পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যেই এই অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধারভার সমান হয় না। কেউ অল্পেই কাবু হন। কারও ক্ষেত্রে আবার রোগবালাইয়ের তেমন ঝঞ্ঝাট থাকে না। শিশু ও বয়স্কদের বেলায়ও এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল হয়। এছাড়া সুগার, হার্টের অসুখ, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগী, ক্যান্সার ও এইচআইভি আক্রান্ত সহ বিভিন্ন ক্রনিক অসুখের রোগীদেরও ইমিউনিটি কম থাকে। মানুষভেদে ইমিউনিটি কেন আলাদা আলাদা হয়, জানা যাক। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ইমিউনিটির সাতসতেরো।
অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি কী?
শরীরের কোষ, কলা ও প্রোটিনের সংযোগ মিলিয়ে অনাক্রম্যতা তৈরি হয়। বাইরের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও প্রোটোজোয়ার আক্রমণ ঠেকাতে এই সিস্টেম সদাজাগ্রত। পূর্বে শরীরকে কষ্ট দিয়েছে এমন ‘দুষ্টু’ আগন্তুককে সে চিনতে পারে ও তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে সক্ষম হয়। এটি শরীর থেকে সংক্রামিত এবং মৃত কোষ অপসারণেও সাহায্য করে।
ইমিউনিটির প্রকারভেদ
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ১. সহজাত বা অ্যাক্টিভ ২. প্যাসিভ বা অর্জিত ৩. হার্ড ইমিউনিটি।
সহজাত বা অ্যাক্টিভ ইমিউনিটি
প্রাণী যা সঙ্গে নিয়ে জন্মায়, তাই তার সহজাত পাওনা। জন্মের সময় আমরা রোগ প্রতিরোধক কিছু ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই। এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই সহজাত অনাক্রম্যতা। এর প্রাথমিক কাজ শরীরে কোনও রোগজীবাণু প্রবেশ করলে তাকে চিনতে সক্ষম হওয়া ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা। শরীরের ভিতরে যখনই কোনও রোগজীবাণুর প্রবেশ ঘটে, তখন নির্দিষ্ট প্যাথোজেন তৈরি করে বিষে বিষে বিষক্ষয় করতে উদ্যোগী হয় এই ধরনের ইমিউনিটি। শত্রুকে চেনা ও মনে রাখার কাজটি করে ইমিউনোলজিক্যাল মেমোরি। এই মেমোরি তৈরি হয় টি লিম্ফোসাইট (টি কোষ) এবং বি লিম্ফোসাইট (বি কোষ) নামে পরিচিত লিম্ফয়েড কোষ নিয়ে। কোনও প্যাথোজেন দ্বিতীয়বার শরীরে প্রবেশ করলে স্মৃতি থেকে তাকে চিনতে পারে লিম্ফয়েড কোষগুলি। তখনই তারা সক্রিয় হয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগে। শরীর অন্যান্য ইমিউনিটির চেয়ে এই সহজাত অনাক্রম্যতার উপরই বেশি নির্ভর করে।
অভিযোজিত বা প্যাসিভ ইমিউনিটি
শরীরের বাইরে থেকে প্রদান করা হয় প্যাসিভ ইমিউনিটি। খুব ঝুঁকিপূর্ণ, প্রাণঘাতী বা উচ্চ সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে টিকা বা প্রতিষেধকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এটি শরীরে রেডিমেড অ্যান্টিবডির জোগান দেয়। মাতৃদুগ্ধ থেকেও এই অনাক্রম্যতা অনেকাংশে মেলে। তবে এই সুরক্ষা দীর্ঘস্থায়ী নয়। আসলে রোগজীবাণু আক্রমণ করলে শরীরের প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কিছুটা সময় নেয়। সেই সময় যাতে অসুখটি শরীরে ভালোরকম থাবা বসিয়ে আয়ত্তের বাইরে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেই দিকে খেয়াল রাখে এই ধরনের ইমিউনিটি। রেডিমেড অ্যান্টিবডির জোগান দিয়ে প্যাথোজেনকে ‘দেন অ্যান্ড দেয়ার’ দুর্বল করে দেওয়াই এর কাজ।
একটি যুদ্ধ কল্পনা করুন। সামনে শত্রুকে পেয়েই তার পায়ে গুলি করে তাকে প্রায় আধমরা করা হল। এবার সেই আধমরা শত্রুকে বাগে আনে সহজাত অনাক্রম্যতা। তবে এই প্যাসিভ অনাক্রম্যতা মাত্র কয়েক সপ্তাহ বা মাস স্থায়ী হয়। কোনও ইমিউনোলজিক্যাল মেমোরি তৈরি করে না।
হার্ড ইমিউনিটি
যখন কোনও দেশের জনসংখ্যার ৭০-৮০ শতাংশ অংশ কোনও একটি নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত হয় বা টিকার মাধ্যমে শরীরে উক্ত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়, তখন বাকি ২০-৩০ শতাংশ সেই রোগ থেকে অনেকটা নিরাপদ হন। আক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে সংক্রামিত করতে পারে না। ফলে সংক্রমণের শিকলটি ভেঙে যায়। আমাদের দেশ-সহ গোটা পৃথিবীতেই পোলিও, ইয়েলো ফিভার, স্মল পক্স, হাম ইত্যাদি রোগের প্রকোপ কমেছে গোষ্ঠী অনাক্রম্যতার কারণে।
কারও ইমিউনিটি বেশি, কারও কম এমন হয় কেন?
তবে অন্য কোনও অসুখ না থাকা সত্ত্বেও কেন ভিন্ন ব্যক্তির ভিন্ন ধরনের ইমিউনিটি হয় তার সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধরে নেওয়া হয় কোষ স্তরে সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন আছে, যার জন্য মতিলাল সাঁতরা একবার ভিজেই জ্বর বাধিয়ে ফেলেন আর কমলকুমার বসু বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রোজ বাজার করেও দিব্য থাকেন।