কর্মরতদের উপার্জন বৃদ্ধি পাবে। শরীর-স্বাস্থ্য ভালোই যাবে। পেশাগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। শিল্পী কলাকুশলীদের ক্ষেত্রে শুভ। ... বিশদ
রাজবলহাটের বিখ্যাত তাঁতের শাড়ি শুধু রাজ্য নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয়। উত্তরপাড়া, ভড়পাড়া, দেপাড়া, শীলবাটি, তাঁতকলোনি, জাঙ্গিপাড়া, রসিদপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এই পেশায় যুক্ত। সমবায় সমিতি অথবা মহাজনের কাছ থেকে কাঁচামাল নিয়ে সামান্য মজুরির বিনিময়ে শিল্পীরা তাঁত বুনে দিন গুজরান করেন। এই বছর করোনার প্রকোপে বাজারে শাড়ির চাহিদা নেই। তাই আয়ের যেটুকু সম্বল ছিল, সেটাও হারিয়ে গিয়েছে।
তাঁদের কথায়, মহাজন সুতো, রেশম, জরি সহ অন্যান্য কাঁচামাল দিয়ে দেন। একটি নির্দিষ্ট নকশার ১৫ জোড়া শাড়ি তৈরি করে দিতে হয়। নকশা অনুযায়ী ৬-৯ হাজার টাকা মজুরি পাওয়া যায়। স্বামী, স্ত্রী সহ পরিবারের সকলকে কাজে হাত লাগাতে হয়। সময় লাগে প্রায় ২ মাসের বেশি। সামান্য কিছু অতিরিক্ত শাড়ি তৈরি করতে পারলে তা নিজেরা বিক্রি করতে পারেন। ফি বছর রথের পর থেকেই পুজোর শাড়ি বিক্রি শুরু হয়। এমন সময় স্নান-খাওয়ার সময় থাকে না। এ বছর বাজারে চাহিদা না থাকায় শিল্পীদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন মহাজনরা। তেমনই এক তাঁতশিল্পী কাশীনাথ শীল। তিনি আজ রান্নার কাজ করেন। প্রতাপ কাড়ি এখন রাজমিস্ত্রি। তাঁতশিল্পী মণীন্দ্র শীল বলেন, বাজারের চাহিদা না থাকায় মহাজনরা কাজ দিচ্ছেন না। কৃষকদের জন্য কৃষিঋণ, ফসলের দাম কম থাকলে সরাসরি সরকার থেকে ফসল কেনার ব্যবস্থা আছে। তাঁতিদের এই ধরনের কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই। এই অসময়ে সরকার সরাসরি তাঁতিদের থেকে শাড়ি কিনলে উপকার হতো। রেশনের চাল আর ১০০ দিনের কাজ করে বেঁচে আছি। ৪-৫ জনের সংসার চালানো, চিকিৎসা খরচ, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মহাজন শ্রীধর কুণ্ডু দুরবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, আমরা প্রত্যেকেই নিরুপায়। কয়েক মাস নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী মজুরির সামান্য অংশ দিয়ে ওদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এবার মনে হয় সব শেষ হয়ে গেল। শুধু তাঁতশিল্পী নয়, তাঁদের পরিবারের লোকজনকেও প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। এক গৃহবধূ বলেন, নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়েছে। তাই সামান্য পারিশ্রমিক, অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য হয়ত হারিয়ে যাবে হাতে বোনা তাঁতের শাড়ি। শিল্পীদের দুরবস্থায় জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, আমি ইতিমধ্যেই তন্তুজকে চিঠি দিয়েছি, জাঙ্গিপাড়া এলাকায় অস্থায়ী তাঁত হাটের মাধ্যমে সরাসরি শাড়ি কেনার জন্য। তন্তুজ এই আবেদনে সাড়া দিলে শিল্পীদের অন্তত সাময়িক সমাধান হবে।