কর্মরতদের উপার্জন বৃদ্ধি পাবে। শরীর-স্বাস্থ্য ভালোই যাবে। পেশাগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। শিল্পী কলাকুশলীদের ক্ষেত্রে শুভ। ... বিশদ
মহামারীর প্রথমদিকে, নোভেল করোনা ভাইরাসের তুলনায় বরং ভাইরাস সম্পর্কিত গুজব ছড়াচ্ছিল আরও দ্রুত হারে! এই তো কিছুদিন আগে ফ্রান্সের একটি গবেষণাপত্র নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল দিকে দিকে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদপত্রে খুব দ্রুত জায়গা করে নিয়েছিল একটি খবর। বিষয়বস্তু ছিল যে, ধূমপায়ী করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে নাকি কম!
করোনা ভাইরাসের ওষুধ এখনও অমিল, ফলে সাধারণ মানুষ খড়কুটোর মতো যা হোক কিছু একটা আশ্রয় করে বাঁচতে চাইছিল। হু হু করে ভাইরাল হয়েছিল সেই গবেষণার কথা! আর এখন জানা গিয়েছে, তামাক ব্যবসার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে ওই গবেষকদের। এমনকী গবেষণালব্ধ তথ্যও সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়!
পৃথিবীজুড়ে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীতে গবেষণা প্রমাণ করেছে যে ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক কম। ধূমপান অর্থাৎ বিড়ি, সিগারেট, হুঁকা (এমনকী ই-সিগারেটও) শ্বাসনালীর ক্ষতি করে, প্রদাহ তৈরি সৃষ্টি করে, ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা এবং মারণক্ষমতা দুইই বাড়ায়।
ধূমপানের মারণক্ষমতা শুধু ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিবছর তামাক সেবনের কারণে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখ, ক্যান্সারের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান।
এই মহামারীতে এখনও অবদি যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করোনা আক্রান্ত ধূমপায়ীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার যথেষ্ট বেশি। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনও তাঁদের বেশি হচ্ছে। প্রাণহানির হারও উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারীর প্রকোপ এড়াতে ব্যক্তিগতভাবে ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে।
সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ার কারণে ফুসফুস তো দুর্বল হয়ই। তবে যে পদ্ধতিতে ধূমপান করা হয়, অর্থাৎ ঘন ঘন হাতের আঙুলে বিড়ি-সিগারেট ধরে ঠৌঁটে স্পর্শ করার কারণেও ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও অনেক বাড়ে।
ধূমপানের ফলে শরীরে যে বিষাক্ত পদার্থগুলি প্রবেশ করে, তাতে ডিএনএ-এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়। যা ক্যান্সার হওয়ার পথ সুগম করে। এই ক্ষতি প্যাসিভ স্মোকার বা পরোক্ষ ধূমপায়ীদেরও প্রভূত ক্ষতি করে। শিশুদের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপান শ্বাসযন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। ধূমবিহীন তামাকও সমান ক্ষতিকর। আর হ্যাঁ, ধূমপানের কোনও নিরাপদ স্তর নেই। দিনে একটি ধূমপানও ভবিষ্যতে ক্যান্সার বা অকাল প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
ধূমপান ত্যাগ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ কমতে শুরু করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসজনিত উপসর্গ লোপ পায়। কয়েকমাসের মধ্যে ফুসফুস নিজের ক্ষমতা ফিরে পেতে শুরু করে। ক্যান্সারের আশঙ্কা ক্রমেই কমে।
গবেষণা জানাচ্ছে, শুধু পরিবেশ দূষণ ভারতবাসীদের আয়ু গড়ে পাঁচ বছর কমাচ্ছে এবং বছরে অতিরিক্ত দশ লক্ষ প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বায়ুদূষণের সঙ্গে করোনাজনিত মৃত্যুর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে। ইতালিতে সবচাইতে দূষিত এলাকায় মৃত্যুর হার ছিল তিনগুণ বেশি! হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘকালীন সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পি এম ২.৫) প্রভাবে করোনারোগীদের মৃত্যুহার বাড়ছে। ভাইরাসটির বায়ুমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়াও তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতার উপরে নির্ভরশীল। অর্থাৎ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো করোনার প্রকোপও ঋতু ও আবহাওয়া অনুযায়ী বদলায়। অতএব ভারতের ধূমপায়ীরা এখনই সাবধান হন।