কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
অভিষেক বচ্চন, আহিল্যা বমরু, পার্লে দে, জনি লিভার
দুই মেরুতে আবর্তিত জীবন। মানুষের তৈরি বিপণনের হিসেবি নিয়মের বেড়াজালে এক মেরু আবদ্ধ। সেখানে কথার জাদুতে প্রতিপক্ষকে ছারখার করে দেওয়াই রীতি। জীবনের বিপরীত মেরুটি নিয়তি চালিত। সেখানে মানুষের তৈরি কোনও নিয়ম খাটে না। কোনও এক অদৃশ্য শক্তির অঙ্গুলিহেলনে তার গতিপথ নির্ধারিত হয়। এই দুই মেরুতেই অর্জুন সেনের (অভিষেক বচ্চন) সফরের গল্প শুনিয়েছেন পরিচালক সুজিত সরকার। ‘আই ওয়ান্ট টু টক’ অভিষেককে যতখানি সুযোগ দিয়েছে, তিনি তার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন।
অর্জুনের জীবনের মেয়াদ আর একশো দিন। অন্তত চিকিৎসকদের ভবিষ্যদ্বাণী তেমনই। তার বিবাহবিচ্ছিন্ন জীবনে প্রাক্তন স্ত্রীর কোনও প্রত্যক্ষ পর্দা উপস্থিতি নেই। কিন্তু সেই ভাঙনের অভিঘাত রয়েছে অর্জুনের নিঃসঙ্গ জীবনে। হয়তো সেই নিঃসঙ্গতাকে আরও গভীর ভাবে বোঝানোর জন্য ছবিতে কোনও গৃহপরিচারক বা রাঁধুনির দেখা মেলেনি। অর্জুন ক্রমশ কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। হারিয়েছে চাকরি ও মাথার ওপরের নিরাপদ ছাদও। একমাত্র মেয়ে রিয়ার (আহিল্যা বমরু) সঙ্গে ভিডিও বার্তায় কোনওক্রমে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রেখেছে সে। কখনও কখনও পূর্ব নির্ধারিত তারিখে মেয়ের সঙ্গে বাবার দেখা হয়। কর্কশ স্বভাবের মেয়ের কৌতূহলী নানা প্রশ্ন সযত্নে এড়িয়ে যেতে সাবধানী উত্তর সাজায় অর্জুন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও দ্বিধাবোধ তার। আবার, জীবনের কিছু অনিবার্য স্ববিরোধও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ছবিতে। যে সহায়ক (ক্রিস্টিন গোদার্ড) অর্জুনকে আত্মহননের ধ্বংসাত্মক ভাবনা ছেড়ে জীবনকে ভালোবাসতে শেখাল, শেষ পর্যন্ত সেই সহায়কই ধ্বংসের পথ বেছে নিল। বাবা, মেয়ের সম্পর্কের রসায়নেও এমন অগুনতি স্ববিরোধ পাওয়া যায়।
প্রথম ঘণ্টার চিত্রনাট্য নির্জীব। লেখক রীতেশ শাহ তার দায় এড়াতে পারেন না। বিরতির কিছুটা পর থেকে কাহিনির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাকশন থ্রিলার ও সাসপেন্স ড্রামার দুনিয়া থেকে হঠাৎ জীবনবোধের দুনিয়ায় অভিবাসী হয়ে রীতেশ গতি ও ভারসাম্য হারিয়েছেন। একই ধরনের গল্পে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘আনন্দ’ ছবিতে করুণ ও হাস্যরসের যে ধ্রুপদী যুগলবন্দি দেখা গিয়েছিল, এখানে তা পাওয়া যায়নি। এমনকী, সুজিতের ‘অক্টোবর’ বা ‘পিকু’ ছবির গভীরতাও স্পর্শ করেনি এই সিনেমা।
হতাশা, সংশয়, দ্বিধা ও সংকল্পের মেলবন্ধনে অনবদ্য অভিনয় করেছেন অভিষেক বচ্চন। কেবল তাঁর জন্যই এই সিনেমা একাধিকবার দেখা যায়। আহিল্যা বমরুর আন্ডার-অ্যাক্টিং অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত। ছোটবেলার রিয়ার চরিত্রে পার্লে দে’র অভিনয়ে শিশুসুলভ সারল্য ও পাকামির যথাযথ মিশ্রণ উপভোগ্য। জনি লিভারের প্রতিভার যথাযথ ব্যবহার হয়নি, তবুও চেনা ছকের বাইরে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসটি প্রশংসনীয়। ছবিতে ব্যবহৃত গান দু’টি গল্পের জন্য অনিবার্য মনে হয়নি। বরং নেপথ্য সঙ্গীত পরিমিত। অভীক মুখোপাধ্যায়ের সিনেমাটোগ্রাফি ও শেখর প্রজাপতির সম্পাদনা মন্থর লয় অবলম্বন করেই এগিয়েছে। ক্লাইম্যাক্সে বাস্তব অর্জুন সেনের আবির্ভাব ছবির আবেদনকে এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।