হঠাৎ পাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমে কর্ম জটিলতার অবসান ও মানসিক চিন্তামুক্তি। আয় ব্যয়ের ক্ষেত্র ঠিক থাকবে ... বিশদ
ইন্টারনেটের এই যুগে তথ্য খোঁজা বা প্রাপ্তির বিষয়টি অনেক সহজ। তথ্যপ্রাপ্তির এই সুবিধাটি সহজ করে দিয়েছে উন্মুক্ত বিশ্বকোষ ‘উইকিপিডিয়া’। ২০০১ সালে জিমি ওয়েলস শুরু করেন এই উন্মুক্ত বিশ্বকোষ তৈরির কাজ। উইকিপিডিয়ার লেখক হয়েছেন তাঁরাই, যাঁরা তা হতে চান। মানে তোমাদের ইচ্ছে থাকলেই উইকিপিডিয়ায় তথ্য দিতে পার। শুধুই কি তথ্য? চাইলে ছবি, তথ্যসূত্রও যোগ করার সুযোগও রয়েছে। উইকি নামে একটি সফটওয়্যার, যা দিয়ে ওয়েবসাইটে লেখা সম্পাদনা করা যায়। ধীরে ধীরে যা বর্তমানে বিশাল এক জ্ঞানভাণ্ডার। বর্তমানে এই গ্রহের সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া, যা প্রতিমুহূর্তে বিকশিত হচ্ছে। উইকিপিডিয়া যেহেতু বিশ্বকোষ, তাই এখানে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। যেকোনও বিষয়ের উপর তথ্য খুঁজে দেখ, নিঃসন্দেহে তা পেয়ে যাবে।
প্রিয় বই কিংবা চলচ্চিত্রের যাবতীয় তথ্য থেকে শুরু করে ইতিহাস, বিজ্ঞান ইত্যাদির দাঁত ভেঙে দেওয়া কঠিন বিষয় সম্পর্কেও তথ্য আছে এখানে। তথ্যের মান কিংবা বিষয়বস্তুর গভীরতা দেখে মনে হতেই পারে, নিশ্চয়ই বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিই কেবলমাত্র এখানে লেখার সুযোগ পান! কিন্তু মজার ব্যাপার হল, একদম জন্মলগ্ন থেকে উইকিপিডিয়ার নিয়ম এত সহজ, যে কেউ এখানে অবদান রাখতে পারবে। সবার এমন ছোট ছোট অবদানের মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠেছে জ্ঞানের এই
সুবিশাল ভাণ্ডার!
যে কেউ অবদান রাখতে পারে শুনে হয়তো অনেকের খটকা লাগছে। যে কেউ উইকিপিডিয়ায় তথ্য যুক্ত করতে পারলে তো ভুলভাল তথ্যে ভরে যেতে পারে? তখন কী হবে? তার মানে, উইকিপিডিয়ার যেসব তথ্য এতদিন আমরা অকাট্য সত্য বলে মনে করেছি, তার অনেক কিছুই কি ভুল? ব্যাপারটা তেমন নয়। উইকিপিডিয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বখ্যাত জার্নাল নেচার-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়েছে, ইংরেজি ভাষার আর্টিকেলগুলি এতটাই নির্ভুল যে, শত বছরের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার প্রায় সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গড়ে ১.৭ মিনিটের মধ্যে উইকিপিডিয়ায় যোগ করা আপত্তিকর তথ্য মুছে যায়।
কেমন করে এটা সম্ভব হল? উইকিপিডিয়ায় যে কেউ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে অবদান রাখতে পারেন বটে, তবে কেউ চাইলেই ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য যুক্ত করে পার পাবেন না। উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে তথ্যের সঙ্গে দিতে হয় যথাযথ তথ্যসূত্র। সেই তথ্যসূত্র হতে পারে জাতীয় খবরের কাগজ, বই, বিজ্ঞান সাময়িকীর মতো বিশ্বস্ত এবং যাচাইযোগ্য মাধ্যম। উইকিপিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকেরা নিয়মিত বিভিন্ন নিবন্ধে চোখ রাখেন, যাচাই করে দেখেন নতুন যোগ করা তথ্য ঠিকঠাক আছে কি না। উইকিপিডিয়া যেহেতু একটি অনলাইন বিশ্বকোষ, তাই এখানে নিবন্ধ তৈরি করতে হলে সেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ, আমি চাইলেই নিজেকে নিয়ে, বাবা-মাকে নিয়ে বা আমার প্রিয় পোষা প্রাণী নিয়ে নিবন্ধ লিখতে পারব না। লিখলেও সেগুলি মুছে দেওয়া হবে। বরং লিখতে পারি ইতিহাস বা বিজ্ঞানের কোনও বিষয়, নামকরা চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজ, ক্রিকেট, ফুটবল দল, ক্লাব, দেশ ইত্যাদি নিয়ে। তথ্যটা কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যসূত্রটা যোগ করতে ভুললে চলবে না! প্রথম-প্রথম অনেকেই ভয় পান, যদি ভুল করে বসি তাহলে কী হবে! তাদের জন্য উইকিপিডিয়ার উদার আহ্বান, ‘সাহসী হোন!’ আপনি যদি পড়তে গিয়ে কোথাও কোনও ভুল দেখেন, তবে নির্দ্বিধায় তা সংশোধন করে ফেলুন, নতুন বলে ভয় পাওয়ার কোনও কারণই নেই।
প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস যখন উইকিপিডিয়া চালু করেন, তখন তাঁর মাথায় ছিল সহজ, কিন্তু বৈপ্লবিক একটি ভাবনা—‘ভাবুন তো এমন এক পৃথিবীর কথা, যেখানে সমস্ত জ্ঞানে সব মানুষের থাকবে অবাধ প্রবেশাধিকার।’ জ্ঞানের এই স্বর্গরাজ্যে থাকবে না কোনও বাধা— এমন স্বপ্নে বুক বেঁধেই শুরু হয় উইকিপিডিয়ার যাত্রা। হাওয়াই দ্বীপে বিমানবন্দর থেকে ‘উইকি উইকি’ নামে বাস সার্ভিস রয়েছে। হাওয়াইয়ান ভাষায় উইকি মানে হল ‘দ্রুত’। আর এই ‘উইকি উইকি’ থেকেই নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া নামটি। গোটা বিষয়টি পরিচালনা করে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন নামে একটি অলাভজনক সংস্থা। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার জন্য www.wikipedia.com ওয়েবসাইটটি চালু করা হয়। আর আজ বিশ্বের ২৯৯টি ভাষায় বর্তমানে উইকিপিডিয়া রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধ রয়েছে ইংরেজি উইকিপিডিয়ায়। সংখ্যা ৫৯ লক্ষ। তালিকায় তার পরেই রয়েছে কিউবুয়ানো ভাষা। নিবন্ধ ৫৩ লক্ষ। আর সুইডিশ ভাষায় রয়েছে ৩৭ লক্ষ নিবন্ধ! এই ২৯৯টি ভাষার মধ্যে আমাদের বাংলা ভাষাও আছে। ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয় বাংলা উইকিপিডিয়া। ২০২০ সালে ২৫ ডিসেম্বর বাংলা উইকিপিডিয়া পার করে এক লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক। উন্মুক্ত জ্ঞানের এই পৃথিবীতে বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বাংলা ভাষাভাষীদেরই। সবাই মিলে কাজ করার মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব আমাদের স্বপ্নের বিশ্বকোষ। যেখানে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে যে কেউ তার আগ্রহের বিষয়গুলি পড়তে পারবেন মাতৃভাষাতেই। উইকিপিডিয়ার লেখক-সম্পাদকদের মতো তুমিও হয়ে উঠতে পার একজন ‘উইকিপিডিয়ান’।