদিত মেরিন কলেজে এই কোর্স পড়া যাবে।
মেরিটাইম কোর্সগুলির বিভিন্ন ভাগ হল:
১) মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চার বছরের বি-টেক ডিগ্রি
২) নটিক্যাল সায়েন্সে ৩ বছরের বিএসসি ডিগ্রি
৩) নটিক্যাল সায়েন্সে ১ বছরের ডিপ্লোমা
এছাড়াও স্নাতক মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারদের এক বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা করে মার্চেন্ট নেভি ইঞ্জিনিয়ার অফিসার হয়ে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ আছে। চার বছরের বি-টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং / এক বছরের পিজিডিএমই কোর্স সম্পূর্ণ করার পরে, ছয় মাসের জন্য ট্রেনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে জাহাজে জয়েন করতে হবে। তবেই তারা ডি জি শিপিং পরিচালিত সার্টিফিকেট অব কমপিটেন্সি পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা অর্জন করবে। আন্তর্জাতিক এসটিসিডব্লু কনভেনশন অনুসারে এর পরেই শুরু হবে জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা।
একইভাবে, বিএনএস অথবা ডিএনএস কোর্স শেষ হওয়ার পরে ডেক ক্যাডেট হয়ে যোগ দিতে হবে ৫০০ জিআরটি’র যে কোনও জাহাজে। যথাক্রমে ১২ মাস / ১৮ মাসের ট্রেনিং সম্পূর্ণ করার পরে তাঁরা বসতে পারবেন ডি জি শিপিং পরিচালিত সেকেন্ড মেট পরীক্ষা আর এভাবেই শুরু হয়ে যাবে জাহাজের ক্যাপ্টেন হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলা।
যদি আমরা ধরে নিই যে, একজন ছাত্র তার ২২ বছর বয়সে ট্রেনি হয়ে শিপে জয়েন করেছে তাহলে এটা আশা করাই যায়, ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই তাঁর পক্ষে ক্যাপ্টেন বা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠা নিশ্চয়ই সম্ভব। বর্তমানে আন্তর্জাতিক যে কোনও শিপিং সংস্থায়-চিফ ইঞ্জিনিয়ার / ক্যাপ্টেনের বেতন আনুমানিক ১১ থেকে ১৬ লক্ষ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৯ থেকে ১৩ কোটি টাকা।
সুতরাং মার্চেন্ট নেভি কেরিয়ার নিশ্চিতরূপে সুযোগ করে দেয় ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে একটা নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং এক পেশা থেকে আর এক পেশায় চলে যাওয়ার স্বাধীনতা। একটা মজবুত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তাকে দিতে পারে নতুন কোনও স্টার্ট আপ শুরু করার সুযোগও। ক্যাপ্টেন অথবা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে জাহাজে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে খুলে দেবে আরও অনেক কাজের সুযোগ, যেমন— ১) ইউপিএসসি দিয়ে গভঃ সার্ভেয়ারের চাকরি ২) ক্লাস সার্ভেয়ারের চাকরি ৩) কোনও শিপিং সংস্থায় শিপ সুপারিনটেন্ডেন্ট ৪) শিপ চার্টারিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ৫) ওএনইজিসি’র মতো অফশোর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ ৬) এবং অবশ্যই শিক্ষকতা।
উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক সুযোগ আছে এই কেরিয়ারে— একস্ট্রা ফার্স্ট ক্লাস / একস্ট্রা মাস্টার সার্টিফিকেট অব কমপিটেন্সি, এমবিএ ইন শিপিং এবং নানা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ও রিসার্চ প্রোগ্রাম।