পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
ডেঙ্গু - ইদানীং ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। একটানা ৫ দিনের বেশি জ্বর, সারা গায়ে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, ঘন ঘন বমি, কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট— ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে ডেঙ্গুর সন্দেহ করা হয়। ডেঙ্গু হলে রোগীর প্লেটলেট অনেক কমে যায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানতে হয়। জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল খেতে হবে। পাশাপাশি বেশি মাত্রায় জল, ওআরএস খাওয়া উচিত।
ম্যালেরিয়া: কাঁপুনি দিয়ে একদিন পর পর জ্বর আসা ম্যালেরিয়ার অন্যতম লক্ষণ। প্রবল ঘাম হয়ে তারপর জ্বর ছাড়ে। মাথায়, গাঁটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। যথা সময়ে রক্ত পরীক্ষা করে ওষুধ শুরু করা ভীষণ জরুরি।
টাইফয়েড: একটানা দীর্ঘদিন জ্বর থাকে। দেহের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। পালস রেট অনেক কমে যায়। পেট ব্যথা, পেট খারাপ হয়। এই লক্ষণগুলি মূলত টাইফয়েডের ইঙ্গিত দেয়।
চিকনগুনিয়া: ডেঙ্গুর মতোই প্রবল জ্বর আর ব্যথা থাকে শরীরে। শরীর কুঁকড়ে যায় বলে এই ধরনের নাম। তবে রক্তের প্লেটলেট কমে যায় না। প্যারাসিটামল ও প্রচুর পরিমাণে জল খেলেই সেরে ওঠা যায়।
ভাইরাল ফিভার: কাশি, গলা খুশখুশ, দুর্বলতা, গা-হাত-পায়ে ব্যথা থাকে। শরীর ভীষণ দুর্বল লাগে। দেহের তাপমাত্রাও বেশি থাকে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে ওষুধ খেলে রোগী সেরে যান।
মিসলস: সাধারণত শিশু ও প্রবীণদের এই কারণে জ্বর বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে জ্বরের চার দিনের মাথায় শরীরে র্যাশ বেরয়।
লেপটোস্পাইরোসিস: এটি একটি ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে যদি চোখ ছল ছল করে, চোখ হলুদ দেখায় সেক্ষেত্রে এই রোগ সন্দেহ করেন চিকিৎসকরা।
ইউটিআই: মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে জ্বর হওয়াটা এ দেশে খুব লক্ষ করা যায়। যদিও পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অনেক বেশি ইউটিআইতে আক্রান্ত হন। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে, বারবার প্রস্রাব হলে, ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
স্ক্রাব টাইফাস: বর্ষার সময় এই রোগ ভীষণ হয়। মাইট জাতীয় পোকার কামড়েই স্ক্রাব টাইফাস হয়। বর্ষার শুরু থেকেই এই ধরনের পোকার উপদ্রব বাড়ে গ্রামাঞ্চলে। সমস্যা হল, এই রোগের লক্ষণ কিছুটা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বা টাইফয়েডের মতোই। আর এই কারণেই বিভ্রান্তি হয়। প্রচণ্ড জ্বর হয়। মাথা, সারা শরীরে এবং গাঁটে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায়। বাইরে থেকে পোকার কামড় সহজে বোঝা যায় না। তবে পোকা কামড়ানোর কিছুদিন পর থেকে কামড়ের জায়গাটি কালো হতে থাকে। আর পাশের কিছুটা জায়গা বাদামি রঙের হয়ে যায়।
কালাজ্বর: জ্বর হলে খাওয়ার ইচ্ছে চলে যায়। তবে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলে বিষয়টি উল্টো হয়। খিদে অনেকটা বেড়ে যায়। এটিই এই রোগের অন্যতম প্রধান উপসর্গ।
সোয়াইন ফ্লু বা অন্যান্য ফ্লু: ভাইরাল ফিভারের মতোই উপসর্গ হয়। জ্বর, হাঁচি-কাশি এবং শ্বাসকষ্ট—প্রধান লক্ষণ এই তিনটি।
করোনা: কয়েকদিন আগেই উদ্বেগ বাড়িয়েছিল করোনা। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই ভাইরাস আক্রমণ করে। উপসর্গ হিসেবে স্বাদ বা ঘ্রাণশক্তি হারানোর মতো বিষয়গুলো থাকে।
আরও কয়েকটি জ্বর: এগুলি ছাড়াও মশাবাহিত আরও কয়েকটি রোগ হয়। যেমন জাপানি জাপানিস এনকেফেলাইটিস, জিকা ভাইরাস। আবার রাইনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার অন্যান্য ভাইরাস থেকেও জ্বর হতে পারে। নিউমোনিয়া থেকেও জ্বর আসতে পারে। ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকেও কখনও কখনও জ্বর হতে পারে।
কী কারণে হচ্ছে এত জ্বর?
ঘরে ঘরে এখন এত জ্বর হওয়ার মূল কারণ ঋতু পরিবর্তন। মশার উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে। তার ফলে মশাবাহিত রোগগুলির পরিমাণ বাড়ছে।
কী কী রাখবেন হাতের কাছে?
থার্মোমিটার রাখুন। সঙ্গে প্যারাসিটামল, বমির ওষুধ রাখতে হবে। জ্বর হলেও খাওয়া দাওয়া বন্ধ করা চলবে না। সহজপাচ্য খাবার খান।
একটা কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন। যে কোনও রোগের ক্ষেত্রে অবহেলা না করে সবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নইলে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। আর মনে রাখবেন, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। এ জন্য রোগ হওয়ার আগে থেকে সচেতন হওয়া দরকার। সারা বছর ধরে যদি সুষম খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা করা যায়, সেক্ষেত্রে রোগ দ্রুত শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না।